স্থানীয় বাসিন্দাদের তিস্তায় যেতে নিষেধ পুলিশের জলপাইগুড়ি, 9 অক্টোবর:জল নামতেই তিস্তা নদী যেন সেনাবাহিনীর অস্ত্র ভাণ্ডার হয়ে উঠেছে । প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে বিভিন্ন বিস্ফোরক । নদীতে বিস্ফোরণের ফলে জীবনহানির আশঙ্কা থাকায় তিস্তা নদীতে চাষাবাদ করতে বারণ করা হল স্থানীয় বাসিন্দাদের । নদীতে গেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ ।
আগামী এক সপ্তাহজুড়ে চলবে তিস্তা নদীতে সার্চিং অপারেশন । এখন পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তানদী থেকে উদ্ধার হয়েছে 41টি মৃতদেহ । যার মধ্যে 6 জন সেনাকর্মী ও 4 জন সাধারণ মানুষের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে । তাদের দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে তিস্তায় । সোমবার কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার ও সেনাবাহিনী নাথুয়ার চর এলাকায় সার্চিং অপারেশন চালান । তিস্তা নদীর বুক থেকে বিস্ফোরক উদ্ধারের জন্য সেনা জওয়ানরা ক্রমাগত তল্লাশি চালাচ্ছে । সিকিমের জলের তোড়ে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ভেসে গিয়েছে । তাতেই যুদ্ধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র-সহ বিস্ফোরক ও যন্ত্রপাতি তলিয়ে গিয়েছে । তারপর নদী শান্ত হতেই তল্লাশি শুরু করে সেনা ও পুলিশ ৷ ইতিমধ্যেই উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করছে পুলিশ । ক্রান্তির চাপাডাঙা এলাকার তিস্তা নদীতে ভেসে আসা সেনার সামগ্রী বাড়িতে আনতেই বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয় ৷ আহত হয়েছেন 5 জন ।
আরও পড়ুন : তিস্তায় ভেসে আসা সেনাবাহিনীর যন্ত্রাংশ খুলতে গিয়ে বিপত্তি; বিস্ফোরণে মৃত 1, আহত 5
এদিকে সিকিমের বিধ্বংসী বন্যায় পাহাড় থেকে তিস্তা নদীর সমতলে ভেসে আসা মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে শিয়ালের মুখোমুখি হচ্ছে উদ্ধারকারী দল । কখনও মুণ্ডুহীন অবস্থায়, তো কখনও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে । এমন এমন জায়গায় মৃতদেহ ভেসে উঠছে যে সেখানে শিয়াল ছাড়া কেউ থাকে না । কেউ যায়ও না । ফলে মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে তিস্তা নদীতে শিয়ালের আক্রমণের কবলে পড়ছে উদ্ধারকারী দল । ইতিমধ্যেই তিস্তার জল, কাদা ও কাশবনের মধ্যে দিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে নাজেহাল এনডিআরএফ ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা । তাও চলছে উদ্ধারকাজ । জলপাইগুড়ি জেলাপ্রশাসন থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী যে সব সেনাদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাঁরা হলেন -
বিমল ওড়াও, স্বরোজ কুমার দাস, ভবানী সিং চৌহান, এন গঙ্গা প্রসাদ, গোপাল মাডি ও কিমেন্তে ৷ অন্যদিকে কোচবিহার জেলায় তিস্তা নদীতে ভেসে ওঠা দুইজন জওয়ানের মৃতদেহ শনাক্ত করা হয় । তাঁরা হলেন সজ্জন সিং চৌহান ও শিবকেশ গুর্জার ।
সাধারণ নাগরিকের মৃতদেহ জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শনাক্ত হয়েছে 4 জনের মৃতদেহ । তাঁরা হলেন রাহুল মোদক (27) বেতগুড়ি, কোচবিহার; কল্পনা দেবী (25) রংপোর বাসিন্দা, সুভাষ শর্মা (44) কাশ্মীরের বাসিন্দা, অজিত মুন্ডা (29) কাঁঠালগুড়ির বাসিন্দা ৷ এদিকে গত 6 অক্টোবর সদর ব্লকের মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের গোমস্তপাড়া তিস্তার নদীর চর থেকে মহিলার মুণ্ডুহীন মৃতদেহ উদ্ধার হয় । তারপর দিন অর্থাৎ 7 অক্টোবর ক্রান্তি ব্লকের চ্যাংমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের গাছিমারি তিস্তার চর থেকে এক পুরুষের মৃতদেহ উদ্ধার হয় ।
এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমাশাসক সুদীপ পাল বলেন, "অক্লান্ত পরিশ্রম করে মৃতদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে । ময়নাগুড়ি, সদর ব্লক ও রাজগঞ্জ এলাকার তিস্তা নদীর বুক থেকে মৃতদেহ উদ্ধারে গিয়ে শিয়ালের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ।"
জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপত বলেন, "আমরা তিস্তা নদীর চর জুড়ে প্রচার চালাচ্ছি যাতে নদীতে কেউ না যায় । আমরা ও সেনা জওয়ানরা তল্লাশি চালিয়ে যাব । কেউ যাতে নদীতে চাষাবাদ বা অন্য কাজে না যায় তা প্রচার করা হয়েছে ।"
আরও পড়ুন : তিস্তায় ভেসে আসা মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে শিয়াল-কুকুর, বিস্ফোরক অভিযোগে চাঞ্চল্য