জলপাইগুড়ি, 3 অক্টোবর : ফের বিতর্কে উত্তরবঙ্গ জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি চিকিৎসক সুশান্ত রায় ৷ প্রভাব খাটিয়ে পুত্রবধূকে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে সকাল 10টা থেকে 5টার শিফটে নার্সিং ডিউটিতে পোস্টিং করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় জলপাইগুড়ির নার্সিং বিভাগের সুপারকে বদলি করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ৷ এমনকি ছেলে সৌত্রিক রায়কে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে নিয়োগ করানোর চেষ্টা করছেন সুশান্ত রায় ৷ আর তার জন্য ওই পদে অন্য কোনও নিয়োগ করতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ৷
হাসপাতাল সূত্রে খবর, 3 বছরের জন্য সৌত্রিক রায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এমডি’র পড়াশোনার করতে গিয়েছেন ৷ অভিযোগ, সুশান্ত রায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে নিয়োগ আটকে রেখেছেন ৷ যাতে তাঁর ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ফিরে ওই পদে যোগ দিতে পারেন ৷ এমনকি ওই হাসপাতালের নার্স এবং ছেলের স্ত্রীকেও শুধুমাত্র থ্যালাসেমিয়া বিভাগে সকাল 10টা থেকে 5টার শিফটে নিয়োগ করিয়েছেন ৷ গোটা ঘটনায় জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ৷
শুধু তাই নয়, জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদরে জন্য বরাদ্দ কোয়ার্টারেও নিজের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ রয়েছে সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ৷ এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ কোয়ার্টারে ছেলের স্ত্রীর থাকার ব্যবস্থাও করিয়েছেন তিনি ৷ আর তার জন্য বহু বছর ধরে বসবাস করা হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী অনন্ত বর্মনকে মাত্র 3 দিনের নোটিসে ওই কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে হয় ৷ হাসপাতালের সুপারকে দিয়ে এর জন্য ওই অস্থায়ী কর্মীকে নোটিস পাঠানো হয় ৷
ফের বিতর্কে ওএসডি, ছেলে ও পুত্রবধূকে অবৈধভাবে হাসপাতালে নিয়োগের অভিযোগ আরও পড়ুন : Jalpaiguri : ওএসডি সুশান্ত রায় ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি চিকিৎসক সংগঠনের
হাসপাতালের অস্থায়ী ওই কর্মী অনন্ত বর্মন জানিয়েছেন, জগন্নাথ সরকার জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক থাকাকালীন বেতন বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন তিনি ৷ কারণ, মাসিক 5 হাজার টাকায় সংসার চালাতে পারছিলেন না তিনি ৷ সেই সময় অনন্তবাবুর যাতে বাড়ি ভাড়ার টাকা বেঁচে যায়, সেই ভেবে পরিত্যক্ত ওই কোয়ার্টারে তাঁকে থাকতে দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, 2018 সালে পুত্রবধূকে ওই কোয়ার্টারে রাখার জন্য সুশান্ত রায় হাসপাতাল সুপারকে দিয়ে তাঁকে সেখান থেকে উঠে যেতে বলেন ৷
আরও পড়ুন : North Bengal OSD: উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসকদের উপর জুলুমের অভিযোগ
এ নিয়ে জলপাইগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আধিকারিক অঙ্কুর দাস অভিযোগ করেন, প্রভাব খাটিয়ে সুশান্ত রায় তাঁর পুত্রবধূকে থ্যালাসেমিয়া বিভাগে পোস্টিং করিয়েছেন ৷ তৎকালীন নার্সিং সুপার প্রতিবাদ করাতে তাঁকেও বদলি করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ৷ এমনকি উনি অন্য কোনও বিভাগে ডিউটি করেন না ৷ কিন্তু, একজন জেনারেল নার্স কখনই একটি নির্দিষ্ট বিভাগে ডিউটি করতে পারেন না ৷ এটা হাসপাতালের নিয়মের বাইরে ৷ কিন্তু, সেখানে সুশান্ত রায় তাঁর প্রভাব খাটিয়ে সেটা করেছেন ৷
প্রসঙ্গত, এর আগে উত্তরবঙ্গের ওএসডি সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাসপাতালের চিকিৎসকদের উপরেও নিজের প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছিল ৷ অভিযোগ ছিল, সুশান্ত রায়ের কাজকর্মের প্রতিবাদ করলে চিকিৎসকদের নয় বদলি করে দেওয়া হয়েছে ৷ আর তা না হলে বহু চিকিৎসক স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল থেকে ৷ এমনই একাধিক অভিযোগ সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে উঠেছে ৷ অন্যদিকে থ্যালাসেমিয়া বিভাগে সুশান্ত রায়ের পুত্রবধূর পোস্টিং নিয়ে সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপার কাকলি সিনহাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান ৷ আর ওএসডি সুশান্ত রায়কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি ক্যামেরার সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷