জলপাইগুড়ি, 7 মে : লকডাউনের জেরে বিপাকে টোটো চালকরা । সমস্যায় পড়েছেন জলপাইগুড়ি শহর ও শহর সংলগ্ন প্রায় 10 হাজার টোটো চালক । অধিকাংশ টোটোচালকই জলপাইগুড়ি শহরের উপর নির্ভরশীল । কিন্তু লকডাউনের ফলে শহরে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ । জলপাইগুড়ি শহরের 650 টি টোটোকে পৌরসভার TIN নম্বর দেওয়া হলেও বাকি টোটোগুলির TIN নম্বর এখনও মেলেনি ।
দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ টোটো চলাচল । একদিকে যেমন টোটোর ব্যাটারি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা, অন্যদিকে যাঁরা কিস্তিতে টোটো নিয়েছিলেন তাঁরা লকডাউনের ফলে তা দিতে পারছেন না । এদিকে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালানোও দায় হয়ে পড়েছে । জলপাইগুড়ি শহরের সুকান্ত নগর, পাহাড়পুর, খড়িয়া, অরবিন্দ নগর, বালাপাড়া, জমিদারপাড়া সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে টোটো চালকরা টোটো নিয়ে শহরে আসে । কিন্তু লকডাউনের ফলে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন ।
জলপাইগুড়ির সুকান্ত নগরের বাসিন্দা দীনেশ দাস । পেশায় টোটোচালক । জানান, "ব্যাঙ্কে টাকা আনতে যাচ্ছিলাম । আমাকে আটকে দিল পুলিশ । সুকান্ত নগর থেকে শহরে আসছিলাম । টাকা পয়সা সব শেষ । রেশনের চাল খেয়েই আছি । আর কতদিন চলবে ।"
লকডাউনে বিপাকে টোটোচালকরা অন্য এক টোটো চালক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, "লকডাউনে আমাদের খুব খারাপ অবস্থা । আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে মরতে হবে । টোটোর ব্যাটারি বসে আছে । ভেবেছিলাম চারটে ব্যাটারি একটু ট্রায়াল দিয়ে বাড়িতে টোটো ঢোকাব । সেই মত একজন রোগীকে নিয়ে এসেছিলাম । আমাদের পুলিশ আটকে দিল । "
লকডাউনে কেমন আছে টোটো ও অটোচালকরা ? একই ছবি মালদাতেও । সরকার কিংবা বিভিন্ন সংগঠন এই মুহূর্তে তাদের কাছে কিছু ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে ৷ কিন্তু সেটা কতদিন? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাদের মনে ৷ 25 মার্চ থেকে লকডাউনে বন্ধ যাত্রী পরিবহন ৷ সরকারি নির্দেশিকা উপেক্ষা করে কেউ কেউ অটো কিংবা টোটো রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করেছিল বটে, তবে পুলিশের রক্তচক্ষু আর লাঠি তাদের ফের ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করেছে ৷ রোজগারের অভাবে এখন অনেকের ঘরেই দু’বেলা হাঁড়ি চড়ছে না ৷ অনেকে আবার পরিস্থিতি মোকাবিলায় পেশাটাকেই পালটে ফেলেছে ৷
মালদা শহরের অলিগলিতে নিজের টোটোয় সবজির ডালা নিয়ে ঘুরছিলেন শহরের হায়দারপুর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা বকুল দাস ৷ তিনি বলেন, “সবজি বিক্রি করা আমার পেশা নয় ৷ আমি টোটো চালাতাম ৷ কিন্তু লকডাউন ঘোষণার পর থেকে আমরা দুই ভাই মিলে নিজেদের টোটোয় পাড়ায় পাড়ায় সবজি বিক্রি করছি ৷ সংসারটা তো চালাতে হবে ! রোজগার না থাকলে খাব কী? তাই এই সিদ্ধান্ত ৷ সবজি বিক্রির আয়েই এখন সংসার চলছে ৷ দিনে শ’পাঁচেক টাকা রোজগার হয়ে যায় ৷ আগে টোটো চালিয়ে সারা দিনে 600-700 টাকা উপার্জন হত ৷ এখন রোজগার কিছুটা কম হলেও খাবার তো জুটছে ! পেট চালানোর জন্য আমাদের পেশাটাই বদলে ফেলতে হয়েছে ৷ আগে বেঁচে থাকা, তারপর পুরোনো পেশাকে টেনে নিয়ে যাওয়া ৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আর পুরোনো পেশায় ফিরছি না৷”
দুর্ভোগে রয়েছেন দুর্গাপুরের অটোচালকরাও । দুর্গাপুরে পরিবেশবান্ধব CNG অটো পরিষেবা চালু হয় দীর্ঘ প্রায় এক দশকের বেশি সময় আগে থেকেই । আসতে আসতে অটো সংখ্যা বাড়তে থাকে বিভিন্ন রুটে । এখন প্রায় দু'হাজার অটো প্রতিদিন যাতায়াত করে । দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার, প্রান্তিকা ,বিধাননগর সহ কয়েকটি এলাকায় অটোস্ট্যান্ড রয়েছে । কিন্তু লকডাউনের জেরে সেই সমস্ত অটোস্ট্যান্ডগুলি একেবারে খাঁ খাঁ করছে । ফাঁকা অটো স্ট্যান্ড । কিন্তু কেমন আছেন এই অটো চালকরা ?
দুর্গাপুরের দুই অটোচালক শিবশংকর প্রসাদ ও আদারথ শ্রীবাস্তবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার কারণে তাঁদের মাথায় চেপেছে ঋণের বোঝা । ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভরতির জন্য ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা । তাও ভেঙে ফেলেছে । এখন ছেলে-মেয়েদের স্কুল খুললে তাঁদের ভরতি কীভাবে করবে ? কোথা থেকেই বা ঋণ নেওয়া টাকার কিস্তি শোধ করবে? সব মিলিয়ে চিন্তায় রাতের ঘুম নেই এই অসহায় অটোচালকদের ।