পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

National Youth Day 2023: ভূরিভোজ সেরে বউদি নিস্তারিণীদেবীকে পাগড়ি উপহার দিয়েছিলেন স্বামীজী !

কেন পাগড়ি (Turban) পরা শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) ? তাঁর সেই পাগড়ি আজ কোথায় ? এই ঘটনার সঙ্গে স্বামীজীর গুরুভাই নবগোপাল ঘোষের বাড়িরই (Nabagopal Ghosh house) বা কী সম্পর্ক ? ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে কী বললেন নবগোপালের বংশধর ?

National Youth Day 2023 the Turban of Swami Vivekananda still preserved in Nabagopal Ghosh house
আজও সংরক্ষিত রয়েছে স্বামীজির পাগড়ি ৷

By

Published : Jan 12, 2023, 7:40 PM IST

Updated : Jan 13, 2023, 6:15 AM IST

কেন পাগড়ি পরা শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ

হাওড়া, 12 জানুয়ারি:সাল 1893 । শিকাগো মহাসম্মেলনে বক্তব্য রাখলেন এক তরুণ ভারতীয় সন্ন্যাসী ৷ পাশ্চাত্য দুনিয়ার তাবড় চিন্তাবিদরা এই তরুণ সন্ন্যাসীর ভাব এবং বচনে মোহিত হলেন ৷ প্রাচ্য দর্শনের জয়জয়কার ছড়িয়ে পড়ল বিদেশে এবং কার্যসিদ্ধি করে ঘরের ছেলে ফিরলেন ঘরে ৷ ততদিনে সেই তরুণ সন্ন্যাসীর নাম ছড়িয়ে পড়েছে ভারতবর্ষের প্রতিটি ভিটেয় ৷ সুতরাং, শিকাগো মহাসম্মেলনের পাঁচবছর পর 1898 সালে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটে তরুণ সন্ন্যাসীর আগমনবার্তা যে হাওয়ার বেগে ছড়িয়ে পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক ৷

ওই বছরেরই শুরুর দিকে 15 জন সন্ন্যাসীর সঙ্গে তিনটি নৌকোয় বরানগর এলাকার আলমবাজার মঠ থেকে তাঁরা যখন হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটে পৌঁছলেন, ততক্ষণে বিলেত ফেরত এই তরুণ বাঙালিকে দেখার জন্য উপচে পড়েছে ভিড় ! সেই তরুণ সন্ন্য়াসী, যাঁকে গোটা বিশ্ব চেনে স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) নামে, সেদিন নৌকা থেকে নেমেই গলায় খোল ঝুলিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন 'কে রে ওরে দিগম্বরা এসেছ কুটির ঘরে' ! এই গানের রচয়িতা গিরীশ ঘোষ ৷ স্বামীজি খালি পায়ে এই গান গাইতে গাইতে গঙ্গার ঘাট থেকে পৌঁছে গেলেন রামকৃষ্ণপুরের নবগোপাল ঘোষের বাড়ি (Nabagopal Ghosh house) ৷ কিন্তু গৃহকর্তা নবগোপাল ঘোষ বা তাঁর সহধর্মিণী নিস্তারিণীদেবী কি তখনও জানতেন যে, তাঁদের এই বাড়ি বাংলার আধ্যাত্মিকতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে চিরতরে ?

1 জানুয়ারি, 1886 ৷ আপামর বঙ্গবাসীর কাছে এই দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারণ, এই দিনেই কল্পতরু হয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ ৷ কল্পতরু হওয়ার সময় নবগোপাল ঘোষকে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বলেন তিনি ৷ নবগোপাল ঘোষ সেই সময় একটি মার্চেন্ট ফার্মে হিসাবরক্ষকের কাজ করছেন ৷ একইসঙ্গে ঠাকুরের পরম প্রিয় পাত্র ৷ বস্তুত, নবগোপাল রামকৃষ্ণের গৃহী ভক্তদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম ৷ তখন নবগোপাল সপরিবার থাকতেন রাজাবাজার সংলগ্ন বাদুড়বাগানে ৷ সেখানে ঠাকুরের পদধূলি পড়েছিল ৷ তারপর মাঝে কেটে গিয়েছে কয়েকটি বছর ৷

আরও পড়ুন:স্বামী বিবেকানন্দের 160তম জন্মবার্ষিকী, টুইট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেসের

1890 সালের শেষের দিকে বাদুড় বাগানের ভিটে ছেড়ে নবগোপাল সপরিবার ঠাঁই নিলেন হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে ৷ 25 কাঠা জমির উপর গড়ে তুললেন বাড়ি ৷ জমির এক কোণে একটি মসজিদ ছিল ৷ কিন্তু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের আশীর্বাদধন্য নবগোপালের মনে ধর্মীয় সংকীর্ণতা নেই ৷ তাই বিধর্মী বলে উচ্ছেদ নয় ৷ আজও সেই মসজিদ একইভাবে রয়েছে ৷ এখনও প্রতিবছর মসজিদের প্রতিনিধিরা স্বামীজিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ৷ স্বামীজীকে তাঁর নতুন বাড়িতে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন রামকৃষ্ণের পরম ভক্ত নবগোপাল। এবং তাঁর অনুরোধ রাখতেই 1898 সালে রামকৃষ্ণপুরের গঙ্গার ঘাটে উপস্থিত হন স্বামীজী ৷

1898 সালের 6 ফেব্রুয়ারি ছিল মাঘী পূর্ণিমা ৷ আর স্বামীজীর সঙ্গে ছিল বার্লিন থেকে আনা পোর্সেলিনের তৈরি রামকৃষ্ণের মূর্তি ! মূর্তিটি আর কিছুক্ষণ পর নবগোপাল ঘোষের নতুন বাড়ির ঠাকুরঘরে প্রতিষ্ঠা পাবে ! নবগোপালের ঠাকুরঘরে ছিল মার্বেল দিয়ে বানানো বেদী ৷ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরিতে যে মার্বেল ব্যবহার হয়েছে, তা দিয়েই তৈরি এই বেদী ৷ সেই বেদির উপরই প্রতিষ্ঠা করা হবে ঠাকুরের মূর্তি ৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা না হয় করা হল ৷ কিন্তু, প্রণাম মন্ত্র কী হবে ? অকুস্থলে বসেই স্বামীজী রচনা করলেন ঠাকুরের সেই বিখ্যাত প্রণাম মন্ত্র ৷ যা আজ প্রতি ঘরে ঘরে উচ্চারিত হয়- "ওঁ স্থাপকায় চ ধর্মস্য সর্বধর্ম স্বরূপিনে/ অবতার বরিষ্ঠায় রামকৃষ্ণায়তে নম: !" স্বামীজী বললেন, পুজো শুরু হবে মা সারদার নামে সংকল্প করে ৷ বাংলার আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে জড়িয়ে গেল নবগোপাল ঘোষের নাম ৷ ইতিহাসের পাতা থেকে সেই স্মৃতিই খনন করে আমাদের জানালেন নবগোপালের প্রপৌত্র অধ্যাপক সুব্রত ঘোষ ৷

আরও পড়ুন:বিবেকানন্দের সন্ন্যাস গ্রহণের দিনে বিশেষ যিশু পুজো আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনে

নবগোপালের এই নতুন বাড়িটি স্বামীজীর সান্নিধ্যে এসে ধন্য হয়েছিল ৷ যদিও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাওয়া তখনও বাকি ৷ স্বামীজীর গানের গলা ছিল উদাত্ত ৷ নবগোপালের নীচের ঘরে ছিল একটি পিয়ানো ৷ সেই পিয়ানো বাজিয়েই ঠাকুর রামকৃষ্ণের প্রিয় গান গেয়েছিলেন তিনি ৷ গানবাজনা হল, ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত হলেন ৷ এদিক, অতিথি নারায়ণ হিসেবে দুয়ারে স্বামী বিবেকানন্দ ৷ গুরুভাইকে আপ্যায়নের ত্রুটি রাখেননি নবগোপাল ৷ স্বামীজী বরাবরই ভোজনরসিক মানুষ ৷ পুজো শেষ হলে স্বামীজী নবগোপালের সহধর্মিণী নিস্তারিণীদেবীর কাছে রামপাখির (মুরগি) মাংস খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ৷ স্বামীজীর অনুরোধ রাখতে নিস্তারিণীদেবী তৈরি করেন অসংখ্য পদ ৷ তার মধ্যে ছিল মুরগির মাংসের পদটিও ৷ ভীষণ তৃপ্তি করে আহার সম্পন্ন করলেন স্বামীজি ৷ নিস্তারিণীদেবীকে স্বামীজী বউদি বলে ডাকতেন ৷ রকমারি সুস্বাদু পদে স্বামীজির মন খুশি ৷ এই সময় নবগোপাল ঘোষ এবং তাঁর পত্নী চাইলেন উপহার ! সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী তখনই উপহারস্বরূপ দিলেন তাঁর মাথার পাগড়ি (Turban) ! যা 1891 সালে রাজস্থানের খেতরির মহারাজ অজিত সিংয়ের অনুরোধ রাখতে পরেছিলেন তিনি ! এবং তারপর সেই বেশেই তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন শিকাগোয় ! আজ গোটা বিশ্ব স্বামীজীর যে ছবির সঙ্গে সবথেকে বেশি পরিচিত, সেই পাগড়ি সযত্নে আজও রাখা আছে নবগোপাল ঘোষের বাড়িতে !

ঠাকুরের কৃপাধন্য হয়েছিলেন নবগোপাল ঘোষ এবং তাঁর সহধর্মিণী নিস্তারিণীদেবী ৷ আজ নবগোপাল ঘোষের এই বাড়ি বাংলার আধ্যাত্মিকতার জগতে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য একটি স্থান ৷ প্রতি বছর 6 ফেব্রুয়ারি এই বাড়িতে পুজো করার জন্য উপস্থিত হন বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীরা। বিবেকানন্দর আশীর্বাদপ্রাপ্ত এই বাড়িটিতে রয়েছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সামগ্রী ৷ যা বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করে আসছে নবগোপাল ঘোষের পরবর্তী প্রজন্ম ৷

Last Updated : Jan 13, 2023, 6:15 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details