হাওড়া, 28 জুন: তিন মাস ধরে বন্ধ এশিয়ার সর্ববৃহৎ জামাকাপড়ের হাট, মঙ্গলাহাট ৷ প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হতো এই মঙ্গলাহাটে ৷ কিন্তু হাট বন্ধ থাকায় চৈত্র সেল ও ঈদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের ৷ মেটিয়াবুরুজ, অঙ্কুরহাটি সহ একাধিক হাট খুলে গেলেও এখনও মঙ্গলাহাটে খোলা নিয়ে কোনও নির্দেশিকা আসেনি ৷ তাই পুজোর বাজারও মার খাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা ৷
কোরোনা ভাইরাসের প্রকোপ এবং তার জেরে জারি হওয়া দীর্ঘ লকডাউন ছোট থেকে মাঝারি একাধিক শিল্পকে যেমন ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়েছে তেমনি বিপুল অঙ্কের ক্ষতির সামনে বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা । ছোট থেকে মাঝারি ব্যবসা এমনকী বড় ব্যবসা পর্যন্ত লোকসানে ডুবে । দেশব্যাপী যেমন কোরোনার প্রকোপ বৃদ্ধি যেমন চিন্তার কারণ তেমন বেকারত্ব বৃদ্ধি যে প্রশাসনকে অস্বস্তিতে ফেলবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায় । লকডাউন আর কোরোনার যাঁতাকলে কর্মহীন হয়েছে বহু মানুষ । চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এর প্রভাব কতখানি? এশিয়ার সর্ববৃহৎ জামা কাপড়ের হাট অবস্থিত হাওড়ার ময়দান এলাকার আশেপাশে । যে হাটের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি মানুষ । দীর্ঘ লকডাউনে এখনও পর্যন্ত বন্ধ এই মঙ্গলাহাট । এতে কতটা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরা তা খতিয়ে দেখল ETV ভারত ।
তিন মাস ধরে বন্ধ মঙ্গলাহাট সবচেয়ে কম দামে ভালো জামাকাপড় প্রস্তুত করার কারণে মঙ্গলাহাটের জনপ্রিয়তা শীর্ষে । গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, ঝাড়খন্ড, অসম সহ দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই এখানকার জামাকাপড় রপ্তানি হয় ৷ এমনকী বাংলাদেশেও হাওড়ার এই হাট থেকে জামাকাপড় যায় । কলকাতার খান্না, মেটিয়াবুরুজ সহ রাজ্যের বহু হাট চলে মঙ্গলাহাটের থেকে মাল কিনে । হাওড়া ময়দান চত্বর থেকে বার্ন স্যান্ডার্ড মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত এই মঙ্গলাহাট চত্বরে রয়েছে মোট 13টি হাট । যার মধ্যে কোনওটিতে শতাধিক আবার কোনও হাটে হাজারখানেক স্টল রয়েছে । যেগুলিকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় 25-30 লাখ মানুষ । প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাটের উপর জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি মানুষ । কিন্তু দীর্ঘ 3 মাস যাবৎ হাট বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ী থেকে কারিগর । চৈত্র সেল ও ইদে প্রচুর টাকার লোকসান হয়েছে । আসন্ন দুর্গাপুজোর আগে কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এই হাট তাও যথেষ্ট প্রশ্নসাপেক্ষ । ফলে এক প্রকার আশঙ্কায় দিন কাটছে ব্যবসায়ী থেকে হাট মালিকদের ।
মঙ্গলাহাটের সবচেয়ে পুরনো হাট বসুন্ধরা টাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড ওরফে পোড়া হাট । কমবেশি চার হাজার ছোট-বড় স্টল রয়েছে এই টাওয়ারে । কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন হাট মালিক শান্তিরঞ্জন দে । তাঁর কথায়, "একেকটি হাট প্রত্যেক সপ্তাহে কমবেশি 300 কোটি টাকার ব্যবসা করে । এর মধ্যে চৈত্র সেলের চার সপ্তাহে বসুন্ধরা টাওয়ারে মোট 1600 কোটি টাকার ব্যবসা হয় । ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা হয় দুই হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি । লকডাউনে জন্য এক টাকাও বিক্রিবাটা করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা । পুজোর সময় বসুন্ধরা টাওয়ারের 4000 দোকান মিলিয়ে মোট 4 হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় । কিন্তু এবারের পুজো নিয়েও যথেষ্ট আশঙ্কায় রয়েছেন তারা । অন্যদিকে গোমতী হাটের মালিক মুন্না বাগরী বলেন, "আমার হাটে প্রায় 200 কাছাকাছি দোকান রয়েছে । একেকটি স্টল থেকে বিক্রি বাটা হয় প্রায় 30-40 লাখ টাকার । দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় মার খাচ্ছে ব্যবসা । এভাবে চলতে থাকলে হয়তো বিকল্প উপার্জনের পথ দেখতে হবে স্টল মালিকদের ।" এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে দরবার করলেও ফল হয়নি কিছুই । ফলে একাধিক আশঙ্কা ও চিন্তা নিয়েই হাল ফেরার আশায় রয়েছেন হাট মালিক থেকে স্টল মালিকরা ।
এখনও বন্ধ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মঙ্গলাহাট, পুজোতেও ক্ষতির আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের মেটিয়াব্রুজ, অঙ্কুরহাটি সহ একাধিক হাট খুললেও খুলছে না মঙ্গলাহাট? এই হাটের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলির কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী খোলা যায় না মঙ্গলাহাট? এবিষয়ে হাওড়ার জেলাশাসক ETV ভারতকে জানান, "এই ধরনের বাজার খোলার আগে ওই এলাকার হেলথ রিপোর্টে কী রয়েছে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এছাড়াও মঙ্গলাহাট চত্বরে রয়েছে হাওড়া হাসপাতাল । তাই হাট কবে খোলা হবে তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনিক স্তরে অন্তত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি ।"