জলপাইগুড়ি, 21 জুন :সহায় সম্বলহীন হয়ে পঙ্গু মেয়ে ও তাঁর দুধের শিশুকে নিয়ে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছেন অসহায় বৃদ্ধা । অভাবের তাড়নায় এক নাবালক নাতি পেটের তাগিদে রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষে করছে । আর পঙ্গু মেয়ে ফুটপাতে ভিক্ষে করছে । ইটিভি ভারতের কাছে এক পরিবারের এহেন অসহায়তার খবর পেয়ে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে এলেন রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী । তাঁর সঙ্গে ছিলেন যশোবন্তী শ্রমানী ও সুদেষ্ণা রায় ৷ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বাচ্চা দু'টির থাকা-খাওয়া ও সবার থাকার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিলেন । লকডাউনের মাঝে এই পরিবারের অসহায়তার খবর প্রকাশিত হয় ইটিভি ভারতে ।
লকডাউন থেকেই জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের শেডের নিচে বসবাস শুরু করেন বর্মন পরিবার । তারপর বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করলেও জেলা প্রশাসনের কোনওরকম হুঁশ ফেরেনি । পরিবারের বাচ্চা ছেলেটি রুটিরুজির তাগিদে ফেলে দেওয়া কাগজ, বোতল কুড়োতে শুরু করে ৷ এমনকি মাঝে মধ্যে ভিক্ষেও করে ৷
আরও পড়ুন :Asha Worker Incident : ধূপগুড়িতে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় আশাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ
একটা সময় তাঁদের বাড়ি ঘর সবই ছিল বলে জানা গিয়েছে ৷ কিন্তু বাবা মারা যাবার পর থেকে নিঃস্ব হয়ে যায় । মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের পক্ষ থেকে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয় । সেখানে এই শিশুটির অভাবের তাড়নায় ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়টি চেয়ারপার্সন অন্যন্যা চক্রবর্তীর সামনে তুলে ধরা হয় । তারপরই আলোচনা শেষে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে করে হাসপাতালে থাকা অসহায় বৃদ্ধা জ্যোৎস্না দেবীর কাছে যান ৷ তাঁর মুখে সমস্যার কথা শুনে চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী তাঁদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটকে ।
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পড়ে থাকা সহায়সম্বলহীন পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের শিশু সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন এই বিষয়ে রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অন্যন্যা চক্রবর্তী বলেন, "আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে এই শিশুটির পরিবারের অবস্থার কথা জানতে পারি । জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয় । একটি বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো হবে । আর একজনকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠানো হবে ।"বৃদ্ধা জ্যোৎস্না অধিকারীর কথায়, মেয়ে মীনা বর্মনের সঙ্গে দশ বছর আগে বিয়ে হয় ফালাকাটা মেঝবিলের বাসিন্দা রঞ্জিত বর্মনের ।বিয়ের পর সব ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু জামাই জণ্ডিসে আক্রান্ত হয়ে যাবার পর তিস্তার চিরের ভিটেমাটি বিক্রি করে দিয়ে চলে যায় শিলিগুড়িতে । শিলিগুড়ির ভক্তিনগরে ভাড়াবাড়িতেই মেয়ে জামাইকে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন । একবছর আগে হঠাৎ করে জ্যোৎস্না দেবীর মেয়ে মীনার স্ট্রোক হয় । এরপরই সে পঙ্গু হয়ে যায় । মেয়ের একমাসের সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন জ্যোৎস্না দেবী । এরপর মেয়ের চিকিৎসা চলার মাঝে হঠাৎ জামাইয়ের মৃত্যু হয় । এরপরেই টাকার অভাবে ভাড়াবাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর মেয়ে, সদ্যোজাত নাতনিকে নিয়ে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে এসে আশ্রয় নেন ।
আরও পড়ুন :HS exam result 2022 : ফেল করে রাস্তা অবরোধ করতে লজ্জা করে না, প্রশ্নের মুখে জলপাইগুড়ির ছাত্রীরা