নয়া প্রযুক্তির বিষয়ে জানালেন রেলওয়ে ডিভিশনাল ম্যানেজার জলপাইগুড়ি, 11 অগস্ট: ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু ঠেকাতে আইডিএস (IDS-Intrusion Detection System) প্রযুক্তির জন্য 77 কোটি টাকা বরাদ্দ করল রেল । শুধু তাই নয়, ট্রেন চালকদের সচেতন করার পাশাপাশি চলবে কড়া নজরদারিও। রেললাইনে হাতি এলে তার তথ্য আদান প্রদান করা হবে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বনবিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে রেল।
প্রায়শই ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে । বনবিভাগ কিংবা রেল পরস্পর সহযোগিতা করলেও বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে বুনো হাতির । বিগত কয়েক বছর ধরে রেল তার গতি নিয়ন্ত্রণ করে 82টি হাতির প্রাণ বাঁচিয়েছে। এবার হাতিদের চলাচল সুরক্ষিত রাখতে আরও একধাপ এগোল রেলমন্ত্রক । জঙ্গলের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া রেলওয়ে ট্র্যাকের উপর দিয়ে হাতির চলাচলের প্রচুর করিডোর রয়েছে । সেই করিডোরগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে অর্থ বরাদ্দ করল রেল। জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত রেল পথে হাতি চলাচলের করিডোরে হাতির মৃত্যু ঠেকাতেই এই উদ্যোগ।
এভাবেই লাইন পেরোতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হাতির দল জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের বিশেষ করে আলিপুরদুয়ার, রঙ্গিয়া ও লামডিং ডিভিশনের ট্রেনের ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশন, রঙ্গিয়া ডিভিশন, লামডিং ডিভিশন, কাটিহার ডিভিশন ও আলিপুরদুয়ার-সহ মোট পাঁচটি ডিভিশন হাতির করিডোরের এই প্রযুক্তি লাগানোর জন্য 77 কোটি টাকা বরাদ্দ করল রেল । এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশনের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অমরজিৎ গৌতম বলেন, "হাতির মৃত্যু ঠেকাতে আমরা সব রকম কাজ করছি। গতবছর আমরা 62টি হাতি এবং চলতি বছর এখনও পর্যন্ত 21টি বুনো হাতিকে ট্রেনের ধাক্কা থেকে বাঁচিয়েছি । বৃহস্পতিবার যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক । আমরা হাতির করিডোরে প্রতি ঘণ্টায় 30 কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালাচ্ছি । রেললাইনে হাতি দেখলেই এমারজেন্সি ব্রেক কষে হাতিকে বাঁচানোর নির্দেশ দেওয়া আছে লোকো পাইলটদের। তাঁদের সচেতন করার পাশাপাশি বনবিভাগের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে রেললাইনে হাতি এলেই সেই তথ্য আদান প্রদান করা হচ্ছে ।"
অনেকসময় একাও লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় হাতির এদিন ডিআরএম (DRM) আরও জানান, তিনি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের হেড কোয়ার্টারে যাবেন। হাতির প্রাণহানি রুখতে কী কী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে। ট্রেন চালকদের আরও সচেতন করা হবে। মাঝে বেশ কিছুদিন সচেতন করা হয়নি । সেই কাজটা আবার শুরু করা হবে ৷ তবে লাইনে বাঁক থাকার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটছে ৷
আরও পড়ুন : ট্রেনের ধাক্কায় গর্ভবতী হাতির মৃত্যু, পেট থেকে ছিটকে গেল শাবক
রেলট্র্যাকের আশপাশে হাতির আনাগোনার আগাম হদিশ দেবে এই ইনট্রুসন ডিটেকশন সিস্টেম (আইডিএস)। এটি মূলত থার্মাল ডিভাইস । আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ইতিমধ্যেই বানারহাট ও ক্যারন স্টেশনের মাঝে রেড ব্যাংক চা বাগানের গা ঘেঁষে চলে যাওয়া রেলপথে এই ডিভাইস লাগানো হয়েছে । প্রথম দফায় বিন্নাগুড়ি স্টেশনকে কেন্দ্র করে আইডিএস চালু হবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বসনো হচ্ছে বলে রেল সূত্রের খবর ।
ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু এড়াতে নতুন প্রযুক্তি আনছে রেল জঙ্গল ও রেলপথের দু-ধার দিয়েই অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হয়েছে। তাতে থাকছে সেন্সরও । রেললাইনের দু-পাশের অন্তত 10 মিটারের মধ্যে হাতি থাকলে সেন্সরের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবারবাহিত বার্তা পৌঁছে যাবে স্থানীয় স্টেশনে। বার্তা পৌঁছবে রেলের কন্ট্রোল রুমেও । সেখান থেকে ট্রেন চালকদের ওয়াকিটকির মাধ্যমে হাতি কোথায় আছে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। তাতে করে চালক সতর্ক হবেন সেই মোতাবেক তাঁরা ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন । ইতিমধ্যেই রাজ্যের তরফে এই কাজ ঠিকমত হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য টিম ডাকা হচ্ছে ।