হাওড়া, 24 জুন : দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গোবিন্দ হাজরাকে । জমির দালাল থেকে পঞ্চায়েত প্রধান হন তিনি । বিপুল সম্পত্তির মালিক । তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ । পুলিশ হেফাজতে তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত । ছয় নম্বর জাতীয় সড়কের কোনা মোড় থেকে বাঁদিকের রাস্তায় কিছুটা গেলেই জগদীশপুর । আর জগদীশপুর মানে একটাই নাম উঠে আসে তিনি হলেন গোবিন্দ হাজরা । আর এই গোবিন্দ হাজরার সমস্ত সম্পত্তিতে পড়ল 'রাহু ভবন' লেখা পোস্টার ৷
একসময়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা এবং জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান গোবিন্দ হাজরা । প্রধান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে প্রচুর অভিযোগ । আর্থিক তছরুপ থেকে জমিজমা জোর করে দখল করে নেওয়া, একাধিক অভিযোগ করছেন অনেকেই । আর এভাবে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি । কিন্তু কীভাবে হল তাঁর উত্থান?
জানা গিয়েছে, প্রথম জীবনে দুধ বিক্রি করতেন তিনি । এরপর শুরু করেন জমির দালালি । পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে হয়ে ওঠেন দলের সক্রিয় কর্মী । সেই সময় সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রে জোর লড়াই চালিয়ে ছিলেন তিনি । হয়ে ওঠেন জগদীশপুর এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা । এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন । ভাঙচুর করা হয়েছিল তাঁর বাড়িঘর । 2003 সালে প্রথমবার তিনি জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচিত হন । এরপর আরও তিনবার অর্থাৎ মোট চারবারের প্রধান তিনি ।
চামরাইলেরর তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ রায় অভিযোগ করেন, ‘‘প্রধান থাকাকালীন বহু দুর্নীতি করেছেন গোবিন্দ হাজরা । এলাকায় কোনও জায়গা জমি বিক্রি করতে গেলে তাঁকে আগে জানিয়ে বিক্রি করতে হত । সেখান থেকে মোটা টাকা তাঁকে দিতে হত । এছাড়া জোর করে জমি ও কারখানা দখল করেছেন প্রাক্তন প্রধান ।’’ এই এলাকায় অনেকে 'রাহু' বলে ডাকতেন তাঁকে । এলাকায় কথিত আছে গোবিন্দ হাজরার রাহুর দৃষ্টি কোনও জমি ও কারখানায় পড়লে তা তিনি দখল করে ছাড়তেন । এলাকায় অনেক বহুতল নির্মাণ করেছেন তিনি । বর্তমানে সেগুলোর নাম 'রাহু ভবন' বলে উল্লেখ করে ব্যানার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন :ডোমজুড়ে 38 হাজার পরিবারের জন্য উদ্বোধন হল পানীয় জল প্রকল্প
এলাকার এক ব্যবসায়ী কমল চন্দ্র জানিয়েছেন, তিনি বহুতল নির্মাণে হার্ডওয়্যারের সামগ্রী ও রঙ বিক্রি করেছিলেন গোবিন্দ হাজরাকে । কিন্তু তিন বছর ধরে তাঁর পাওনা সাড়ে পাঁচ লাখ তিনি টাকা পাননি । এছাড়া একটি দোকানঘর কিনতে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু এখনও দোকানঘর পাননি তিনি । এরপর বাধ্য হয়ে থানায় গোবিন্দ হাজরার নামে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী ।
নাম বলতে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক গোবিন্দ হাজরা । সবাই চাইছেন তাঁর বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক । ইতিমধ্যেই গত পরশু তাঁকে পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে লিলুয়া থানার পুলিশ । নিজেদের হেফাজতে নিয়ে শুরু করেছে তদন্ত । ডোমজুড়ের প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ গোবিন্দ হাজরা । ভোটের আগে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেন । তাঁর গ্রেফতারিতে জগদীশপুর এলাকা রাহুমুক্ত হল বলে মনে করছে এলাকাবাসী ।
