হাওড়া, 1 ডিসেম্বর: কথায় বলে, সন্তানের কাছে পৃথিবীতে মা-বাবার মতো আপন কেউ হয় না ৷ সেই মা-বাবার বিরুদ্ধে সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ ৷ সাঁকরাইলের এই দম্পতি কার্যত বাচ্চা বিক্রির কারবার ফেঁদে বসেছিলেন। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার সাঁকরাইল বিধানসভা এলাকার নলপুর উলা ব্রাহ্মণ পাড়াতে। বৃহস্পতিবার ওই দম্পতি-সহ 4 অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে সাঁকরাইল থানার পুলিশ ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত ছয়-সাত বছর আগে। কয়েক বছর আগেও বাচ্চা বিক্রির ঘটনাকে সন্দেহ করে ওই পরিবারের সঙ্গে বিরোধ বাঁধে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তবে তারপরে সবকিছু স্বাভাবিক হলে তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যায় বলেই অভিযোগ এলাকাবাসীদের। অভিযোগ, নিজেদের বাচ্চাদের দূরে মিশনারি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়ার গল্প শুনিয়ে আদতে মোটা টাকার বিনিময়ে সন্তান দত্তক নিতে চাওয়া অন্য দম্পতিদের বিক্রি করে দিত নলপুরের উলা ব্রাহ্মণ পাড়ার বাসিন্দা রত্না ও তার স্বামী বিশ্বজিৎ বর।
মোটা টাকায় বাচ্চা বিক্রির অভিযোগ দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযুক্তের পরিবার সূত্রে খবর, বাড়ি থেকে পালিয়ে মেদিনীপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ বরের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করেছিল রত্না বন্দ্যোপাধ্যায় । এরপর এক মাসের মাথায় সে ও তার স্বামী এসে বাপের বাড়িতে এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করে । রত্নার স্বামী কোনও কাজকর্ম করত না ৷ এরপর দু’টি সন্তান হয় রত্নার। চার পাঁচ বছর বয়স হওয়ার পরে হঠাৎ করে দুই সন্তানকে দূরে মিশনারি স্কুলে ভর্তি করে দেওয়ার কথা জানায় মা ও দাদাকে। ওই স্কুলে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার জন্য কোনও অর্থ লাগবে না বলেই বাচ্চাদের সেখানে রাখার ব্যবস্থা ৷ এইরকমটাই জানায় রত্না তাঁদের পরিবারকে। যদিও রত্না ও তার স্বামীর কথায় শুরু থেকেই সন্দেহ করে আসছিলো রত্নার দাদা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, স্কুলে নয় বরং তার ভাগ্না-ভাগ্নিকে অন্য দম্পতির হাতে মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিলো রত্না ও তার স্বামী বিশ্বজিৎ। মৃগাঙ্ক বন্দোপাধ্যায় জানান, ভাগ্না-ভাগনি কোথায় যাচ্ছে তার জানা নেই। যখন এখানে তারা থাকত তখনই শেষ বার তাঁদের তিনি দেখেছিলেন। স্কুলে পাঠানোর পর থেকে কয়েক বছর কেটে গেলেও তারা আর ফেরৎ আসেনি বাড়িতে।
আরও পড়ুন:ইটিভি ভারতের খবরের জের, নদী বিক্রি আটকাতে সচেষ্ট প্রশাসন
সাঁকরাইল থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রত্না, তার স্বামী ও তার মা-সহ এক খুড়তুতো দাদাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের থেকে জানার চেষ্টা হচ্ছে দুই সন্তানকে কোথায় কত টাকায় কার কাছে বিক্রি করেছে। এই ঘটনায় আর কারা যুক্ত আছে তাও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অধিকারিকরা।যদিও গোটা ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তারা ওই দম্পতি সহ পরিবারের সদস্যদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।