জলপাইগুড়ি, 3 জুলাই : উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত লোকগীতি ভাওয়াইয়া গান ৷ উত্তরবঙ্গের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে ভাওয়াইয়া গানের সুর ৷ দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভাওয়াইয়া শিল্পীদের আনাগোনা ৷ আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, মহেশচন্দ্র রায়, রথীন্দ্রনাথ রায়, নাদিরা বেগমদের হাত ধরে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পেয়েছে ভাওয়াইয়া গান ৷ কিন্তু সময় বদলেছে ৷ আর পাঁচটা শিল্পের মতোই ভাওয়াইয়া শিল্পীদেরও জীবনেও থাবা বসিয়েছে করোনা ৷
ভাওয়াইয়া কথাটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে । ভাব অর্থাৎ মনের অনুভূতি প্রকাশ করা ৷ অর্থাৎ, যে সমস্ত গানের মধ্য দিয়ে মনের অনুভূতি প্রকাশ করা হয় সেটাই হল ভাওয়াইয়া । গানের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলা হয় । হালফিলে যুগে লোকগান, পল্লীগীতি বাঁচিয়ে রাখাটাই দায় ৷ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বাদ্যযন্ত্র আজকাল আর মেলে না ৷ কষ্টেসৃষ্টে হলেও ভাওয়াইয়া গানকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন শিল্পীরা ৷ কিন্তু তাতেও বাদ সাধল করোনা ৷
উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা এমনিতেই আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় ৷ তার উপর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ মেলা, উৎসব ৷ প্রতিবছর উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া শিল্পীদের জন্য অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে । ভাওয়াইয়া উৎসব বা জল্পেশ মেলা এবং সরকারি অনুষ্ঠানগুলোতে শিল্পীদের অনুষ্ঠানের জন্য ডেকে আনা হয় ৷ এতে শিল্পীদের পকেটে কিছু হলেও টাকা ঢোকে । কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে সেসব বন্ধ । ফলে শিল্পীদের রোজগার বলতে শূন্য । এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে সংসার চালাবেন নাকি তার শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখবেন, সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ লোকশিল্পীদের ।
দেড়বছর ধরে দাপট চলছে করোনার ৷ অর্ধেক সময়ই লকডাউন, বিধিনিষেধ ৷ ফলে বিপাকে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের লোকশিল্পীরা । সারিঞ্জা ছেড়ে অনেক ভাওয়াইয়া শিল্পী এখন রুটিরুজির তাগিদে টোটো চালাচ্ছেন । কেউ মাঠের সবজি বাজারে নিয়ে গিয়ে বেচছেন ৷ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সরকারি নথিভুক্ত লোকশিল্পীদের মাসে এক হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয় ঠিকই । কিন্তু ওই কটা টাকায় সংসার চালানো কি আদৌ সম্ভব ? রাজ্য সরকারের কাছে প্রশ্ন শিল্পীদের ৷ ভাওয়াইয়ার সুরে দর্শকদের মোহিত করে রাখা শিল্পীরা বলছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের দিকে মুখ তুলে দেখুন ৷
আরও পড়ুন : বিদ্রুপ শুনেও নাচ ছাড়েননি, আজও ধ্রুপদীর পথেই সুবীর