হাওড়া, 22 জানুয়ারি : জল্পনা আগে থেকেই ছিল । দিন কয়েক আগে যখন তিনি ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন, তখন তা আরও কিছুটা স্পষ্ট হয়েছিল । দলের একাংশের প্রতি যে তিনি বিরক্ত, তাও বুঝিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি । বলেছিলেন, অনেক সময়েই কাজ করতে চেয়েও করতে পারেননি । এরপর আজ রাজ্যের বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । এক মাসের মধ্যে মমতার মন্ত্রিসভা থেকে তিন মন্ত্রীর ইস্তফা । প্রথমে শুভেন্দু অধিকারী, তারপর লক্ষ্মীরতন শুক্লা, আর আজ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজীবের পক্ষে সওয়াল করে দল থেকে বহিষ্কার হতে হল বালির বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়াকেও ।
কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে শুভেন্দুর দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছেন রাজীব । যদিও এই বিষয়ে রাজীব নিজে এখনও পর্যন্ত কিছুই বলেননি । বরং, আজ রাজভবন বেরোনোর পর দলের প্রতি ভালোবাসার ছবিটাই যেন বারবার সামনে এল । চোখে জল । গলা কাঁপছে । সেই কাঁপা কাঁপা গলাতেই বললেন, কোনওদিন ভাবেননি এইরকম কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে । মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নেত্রীকে ধন্যবাদও জানালেন । সপ্তাহ দুই আগে হাওড়ারই আরও এক বিধায়ক মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন । উত্তর হাওড়ার বিধায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লা খেলার দুনিয়ায় ফিরতে চেয়ে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছিলেন ।
আরও পড়ুন :'বাধ্য হয়ে' চোখের জলে মমতার মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় রাজীবের
শুভেন্দুর থেকে রাজীব বা লক্ষ্মীর ছবিটা কিন্তু অনেকটাই আলাদা । শুভেন্দু যেমনভাবে দলের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলাভাবে আক্রমণ শানিয়েছেন, লক্ষ্মী বা রাজীব কেউই তা করেননি । বরং দলের প্রতি অনুরক্তির কথাটা বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজীব-লক্ষ্মীরা । কিন্তু তাহলে সমস্যাটা কোথায় ? কী এমন হল, যে একেবারে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন হাওড়ার দুই বিধায়ক ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, নেত্রীর প্রতি ভালোবাসা থাকলেও জেলাস্তরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে । একদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও তাঁর অনুগামীরা । আর অন্যদিকে অরূপ রায় । তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই রয়েছেন অরূপ রায় । তুলনামূলকভাবে অরূপের কিছুটা পরে ঘাসফুলে রাজীবের যাত্রা শুরু । এখন তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই রাজীব-অরূপ চাপা উত্তেজনার গুঞ্জন শোনা যায় ।
তবে এই সমস্যা আজকের নয় । সমস্যার শুরু পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে । ডোমজুড়ে জেলা পরিষদের প্রার্থী দেওয়া নিয়ে প্রথমবার প্রকাশ্যে আসে রাজীব-অরূপ সংঘাত । অরূপ রায় তাঁর পছন্দের মানুষ কল্যাণ ঘোষকে জেলা পরিষদের প্রার্থী করেছিলেন । কিন্তু তাতে সায় ছিল না রাজীবের । সেইবার পঞ্চায়েত ভোটে ডোমজুড়ে জেলা পরিষদে জেতেন জসিমউদ্দিন, যিনি ছিলেন একজন নির্দল প্রার্থী । কানাঘুষো শোনা যায়, এই জসিমউদ্দিন ছিলেন রাজীবের পছন্দের প্রার্থী ।
আরও পড়ুন : ভালো মানুষের জায়গা নেই তৃণমূলে, রাজীব প্রসঙ্গে লকেট
হাওড়া বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত । হাওড়ার 40 টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে 39 টিতেই জিতেছিল তৃণমূল । একমাত্র ডোমজুড় জেলা পরিষদ আসনে হারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তৃণমূলকে । তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, রাজীবের এই চ্যালেঞ্জকে মোটেই ভালোভাবে নেননি অরূপ । আর সেই থেকে অলিখিতভাবে দু'টি শিবিরে ভাগ হয়ে গিয়েছে হাওড়া জেলা তৃণমূল । একদিকে অরূপ রায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা । অন্যদিকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামীরা ।
কাজ করা যাচ্ছে না বলে শুধুমাত্র রাজীবই নন, সুর চড়িয়েছেন অন্যান্য জেলা তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরাও । রাজনৈতিক মহলে রাজীব ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত বৈশালী ডালমিয়া । বেশ কয়েকদিন ধরে বেসুরো গাইছিলেন তিনিও ৷ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফার পর তা ফের একবার প্রকাশ্যে এসেছে ৷ আজ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই বৈশালী ডালমিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল । তৃণমূল সূত্রের খবর, দলবিরোধী মন্তব্যের জন্যই বহিষ্কার করা হয়েছে বৈশালীকে ।
আরও পড়ুন : প্রধানমন্ত্রীকেই বহিরাগত বলেন, আমি তো কোন ছাড়; দলের একাংশের বিরুদ্ধেই সরব বৈশালি