পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

Mahalaya: প্রতিমার চক্ষুদানে দেবীপক্ষের সূচনা, তর্পণে চলছে পুণ্য অর্জন

মহালয়ায় (Mahalaya) শুরু হল দেবীপক্ষ ৷ প্রথা মেনে এই দিনেই হল দেবী দুর্গার (Durga Puja) চক্ষুদান ৷ পাশাপাশি গঙ্গার ঘাটে ঘাটে চলছে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তর্পণ (Tarpan)৷

Durga idol's eyes drawn at Mahalaya, Tarpan done at ganga ghats
প্রতিমার চক্ষুদানে দেবীপক্ষের সূচনা, তর্পণে চলছে পুণ্য অর্জন

By

Published : Oct 6, 2021, 3:21 PM IST

Updated : Oct 6, 2021, 3:53 PM IST

হাওড়া, 6 অক্টোবর: আজ মহালয়া (Mahalaya)। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এ দিনই পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা । আজকের দিনে হয় দেবীর চক্ষুদান ৷ মহালয়া মানেই দুর্গা পুজোর (Durga Puja) ঢাকে কাঠি পড়ে গেল । এ বার দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্যে দিয়ে জাগ্রত করা হয় মাতৃশক্তিকে । শুরু হয় বাঙালির সেরা উৎসব শারদীয়া উৎসব । পাশাপাশি এ দিন তর্পণের মাধ্যমে চলল পিতৃপুরুষ স্মরণ ৷

এ সময়ে বাঙালি হিন্দুরা যেমন চার দিনের দুর্গা পুজোয় মেতে ওঠেন, ঠিক তেমনই অবাঙালিরা ন'দিনের বিশেষ দুর্গা পুজো করে থাকেন । যাকে বলা হয় নবরাত্রি । মহালয়ার ভোরের আলো ফুটতেই ‘তর্পণ’ (Tarpan) করার উদ্দেশ্যে গঙ্গার পাড়ে ভিড় জমান বহু মানুষ । ইহলোক ছেড়ে চলে যাওয়া পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে এ দিন চাল, তিল, জল দান করে থাকেন বংশধরেরা । তর্পণের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় চিরতরে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের ।

অপরদিকে, মহালয়ার দিনই হয় দেবীর চক্ষুদান পর্ব । প্রতিমা শিল্পীর নিখুঁত তুলির টানে জেগে ওঠে প্রতিমার ত্রিনয়ন । দুর্গা পুজোর সূচনা হয় এই চক্ষুদানের মাধ্যমে । বলা হয়, এই চক্ষুদানের মাধ্যমেই দেবী দুর্গা মৃণ্ময়ী থেকে হয়ে ওঠেন চিণ্ময়ী ।

বারোয়ারি পুজো শুরুর আগে দুর্গা পুজো এক সময়ে শুধু রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িতে হত । সেখানে বৈশাখ মাসে প্রতিমার কাঠামো গড়ে, সেই কাঠামো পুজো হত জন্মাষ্টমীর দিনে । রীতি অনুসারে মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর সকালে হত প্রতিমার চক্ষুদান পর্ব । কিন্তু দেবী পক্ষের শুরু হয় মহালয়ার দিনে । তাই আগেকার দিনে অনেক জমিদার বাড়িতে এই দিনটকেই শুভ মেনে দেবী প্রতিমার চক্ষু আঁকা হত ৷ তবে ধর্ম মতে প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হত মহাসপ্তমীতে ।

আরও পড়ুন:Mahalaya 2021 : করোনার ভয় কাটিয়ে হাওড়ায় গঙ্গার ঘাটে তর্পণ, বিশেষ নজরদারি পুলিশের

একজন শিল্পী এবং পুরোহিতের কাছে এই চক্ষুদান কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, হিন্দুশাস্ত্র মতে এর ব্যাখ্যা রয়েছে । দুর্গা পুজোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার চক্ষুদান । মহালয়ার সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবীকে কাজল পরানো হয় । প্রথমে ত্রিনয়ন বা ঊর্ধ্বনয়ন, তারপর বাম চক্ষু এবং শেষে ডান চক্ষু মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে অঙ্কন করা হয় । এই চক্ষুদানের পরই প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় মহাসপ্তমীতে । পর্দায় ঢাকা ঘেরাটোপে পূজারি এবং তান্ত্রিকদের উপস্থিতিতে মোট 108বার বীজমন্ত্র জপ করা হয় । এই রীতির ফলেই মৃণ্ময়ী থেকে চিণ্ময়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী । হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী এর অর্থ, মাটির প্রতিমা থেকে রক্তমাংসের শরীরে পরিণত হন দেবী ।

বহুদিন ধরেই মহালয়ার দিন ভোরবেলা স্নান করে শুদ্ধ কাপড়ে দেবীর চক্ষুদান করা হয় । এই দিন কাকভোরে রেডিয়োতে মহালয়া পাঠ শোনা হয় ৷ গঙ্গায় চলে তর্পণ ৷ সূচনা হয় দেবীপক্ষের । সব মিলিয়ে এক অনন্য আবহের সৃষ্টি হয় । এটা একটা নস্টালজিক বিষয় ।

দেবী চক্ষুদান করছেন শিল্পী

আরও পড়ুন:Mahalaya 2021 : গঙ্গার ঘাটগুলিতে জনসমুদ্র, "ভগবানের উপর বিশ্বাস রেখে এসেছি", বলছেন পুণ্যার্থীরা

এই প্রসঙ্গে আজকের প্রজন্মের প্রতিমা শিল্পী শুভঙ্কর খামারু বলেন, তাঁরা প্রতিমা গড়লেও তার যথার্থ পারিশ্রমিক তাঁরা পান না । মায়ের নামেই তাঁদের সবটা চলে যাচ্ছে । পাশাপাশি তিনি বলেন, প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নিষিদ্ধ পল্লির মাটি । মা যেমন সংসারের সমস্ত ময়লা, অবর্জনাকে দূর করে সব কিছু পবিত্র করেন, ঠিক তেমনই সেই অঞ্চলের মানুষেরাও সমাজের সমস্ত বিষকে ধারণ করে আছেন । তাই তাঁদেরকে সম্মান দিতেই নাকি এই প্রথা ।

তবে প্রথা যাই হোক না কেন, মহালয়ার এই পুণ্য লগ্ন একদিকে দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমে দুর্গা পুজোর আগমন বার্তা মেলে । ঠিক তেমনই এই দিনে নিজেদের পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করে পুণ্য অর্জনে ব্যস্ত বাঙালি ।

আরও পড়ুন:Weather Forecast : বঙ্গোপসাগরে ফের ঘূর্ণাবর্ত, মহালয়ায় কলকাতা-সহ উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা

Last Updated : Oct 6, 2021, 3:53 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details