হাওড়া, 29 জানুয়ারি : পকসোর জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত এখনও অধরা । এমন অভিযোগ উঠেছে হাওড়ার সাঁকরাইলের বানুপুর-1 গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে । এমনকি প্রথমে সাঁকরাইল থানাও দু'জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেছিল । পরে আদালতের হস্তক্ষেপে মামলা রুজু করা হয় । এফআইআর গ্রহণ করে থানা । কিন্তু নির্যাতিতা নাবালিকার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি (Allegations against Sankrail police of being inactive in POCSO case)।
পকসো আইনে (Protection of Children from Sexual Offences (POCSO) Act) অভিযুক্ত প্রকাশ্য দিবালোকে ঘোরাফেরা করছে । স্বভাবত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্যাতিতার পরিবার । ঘটনার সূত্রপাত ওই এলাকার একটি পুকুর ভরাট করা নিয়ে । স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার একটি পুকুর ভরাট করে আবাসন তৈরির পরিকল্পনা করছিল বানুপুর-1 গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও তাঁর স্বামী । তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য । এলাকাবাসী তা রুখতে স্থানীয় পঞ্চায়েতে গণ-স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগপত্র জমা করে । তাতে সই করে ওই নাবালিকা । তার পরিবারের অভিযোগ, সই করার অপরাধে তার উপর নির্যাতন চালায় পঞ্চায়েত প্রধান ।
নির্যাতিতার অভিযোগ, ঘটনার দিন সে পুকুর থেকে জল আনতে গেলে, তাকে পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর স্বামী গণ-স্বাক্ষর অভিযোগপত্রে সই করার কারণ জিজ্ঞেস করেন । এরপর তাকে কুৎসিত ভাষায় ভয় দেখায় এবং মারধর শুরু করে অভিযুক্তরা । তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন নাবালিকার মাকে খবর দেয় । তার মা এসে প্রধানকে মারধরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে নাবালিকার মায়ের উপরও অত্যাচার চলে । এমনকি নাবালিকার গোপনাঙ্গেও হাত দেয় পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর স্বামী । এরপর প্রধান নিজেই সাঁকরাইল থানার পুলিশকে ডেকে পাঠায় । পুলিশ একতরফাভাবে প্রধানের কথা শুনে ফিরে যায় । নাবালিকা নির্যাতিতার পরিবার সাঁকরাইল থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে তাদের কোনও কথাই শোনেনি পুলিশ ।
আরও পড়ুন : Gunshot at Howrah Bar : পানশালায় লুঠের চেষ্টা ডোমজুড়ে, দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত এক
বিচারের আশায় এই অত্যাচারের ঘটনা আদালতে জানায় নাবালিকার পরিবার । আদালতের হস্তক্ষেপে তাঁদের এফআইআর নিতে বাধ্য হয় সাঁকরাইল থানা । তবে এফআইআর-এ পকসো আইনের ধারা প্রয়োগ করা হলেও আইন অনুযায়ী অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ । এমনকি তাকে জেরারও প্রয়োজন বোধ করেনি তদন্তকারী আধিকারিকেরা । অভিযুক্ত এখনও এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে । আর আতঙ্কে দিন কাটছে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের ।
নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি । মাঝে মাঝে পুলিশ এসে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চলে যায় । এলাকার পুকুরটি ভরাট করার বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার বা বিডিও থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । স্থানীয় প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করেনি। নির্যাতিতার বাবাও জানান, তাঁর মেয়ে নাবালিকা । ঘটনার দিন কাজে থেকে বাড়ি এসে নির্যাতনের কথা জানতে পারেন । থানাতে অভিযোগ জানাতে গেলে প্রধান তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন, “থানা, বিডিও, আইন সব পঞ্চায়েত প্রধানেরই হাতে ।” অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু করবে না, জানান নির্যাতিতার পিতা । এরপর তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন । আদালতের হস্তক্ষেপে এফআইআর ও পকসো আইনে 354 ধারায় মামলা রুজু হয় ।