জলপাইগুড়ি, 22 সেপ্টেম্বর: রাজ্যে একশৃঙ্গ গণ্ডারের মৃত্যুর একটা বড় কারণ সঙ্গিনী দখলের লড়াই । সঙ্গিনীর দখল নিতে গিয়ে ক্রমে সংঘর্ষ বাড়ছে পুরুষ গণ্ডারদের মধ্যে । আর তাতেই বেঘোরে যাচ্ছে প্রাণ । পুরুষ ও স্ত্রী গণ্ডারের আনুপাতিক হারে অসামঞ্জস্যের কারণেই এই সমস্যা । বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এই সমস্যা এড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার ।
সঙ্গিনী দখলের লড়াইয়ে গরুমারা জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে পুরুষ গণ্ডারদের মারপিটের ঘটনায় চিন্তিত বন দফতর । লড়াইয়ের ফলে হেরে জঙ্গল ছেড়ে পালাতে গিয়ে চোরাশিকারির হাতে মৃত্যুও হচ্ছে গণ্ডারের । চোরাশিকারির আক্রমণে একাধিক গণ্ডারের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এলেও নিজেদের মধ্যে সংঘাত গণ্ডার মৃত্যুর একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।
নব্বইয়ের দশক থেকে রাজ্যের কেবলমাত্র গরুমারা জাতীয় উদ্যান ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে গড়ে ওঠে গণ্ডারের বাসভূমি । ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গণ্ডারের সংখ্যা । স্ত্রী গণ্ডারের তুলনায় পুরুষ গণ্ডারের সংখ্যা বেশি থাকায় সঙ্গিনী দখলের লড়াই নিত্যদিনের ঘটনা । যার ফলে বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে গণ্ডারদের । স্ত্রী ও পুরুষ গণ্ডারের জীবনশৈলী হিসেবে আনুপাতিক হার হওয়া উচিত একটি পুরুষ গণ্ডার পিছু তিনটি স্ত্রী গণ্ডার । অর্থাৎ সঙ্গমের জন্য একটি গণ্ডার পিছু তিনটি স্ত্রী গণ্ডারের প্রয়োজন । কিন্তু এখন সেই আনুপাতিক হার রয়েছে 1:1 । বিশেষজ্ঞদের ধারণা, একই জিনভুক্ত গণ্ডারের মধ্যে প্রজননের ফলে ভবিষ্যতে জটিল রোগের সম্ভবনা থেকে যাচ্ছে ।
পুরুষ গণ্ডারের অনুপাত বেশি থাকায় নিজেদের মধ্যে লড়াই লেগেই রয়েছে । গরুমারা জাতীয় উদ্যানের 89 বর্গ কিলোমিটার ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে 216 বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চলে 2022 সালে গণ্ডারের সংখ্যা যথাক্রমে 55 ও 292টি । 2019 সালে গরুমারাতে গণ্ডারের সংখ্যা ছিল 52টি । যার মধ্যে 25টি পুরুষ ও 17টি স্ত্রী ৷ এবং 10টি গণ্ডারের লিঙ্গ নিধারণ করা সম্ভব হয়নি । 2022 সালে গরুমারায় গণ্ডার বেড়ে দাঁড়ায় 55টি । তার মধ্যে 24টি স্ত্রী ও 21টি পুরুষ ৷ আর 10টির লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি ।
আরও পড়ুন:গণ্ডারের তাড়া খেয়ে জলদাপাড়ায় উলটে গেল পর্যটকদের গাড়ি, গুরুতর জখম 5
অন্যদিকে, 2019 সালে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে গণ্ডারের সংখ্যা ছিল 237টি । যার মধ্যে 98টি পুরুষ, 94টি স্ত্রী ৷ 45টির লিঙ্গ নির্ধারণ হয়নি ।1998 সালে গরুমারা জাতীয় উদ্যানে গণ্ডার ছিল 18টি ৷ 2022 সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় 55টিতে । অন্যদিকে, 1985 সালে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে গণ্ডার ছিল 14টি, সেখানে এখন হয়েছে 292টি । স্ত্রী ও পুরুষ গণ্ডারের আনুপাতিক হার ঠিক থাকলে গণ্ডারের সংখ্যাও বাড়ত বলে মনে করছেন গণ্ডার বিশেষজ্ঞরা ।
বর্তমানে গরুমারা ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের গণ্ডারদের মধ্যে আদানপ্রদানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে । তাতে একদিকে যেমন প্রজননগত ভাবে জিন পরিবর্তন হবে, অন্যদিকে লিঙ্গজনিত ভারসাম্য রক্ষা পাবে । ফলে সঙ্গিনী দখলের ফলে গণ্ডারের মৃত্যু অনেকটাই রোখা যাবে । প্রজননের ফলে গণ্ডারের সংখ্যাও বাড়বে ।
স্পোর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখপাত্র শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে জানান, "আমাদের রাজ্যে গণ্ডারদের জীবনশৈলী হিসেবে সঙ্গমের জন্য এক পুরুষ গণ্ডার পিছু তিনটি স্ত্রী গণ্ডার প্রয়োজন । কিন্তু সেটা এখানে নেই । ফলে বংশবৃদ্ধি সেই ভাবে হচ্ছে না । এবং সঙ্গিনী দখলের জন্য দুই পুরুষ গণ্ডারের সংঘর্ষে একটি পুরুষ গণ্ডার মারা পড়ছে । আমরা মনে করি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এই বিষয়টি সরকারের ভাবা উচিত ।"