পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

সংসারের 'অন্ধকার' ঘোচাতে এরাজ্যে 'আলো' বিক্রি করে রাজস্থানের রেখা, গুজরিরা - news about rajashthan

দীপাবলির আগে বিক্রিও হচ্ছে বাতি বেলুন ৷ নতুন ধরনের বেলুন হাতে পেয়ে খুশিতে চোখ ঝলমল করে উঠছে খুদেদের ৷ কিন্তু, যারা বেলুন বিক্রি করছে তাদের কী অবস্থা ?

জলপাইগুড়ি

By

Published : Oct 25, 2019, 12:58 PM IST

জলপাইগুড়ি, 25 অক্টোবর : সন্ধে নেমেছে ৷ আলো-আঁধারি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বেলুন বিক্রি করছে কয়েকজন পুরুষ ও মহিলা ৷ বলা ভালো বাতি বেলুন ৷ সেখান থেকে ঠিকরে আসা আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে ৷ অনেকেই বেলুন কিনছে ৷ পাশ কাটিয়ে চলেও যাচ্ছে কেউ কেউ ৷ কিন্তু, বিক্রির চেষ্টার খামতি নেই ৷ ভিন রাজ্য থেকে আসা পুরুষ-মহিলারা ঘুরে ঘুরে বেলুন বিক্রি করছে ৷ পোশাক দেখেই বোঝা যায়, বাড়ি তাদের এখানে নয় ৷ সেই রাজস্থানে ৷ সেখান থেকেই এখানে এসেছে ৷ বেলুন বিক্রি করতে ৷ দীপাবলির আগে বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালোই ৷ নতুন ধরনের বেলুন হাতে পেয়ে খুশিতে চোখ ঝলমল করে উঠছে খুদেদের ৷ তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠছে ৷ কিন্তু, যারা বেলুন বিক্রি করছে তাদের কী অবস্থা ? কথা বলে জানা গেল 'কঠোর বাস্তব' ৷

জোরকদমে চলছে বাতি বেলুনের বিকি-কিনি ৷
রাজস্থানের দৌসা জেলার বাসিন্দা রামেশ্বর বাগরি, বনসি বাওরিরা সপরিবারে এসেছে জলপাইগুড়ি ৷ সন্ধে নামলেই রামেশ্বর, বনসিদের সঙ্গে আসা গুজরি, রেখা, বিরমা, রিঙ্কু, জিতু, গোপালরা শুরু করে বেলুন বিক্রি৷ "দীপাবলির সময় ভিনরাজ্যে এসে বেলুন বিক্রি করতে কেমন লাগে?" প্রশ্নের উত্তর শুনে মুখ মলিন হয়ে যায় বেলুন বিক্রেতা মহিলার ৷ ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে সে বলে, "পেটের দায়ে এখানে বেলুন বিক্রি করতে আসি৷ দু' পয়সা রোজগার হলে ভালো লাগে ৷ মুখে হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরি ৷ উপায় থাকলে দীপাবলির সময় আসতাম না ৷ আমাদেরও বাড়িতে থেকে দীপাবলির আনন্দে সামিল হতে ইচ্ছে করে ৷ কিন্তু, পেট বড় বালাই ৷ বাড়িতে থাকা হয়ে ওঠে না ৷ এখানে লোকের হাতে বেলুন তুলে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটায় ৷ আমাদেরও আয় হয় ৷ দীপাবলির পর বাড়ি ফিরি ৷ ততদিনে উৎসব শেষ হয়ে যায় ৷ যা রোজগার করে নিয়ে যায় তাই দিয়েই সংসার চলে ৷ আমাদের আবার দীপাবলি ৷"
সুদূর রাজস্থান থেকে বাংলায় আসা পেটের টানে

মধ্যবয়স্ক আর এক বিক্রেতা জানাল, তারা দীপাবলির আনন্দে সামিল হওয়ার সুযোগ পায় না ৷ এই সময় বেলুন বিক্রির জন্য এখানে চলে আসতে হয় ৷ বউ, বাচ্চা সঙ্গে আসে ৷ কোনওরকমে মাথার ছাদ জুটিয়ে চলে বেলুন বিক্রি ৷ এখানেই কালীপুজো, দীপাবলির উৎসব দেখে ৷ তার কথায়, "দীপাবলির সময় বউ-বাচ্চাদের নিজের বাড়িতেই রাখতে চাই ৷ কিন্তু, হয়ে ওঠে না ৷ কারণ, ওরাও বেলুন বিক্রি করতে পারে ৷ তাতে দু'পয়সা বেশি রোজগার হয় ৷" "কেমন লাগে এভাবে বেলুন বিক্রি করতে ?" বলল, "এই উৎসবের সময় ভিনরাজ্যে এসে বেলুন বিক্রি করতে কার ভালো লাগে বলুন ?"

দেখুন ভিডিয়োয়

রবিবার কালীপুজো ৷ সেদিনই আলো জ্বলবে সবার বাড়িতে ৷ মোমবাতি, টুনি, প্রদীপে ঝলমল করবে বাড়ির উঠোন, রাস্তাঘাট ৷ তখনও জলপাইগুড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে বেলুন বিক্রি করবে রেখা, বিরমা, রিঙ্কুরা ৷ স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, প্রতিবারই রাজস্থান থেকে ওরা এখানে আসে ৷ বেলুন বিক্রি করে পরিবারের সবাই ৷ দীপাবলি শেষে চলে যায় এখান থেকে ৷ পরের বার ফের আসে ৷ "এবার তো রাজস্থানে নিজের বাড়িতে দীপাবলির সময় থাকতে পারলে না ৷ আগামী বছর কি করবেন ?" প্রশ্ন শুনে বেলুন বিক্রেতা যুবক বলল,"জানা নেই কী হবে ৷ হয়তো ফের এই সময় এখানেই আসতে হবে ৷ রোজগার তো করতেই হবে ৷ না হলে বাড়ির লোকজন খাবে কি ?" হ্যাঁ, হয়তো সত্যিই আগামীবছর ওদের ফের আসতে হবে এরাজ্যে ৷ ওদের হাতে বানানো বাতি বেলুনে আলোকিত হয়ে উঠবে এখানকার অনেকের বাড়ি ৷ কিন্তু, তখন অন্ধকারে শুয়ে থাকবে দৌসার বিরমা, রিঙ্কু, জিতু, গোপালদের উঠোন ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details