জলপাইগুড়ি, 28 নভেম্বর : শীতকাল এলেই আগমন ঘটে বিদেশি পাখিদের । আর পরিযায়ী পাখি এলেই বাড়তি রোজগারের মুখ দেখেন গাজোলডোবা ব্যারেজের মাঝিরা । একটা সময় যাঁরা পাখি মারতেন, তাঁরাই আজ পাখি বাঁচাচ্ছেন । নৌকা চালকরাই এখন নিজেদের তাগিদে কেউ যাতে পাখি না মারেন তার উদ্যোগ নেন । এমনকী শীতকালীন এই পরিযায়ী পাখিরাই জীবন জীবিকা বদলে দিয়েছে গাজোলডোবার মাঝি ও মৎস্যজীবীদের ।
জলপাইগুড়ি জেলার গাজোলডোবায় স্থানীয় কয়েকজন নৌকা নিয়ে পাখিপ্রেমীদের ছবি তুলতে সাহায্য করে থাকেন । তাঁদের থেকেই বিদেশি পাখিদের নাম শিখেছেন মাঝিরা । কবে, কোথায়, কোন পাখি আসে সবই জানা এই তাঁদের । শীত এলেই বিদেশি পাখিদের আগমন ঘটে তিস্তা নদীর গাজোলডোবা ব্যারেজে । আর ভিড় বাড়ে পাখিপ্রেমীদের ।
জানা যায় প্রতিবছর গাজোলডোবার তিস্তা ব্যারেজে বিদেশি পাখিদের সমাগম হয় । বিশেষত নভেম্বরের শেষের দিক থেকে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে । ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা তিন মাস পাখি থাকে গাজোলডোবায় । বিশেষত সাইবেরিয়া, ইউরোপ থেকে প্রচুর পাখি আসে । এর মধ্যে রেড ওয়াটেড ল্যাপউইং, রিভার ল্যাপউইং, নর্দার্ন ল্যাপউইং, রুবি শেলডাক, ক্রেস্টেড গ্রিব, ব্ল্যাক হেডেড গাল, মালার্ড, কমন শেলডাক, ফ্যালকেটেড ডাক, কমন টিল, রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড, কটন পিগমি গুস, বার হেডেড গুজ় - এই সকল পাখি এসে থাকে তিস্তা ব্যারেজের গাজোলডোবায় ।
গাজোলডোবার এক সময়ের মৎস্যজীবী রবি দাস বলেন, "একটা সময় আমরা তিস্তা নদীতে মাছ ধরতাম । তা করেই সংসার চালাতাম । এমনকী আগে যে সমস্ত পাখি আসত সেই পাখি মেরেও খেতাম । এখন আর পাখি মারি না । পাখি মারা তো দূর, কেউ পাখির ক্ষতি করার চেষ্টাও এখানে করে না । আমরা দীর্ঘদিন থেকেই গাজোলডোবায় আসা বিদেশি পাখিদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে পাখিপ্রেমী ও পরিবেশপ্রেমীদের পাখি দেখিয়ে থাকি । সারাদিন তাঁদের সঙ্গে থাকি । ভালোই রোজগার হয় । এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাখিপ্রেমীরা আসেন পাখির ছবি তুলতে, পাখি দেখতে । আমাদের নৌকা বুকিং করে তাঁরা আসেন । আগে তো অত পাখি চিনতাম না । পাখি প্রেমীরাই আমাকে পাখি চিনিয়েছে । আমি পাখিদের নাম জানতাম না । এখন সব জানি । এই পাখিরা এলেই আমাদের বাড়তি রোজগার হয় ।"
প্রাক্তন অনানারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন তথা জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডা. রাজা রাউত বলেন, "প্রতি বছর এই সময়ে প্রচুর পাখি আসেন । এই পাখির ছবি তুলতে এবং পাখি দেখতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে । যার ফলে গাজোলডোবায় যাঁরা নৌকা চালান তাঁরা পাখিপ্রেমীদের নৌকা করে পাখিদের আস্তানায় নিয়ে যান । কোথায় কোন পাখি থাকে তাঁরা সব জানেন । এই পাখিদের জন্য নৌকা চালকরা আর্থিকভাবেও সাবলম্বী হন ।"
পাখিপ্রেমী রাজা রাউত আরও বলেন, "একটা সময় এই মানুষগুলো তিস্তা নদীতে মাছ ধরতেন । এখন তাঁরা মাছ ধরেন না । তাঁরা এখন পাখিপ্রেমী ও পর্যটকদের পাখি দেখিয়েই ভালো রোজগার করেন ।"