জলপাইগুড়ি, 14 জুন : লকডাউনের মাঝেই বেসরকারি বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার । বাস চালালে তেলের খরচই উঠবে । তাই এখনই বাস চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বাস মালিকরা । এদিকে বাস সচল না হওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছেন বেসরকারি পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা । বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বাস মালিকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিলে বাস চালানো কোনওভাবেই সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছে বাস মালিকদের যৌথমঞ্চ । শুধুমাত্র বাসই নয় কয়েকশো ম্যাজিক, সাফারি গাড়িতে করেও যাত্রী চলাচল করে জলপাইগুড়িতে । এছাড়াও জলপাইগুড়ি থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করে বেসরকারি অনেকগুলি বাস । সেই বাসগুলিও পথে নামাননি বাস মালিকরা ।
যাত্রী কমের আশঙ্কা, বাস চালাতে অনিচ্ছুক মালিকরা - news of jalpaiguri
বাস চালানোর অনুমতি মিলেছে সরকারের তরফে । কিন্তু বাস চালাচ্ছেন না বাস মালিকরা । যাত্রী তেমন হবে না বলে তাদের আশঙ্কা । ফলে এই অবস্থায় তেলের খরচই উঠবে না । জলপাইগুড়ি থেকে বিভিন্ন রুটের বেসরকারি বাস চলাচল তাই এখনও বন্ধ ।
এই বিষয়ে নিজের বক্তব্য রেখেছেন ডুয়ার্স, হলদিবাড়িসহ অন্যান্য বাস মালিকদের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক তথা নর্থ বেঙ্গল মোটর ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ । বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতে যে কোনও সময় বাস কর্মীরা কেরোনায় আক্রান্ত হতে পারেন । তাঁরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । তাছাড়া কোরোনা আতঙ্কে সাধারণ মানুষ খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না । ফলে এই মুহুর্তে বাস চালালে বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে । এতদিন লকডাউনে গাড়ি বন্ধ ছিল । এখন পর্যাপ্ত যাত্রী না পেলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে । এই ক্ষতি পুনরায় আবার হোক তা আর চান বাস মালিকরা ।" এই মুহূর্তে সরকারের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে উত্তরের বাস মালিকরা । নর্থবেঙ্গল মোটর ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এই বিষয় বিমল গুহ বলেন, "সরকার সাহায্য না করলে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোনও উপায় আমাদের জানা নেই । সরকার বলেছে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে চলা যাবে । কিন্তু গাড়ি চালালে যদি তেলের পয়সাই না ওঠে তাহলে আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো সম্ভব নয় । কোচবিহার, আলিপুদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলার মাথাভাঙাতে চলে 35টি বাস । হলদিবাড়িতে চলে 45টি বাস, মেখলিগঞ্জে 10টি, বেলাকোবাতে 16টি , মালবাজারে 20টি, আলিপুরদুয়ারে 15টি , কোচবিহারে 14টি , শিলিগুড়ির রুটে 22টি বাসসহ বিভিন্ন রুটে আরও অনেক বাস চলে । কয়েকটি বাস চললেও যাত্রী হচ্ছে মাত্র একজন থেকে দু'জন । একটি গাড়ি জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার গেলে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয় । কিন্তু যাত্রীই হচ্ছে না । ফলে আমাদের যদি তেলের খরচই না ওঠে তাহলে আমরা গাড়ি কী করে চালাব? তাছাড়া গাড়ির যারা কর্মচারী আছেন তাঁরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । সরকারি গাড়িতে প্রোটেকশন দেওয়া হচ্ছে । বেসরকারি বাসে তেমন কিছু সরকার দেবে না । তাই চালকরাও কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কে ভুগছেন ।"
জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, মালবাজার বীরপাড়া, বানার হাট, মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, ডুয়ার্সের বিভিন্ন রুটে 150টি বাস চলে । দৈনিক সাত থেকে আট হাজার মানুষকে পরিবহন পরিষেবা দেওয়া হয়ে থাকে । বিমল গুহ বলেন, "একটি বাস চালাতে গেলে তেলের খরচ ছাড়াও কর্মীদের বেতন, গাড়ির বিমা, বাসের রক্ষণাবেক্ষণের খরচসহ একটা বড় অঙ্কের টাকা প্রয়োজন । লকডাউনের ফলে আড়াই মাস ধরে আমাদের গাড়ি বসে আছে । এখন যদি যাত্রী না হয় তাহলে আমরা মাঠে মারা পড়ব । তবে আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আমরা বাস চালাতে পারব ।" এদিকে বাসের এক কর্মী জানান, "আমরা আড়াই মাস ধরে বসে আছি । আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই । আমরা কীভাবে গাড়ি চালাব ? আমাদেরও কোরোনা হতে পারে । মালিকরাও কবে গাড়ি চালাবেন সেটাও আমরা জানি না । আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ । যে যখন যা দিচ্ছে তাই দিয়েই চলছে । মালিকরা এই আড়াই মাসের একবার চাল দিয়েছিল । কিন্তু তা দিয়ে কিছুই হয় না ।" বাস চালালে যাত্রী হতে পারে বলেও আশাবাদী তাঁরা । এমন অবস্থায় কবে ফের কবে বাস চালাচল স্বাভাবিক হবে সেই দিকেই তাকিয়ে বাসের কর্মী ও মালিকরা ।