অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে দিল্লিতে ঘাঁটি তৈরি করছে রোহিঙ্গারা ! জলপাইগুড়ি, 16 ডিসেম্বর: অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে রোহিঙ্গারা কোথায় যাচ্ছে ? পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশের বেশ কিছু শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে ৷ সীমান্ত দিয়ে আগরতলা ও কোচবিহার জেলা দিয়ে ভারতে ঢুকেছে তাঁরা ৷ এর পর এনজেপি হয়ে সোজা দিল্লি চলে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা (Rohingyas are Infiltrating and Gathering in Delhi) ৷ আর সেখানেই আস্তানা তৈরি করছে ৷ মূলত দিল্লির সরিতা বিহার এলাকায় রোহিঙ্গাদের আস্তানা তৈরি হয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, জলপাইগুড়ি জেলায় কয়েক বছরে প্রায় 20 জন রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে ৷ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তাঁরা কাজের খোঁজে দিল্লির সরিতা বিহার এলাকায় যাচ্ছিলেন ৷ সেখানেই নাকি তাঁদের আরও আত্মীয় স্বজন থাকে ৷ দিল্লিতে কয়েকদিন থাকার পর তাঁরা চলে যাচ্ছেন কাশ্মীরে ৷ এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে ৷ চলতি সপ্তাহেই ভারতে প্রবেশের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে 2 জন রোহিঙ্গা ৷
এর 2019 সালের 27 জুলাই জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে আরপিএফ-এর হাতে গ্রেফতার হয় 4 রোহিঙ্গা ৷ ত্রিপুরায় আগরতলা থেকে দিল্লির যাচ্ছিল ওই চার জন ৷ নিউ জলপাইগুড়ির স্টেশনের বদলে জলপাইগুড়ি রোড ষ্টেশনে নেমে পড়ে তাঁরা ৷ তাঁদের কথায় সন্দেহ হওয়ায়, জিজ্ঞাসাবাদ করে আরপিএফ ৷ তখনই জানা যায়, তাঁরা রোহিঙ্গা ৷ মহম্মদ রফিক (20), আনোয়ারা বেগম (18), দিনদার বেগম (18) এবং ইয়াসমিন আরা । মহুম্মদ রফিকের কাছ থেকে ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার রিফিউজিস-এর জারি করা একটি শরণার্থীর শংসাপত্র পাওয়া যায় ৷ কিন্তু, অন্যান্যদের সেই শংসাপত্র ছিল না ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, মহম্মদ রফিককে জেরা করে জানা গিয়েছে আনোয়ারা বেগম তাঁর স্ত্রী ৷ বাকি দু’জন তাঁর বোন ৷ 2017 সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে কিটুপালং শরণার্থী শিবিরে থাকছিলেন তাঁরা ৷ আগরতলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে এনজেপি নেমে সেখান থেকে আনন্দ বিহার এক্সপ্রেসে দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল এদের ৷ তাঁরা শুধু নয় ৷ এভাবে এমন বহু রোহিঙ্গা এনিজেপি হয়েছ দিল্লি চলে যাচ্ছে ৷
আরও পড়ুন:স্বামীর খোঁজে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে গ্রেফতার রোহিঙ্গা মহিলা
মহম্মদ রফিককে সেই সময় জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, তাঁরা মায়ানমারের রেঙ্গুন জেলার শাবাজার এলাকার বাসিন্দা ৷ 2017 সালে মায়ানমার থেকে 10 লক্ষ রোহিঙ্গাকে তাড়ানো হয় ৷ সেই দলে মহম্মদ রফিকের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন ৷ রফিকের দাবি ছিল, বাংলাদেশে কাজের তেমন কোন সুযোগ ছিল না ৷ যে কারণে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে আসেন তাঁরা ৷ রফিকের থেকে পুলিশ জানতে পারে, দিল্লির আনন্দ বিহারের নুর স্টেশন নামে একটি জায়গাতে তাঁর দিদি রাইজুমার বেগম এবং জামাইবাবু থাকেন ৷ তাঁরা বেশ কয়েক বছর ধরে সেখানে রয়েছেন ৷
আরও পড়ুন:ইন্টেলিজেন্স ও জিআরপি’র অভিযানে এনজেপি থেকে গ্রেফতার 6 শিশু-সহ 13 রোহিঙ্গা
কিন্তু, প্রশ্ন উঠছিল কীভাবে সীমান্ত পার করছিল রোহিঙ্গারা ৷ রফিককে সেই সময় জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে কাটুপালং শরণার্থী শিবির থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় যায় ৷ সেখানে দাললদের সাহায্য নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায় ঢোকে অধিকাংশ রোহিঙ্গা ৷ এরপর আগরতলা থেকে এনজেপি হয়ে দিল্লি ৷ প্রসঙ্গ, চলতি বছরে এনজেপিতে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তাঁদেরও গন্তব্য ছিল দিল্লি ৷
উল্লেখ্য, গত বুধবার অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ময়নাগুড়িতে 2 রোঙ্গিয়া গ্রেফতার হয়েছে ৷ ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ এক যুবক ও যুবতীকে গ্রেফতার করেছে ৷ পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, ওই যুবতী স্বামীকে খুঁজতে এসেছেন ৷ কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে দাদাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন ওই যুবতী ৷ এমনটাই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ৷ কীভাবে তাঁরা ভারতে ঢুকলেন ? কারা তাঁদের সাহায্য করল ? তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷
পুলিশ ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে, রেজিনা খাতুন নামে ওই যুবতীর সঙ্গে শরণার্থী শিবিরেই এক যুবকের বিয়ে হয় ৷ কাজের খোঁজে ওই যুবক নাকি ভারতে এসেছিল এবং দিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৷ তাই স্বামীর খোঁজ করতে দাদা খাইরুল আমিনের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন রেজিনা ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, এভাবে বহু রোহিঙ্গা দালালের সাহায্যে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে ৷ তবে, শুধু দিল্লি নয় ৷ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করেছে ৷