হাওড়া, 21 মার্চ: গত পাঁচমাস ধরে বৃষ্টির দেখা ছিল না তবুও এক বছর ধরে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে স্কুল চত্বর ৷ চারিদিকে প্রায় গোড়ালি সমান জল । স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ এক বছর ধরে জমা জলে কী পরিমাণ দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির উপদ্রব তা আর বলে বোঝাতে হবে না ৷ কিন্তু এই চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতেই প্রায় সাড়ে 700 জন খুদে পড়ুয়াকে নিয়ে স্কুল চালাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা । এমনই অবস্থা হাওড়ার বাঁকড়া ইসলামিয়া অ্যাটাচ প্রাথমিক স্কুলে (Howrah Bankra Islamia High Attach Primary School)৷
এই পরিবেশেই চলছে মিড-ডে মিল রান্না ও তা পরিবেশন ৷ বাচ্চারা তা খাচ্ছেও এই নোংরা পরিবেশে ৷ এমন অবস্থা বাথরুমেও যেতে পারছেন না ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা । এছাড়া নোংরা জমা জল মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে । কিন্তু বহুবার বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি ৷
তাই এই অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশেই ক্লাস চালাতে বাধ্য হচ্ছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা । দীর্ঘদিন এক বছর ধরে স্কুলের নোংরা পরিবেশ দেখে অনেক অভিভাবক বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন । স্কুলটিতে দু'টি বিভাগ রয়েছে ৷ সকালের বিভাগে 300 এবং দুপুরের বিভাগে সাড়ে 400 ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে । এই এলাকার পুরনো স্কুল হওয়ায় অভিভাবকদের প্রথম পছন্দের তালিকাতেই রয়েছে । কিন্তু বিগত এক বছর ধরে স্কুলের একতলার শ্রেণিকক্ষ ও বাইরের বারান্দায় গোড়ালি সমান জল থৈ থৈ করায় ছেলেমেয়েদর স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেক অভিভাবকই স্কুলে আসতে দিচ্ছেন না পড়ুয়াদের (Water Logging Problem in Howrah School)।
দীর্ঘদিন জমে থাকার কারণে নোংরা জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । খুদে পড়ুয়ারা ওই নোংরা জলের উপর দিয়েই ক্লাসে যাচ্ছে । আবার ওই নোংরা জলের পাশে বসেই মিড-ডে মিলের খাবার খাচ্ছে । এককথায় চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে এই স্কুলে ।
অভিভাবকদের অভিযোগ, এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করার ফলে ছেলেরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে । অনেকের পায়ে ঘা হচ্ছে । ফলে নিয়মিত স্কুলে আসতে পারছে না । পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে বাথরুমে জল জমে থাকায় কেউই তা ব্যবহার করতে পারছে না ৷ বাথরুম যেতে হলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাড়িতে ফোন করছেন তারপর এসে বাচ্চাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বাথরুম করিয়ে ফের স্কুলে দিয়ে যেতে হচ্ছে ।
এই স্কুলের দিবা বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা সরকার ও প্রাত বিভাগের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী সরেন জানান, তাঁরা অনেকবার এই সমস্যার কথা প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েছেন । কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা হয়নি । প্রাথমিক স্কুলের পক্ষ থেকে হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করায় আপাতত বিদ্যালয়ের একতলার কয়েকটি ঘরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে । কিন্তু এত পড়ুয়াদের নিয়ে এই গুটি কয়েক ঘরে ক্লাস করানো যাচ্ছে না ৷ ফলে বাধ্য হয়ে জলের মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে ৷ অগস্ট মাসের মধ্যে ক্লাসরুমগুলো ছেড়ে দিতে বলেছে তাঁরা । তখন হয়তো রাস্তায় ক্লাস করতে হবে । এমনকি এই জলে পড়ে গিয়ে এক শিক্ষিকা সম্প্রতি গুরুতর আহত হন । যে কোনও মুহূর্তে বাচ্চারাও পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে । স্কুলের এহেন পরিবেশ দেখে অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের পাঠাচ্ছেন না । এতে বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে । তারা চান যেভাবেই হোক দ্রুত স্কুলের জমা জল সরিয়ে দেওয়া হোক ।
কিন্তু এই জল জমছে কীভাবে প্রতিদিন ?
এই বিষয়ে হাওড়া জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পারি স্কুলটা গ্রাউন্ড লেভেলেরও নীচে ৷ একদিন নয়, এখানে প্রতিদিন মিড-ডে মিল রান্নার জল বেরোতে না পেরে স্কুলের মধ্য়ে জমা হয় ৷ আলাদা ড্রেন করে দিলেও এই সমস্যা সমাধান হওয়ার নয় ৷ তবে যে কোনও উপায়ে দ্রুত এই সমস্যা থেকে স্কুলটিকে মুক্ত করতে হবে ৷ এই ব্যাপারে ডোমজুড়ের বিডিওর সঙ্গে কথা বলেছি । সরকারি আধিকারিকরা স্কুল পরিদর্শনও করেছেন । খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে ওই স্কুলের জমা জল যাতে সরিয়ে দেওয়া যায় ।
আরও পড়ুন :6 পড়ুয়া ও 2 জন শিক্ষক নিয়ে কমিউনিটি হলের বারান্দায় চলছে স্কুল