জলপাইগুড়ি, 27 সেপ্টেম্বর : জলপাইগুড়ি শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করলা সেতু । সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সেতু খানিকটা বসে গিয়েছে । রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা । কিন্তু এই সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কি পৌরসভার, প্রশ্ন উঠছে সেখানেই । সেতুর বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্যরা । জানিয়েছেন, এই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কয়েকমাস আগেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল পূর্ত বিভাগ ।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে ডুয়ার্সগামী সড়ক পরিবহনের অন্যতম এই সেতু । শহর থেকে সমস্ত ধরনের যানবাহন এই সেতুর উপর দিয়েই যায় । করলা সেতু পেরিয়েই জলপাইগুড়ি স্টেশন রোডের কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে যেতে হয় । সদর হাসপাতালে যেতেও এই সেতুই ব্যবহার হয় । জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারের বিভাগ, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, DIG অফিস যেতেও সহায়ক করলা সেতু ।
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা শহরের দিনবাজারে একটি সেতু থাকলেও সেই সেতু পেরিয়ে ভারী যানবাহন বা যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করে না । কারণ সেই রাস্তা শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাজারের রাস্তা । ফলে তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন এই সেতুর উপরই চাপ সবচেয়ে বেশি । জলপাইগুড়ি করলা নদীর উপর সদর গার্লসের সামনের সেতুটি ভেঙে নতুন করে তৈরি হচ্ছে । ফলে তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন এই সেতুর উপর চাপ পড়ছে ।
1968 সালের 4 অক্টোবর ভয়াবহ বন্যার পর করলা নদীর উপর সেতু ভেঙে যায় । তৎকালীন সরকার 1970 সালে জলপাইগুড়ি শহরের তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন করলা সেতু তৈরি করে । অভিযোগ, প্রায় 50 বছর পরও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি । স্থানীয়রা চাইছেন, এই সেতু অবিলম্বে ঠিক করে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক ।
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে চাপানউতোর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন উদ্বিগ্ন পৌরসভা, পূর্ত বিভাগ ও পুলিশ আধিকারিকরা । কিন্তু সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । পূর্ত বিভাগের আধিকারিকরা পরিদর্শনের পর জানান, সেতুর সংস্কারের দায়িত্ব পূর্ত বিভাগের নয় । পৌরসভার আধিকারিকরাও বলছেন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাঁদের নয় । তবে এখন সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে ?
পৌরসভা জানিয়েছে, এত বড় সেতু তাদের পক্ষে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয় । কিন্তু পৌরসভা এলাকায় সেতু হওয়ায় পৌরসভাও কি দায় এড়াতে পারে ? আপাতত ভারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হচ্ছে বলে পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন ।
দীর্ঘ বছর রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সেতুর একাংশ বসে গিয়েছে । সেতুর বিভিন্ন অংশে চাঙড় ভেঙে পড়ছে । এই নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ররা । গত কয়েকদিনে জলপাইগুড়িতে অত্যাধিক বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে ওঠে করলা নদী । প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সেতু ঘুরে দেখেন পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের প্রতিনিধিরা ।
দিনবাজারের সেতু এবং তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন করলা সেতু পরিদর্শন করেন DSP হেডকোয়ার্টার প্রদীপ সরকার । ছিলেন পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায়, পৌরসভার ইঞ্জিনিয়র এবং পূর্ত বিভাগের আধিকারিকরা । তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন করলা সেতু পরিদর্শন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রশাসক বোর্ডের সদস্য সৈকত চট্টোপাধ্যায় । তিনি জানান, দিনবাজারের সেতুর তেমন সমস্যা নেই । তবে তিস্তা উদ্যান সংলগ্ন এই করলা সেতু বসে গিয়েছে । এ'ব্যাপারে পূর্ত বিভাগের ইঞ্জিনিয়রদের মতামত চাওয়া হচ্ছে । আপাতত সাধারণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি । ভারী যানবাহন চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভাবছে তারা । তবে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার তা খতিয়ে দেখতে হবে । এই সেতু নিয়ে আট নয় মাস আগেও পূর্ত বিভাগ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ।
সেতুর এই পরিস্থিতি, কী ভাবছেন স্থানীয়রা ? স্থানীয় বাসিন্দা অজয় সাহা বলেন, "আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে । মানুষ ভয়ে আছে । জলপাইগুড়ি পাহাড়পুর দিয়ে শহরের ঢোকার পর প্রথম এই সেতু । সদর গার্লসের সামনে সেতু বন্ধ হওয়ার ফলে এই সেতুর উপর চাপ আছে । হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় এটাই মূল সেতু । জলপাইগুড়ি শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই করলা সেতু । আমরা চাই প্রশাসন এই সেতুটির অবস্থা পরীক্ষা করে পদক্ষেপ করুক ।"