পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

প্রিয়জনের সমাধি দেখতে বিদেশ থেকে আসেন বহু মানুষ, ইংরেজ আমলের চার্চ আজও হেরিটেজের অপেক্ষায়

St. Michales & All Angels Church: জলপাইগুড়িতে অবস্থিত ইংরেজ আমলের চার্চ হেরিটেজ তকমা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ৷ সংশ্লিষ্ট দফতরে বহুবার আবেদন করেও লাভ হয়নি ৷ বড়দিনে রইল 155 বছরের পুরনো সেই চার্চের কাহিনি ৷

Etv Bharat
সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেলস চার্চ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 25, 2023, 4:16 PM IST

জলপাইগুড়ির সবচেয়ে পুরনো চার্চ ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত

জলপাইগুড়ি, 25 ডিসেম্বর: 155 বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও হেরিটেজের স্বীকৃতি পায়নি জলপাইগুড়ির সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেলস চার্চ । জলপাইগুড়ির তদানীন্তন ইংরেজ চা বণিকদের চা বাগানের গোড়াপত্তন এই চার্চের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে । উত্তরবঙ্গের বিভাগীয় শহর এই জলপাইগুড়ির চা শিল্প স্থাপনে ইংরেজ টি প্ল্যান্টার্সরা চার্চের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন । বড়দিনে সেজে ওঠে এই চার্চ । প্রতিবছরই হেরিটেজ স্বীকৃতির আশায় থাকেন প্রোটেস্ট্যান্টদের সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেলস চার্চের সদস্যরা ।

জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের অফিসের সামনে রয়েছে এই চার্চ ৷ 1868 সালে ইউরোপিয়ান চা বণিকরা চার্চটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এটি চুন ও সুড়কি দিয়ে তৈরি । ভিতরের কাঠামো ইউ আকৃতির ৷ চার্চগুলি পুরানো শাল কাঠের তৈরি । বেলজিয়াম কাঁচের জানলায় আজও অক্ষত রয়েছে । সূর্যের আলো পড়তেই কাঁচের নকশা ফুটে ওঠে । চার্চের মাথায় ইংল্যান্ডে তৈরি 1868 সালের ঘণ্টাটিও আজও একই ভাবে বেজে চলেছে । আজও অবহেলায় চার্চের জমিতে বহু ইংরেজ চা বণিকদের সমাধি রয়েছে । শ্যাওলা জমা অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে সমাধি । যদিও কিছু সমাধির ফলক তুলে সংরক্ষণ করা হয়েছে চার্চের পক্ষ থেকে । 1877 সালের 5 ফেব্রুয়ারি টি প্ল্যান্টার্স ওয়াল্টার আলেকজান্ডার জন থমসনের স্ত্রী শার্লি থমসন মারা যান । তাঁর সমাধিও এখানে রয়েছে । রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে ইংরেজ চা কর এবং চার্চ প্রতিষ্ঠাতা একাধিক মহিলার স্মৃতিসৌধ ।

এই চার্চ প্রতিষ্ঠার পিছনে অনেক অবদান রেখে গিয়েছেন অপর এক টি প্ল্যান্টার্স তথা ক্যাপ্টেন জন গ্র‍্যান্টের 21 বছরের ছেলে জেমস ৷ কলেরায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল । তার সমাধিও রয়েছে এখানে । সেই সময় জলপাইগুড়ির কলেরার প্রকোপ ছিল তা প্রমাণিত হয় এই ফলক থেকেই । 1897 সালের 22 মার্চের মৃত্যুর এই তারিখের পাশে পাথরে খোদাই করা স্পষ্ট ইংরেজিতে আজকের Jalpaiguri বানানের আগে যে নামে ডাকা হত সেই Julpaigurie লেখা রয়েছে । এই চার্চ তৈরিতে ডুয়ার্সের সোনগাছি, বাগরাকোট, চিলৌনির বহু ম্যানেজারের স্মৃতিফলক গির্জার ভিতরে জ্বলজ্বল করছে ।

এই সম্পাদক ভোলা মণ্ডল আক্ষেপ করে বলেন, "এই চার্চে সব ধর্মের মানুষই আসেন ৷ 150 বছর অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়া এই চার্চের সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে । ব্রিটিশ আমলের বহু সমাধি মাটির নিচে চাপা পড়ে রয়েছে । এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করলে বহু ইতিহাস জানা যাবে । কিন্তু তাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই রক্ষণাবেক্ষণের । হেরিটেজ স্বীকৃতি পেলে রক্ষণাবেক্ষণ ভালো হত । প্রচুর মানুষ ইতিহাস জানতে পারত । এইভাবে আর কতদিন চালানো যাবে ।"

2012 সালে তারা রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে চার্চের হেরিটেজ স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হলেও কোনও লাভ হয়নি । রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের উত্তরবঙ্গ নোডাল কমিটির পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ি এই চার্চটিকে হেরিটেজ স্বীকৃতির তালিকা 2012 সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছিল । কিন্তু এখনও কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না চার্চ কমিটি ।

জলপাইগুড়ির ইতিহাস গবেষক উমেশ শর্মা বলেন, "জলপাইগুড়ির সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল অ্যাঞ্জেলস চার্চটির সঙ্গে জলপাইগুড়ির অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে । রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে । অবিলম্বে এর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ।এখানে অনেক সমাধির ফলক আছে । যা কিনা তৎকালীন ব্রিটিশদের পরিবারের সদস্যরা নাম-সহ সে সময় কখন কে কীভাবে মারা গিয়েছিলেন তার উল্লেখ আছে ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details