হাওড়া, 24 অগাস্ট : বাড়তি সংক্রমণ ঠেকাতে প্রক্ষিপ্ত লকডাউন চলছে রাজ্যে । সরকারি নির্দেশে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মাস্ক। সবখানে মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব সহ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি ৷ এমতাবস্থায় কতটা সুরক্ষিত শহরের অন্যতম গণপরিবহন হলুদ ট্যাক্সি ?
কলকাতা-হাওড়া যমজ শহরের অন্যতম ব্যস্ত যান এই ট্যাক্সি । শুধু শহরের নিত্যযাত্রী বহনই নয়, ভিন রাজ্যের যাত্রীরাও ব্যবহার করে এই গাড়ি ৷ হাওড়া ও শিয়ালদা স্টেশন ছাড়াও এয়ারপোর্টে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ট্যাক্সি ৷ স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রুটে নামার আগে সকালে এবং গাড়ি গ্যারেজ করার আগে রাতে ট্যাক্সি স্যানিটাইজ় করতে হবে ৷ এইসঙ্গে যাত্রী সুরক্ষায় প্রত্যেক ট্রিপের পর ট্যাক্সি স্যানিটাইজ় করা বাধ্যতামূলক ৷ গোটা বিষয়টি যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ ৷ চালকদের অভিযোগ, স্যানিটাইজেশনে প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি ৷ মন্দার বাজারে তাঁদের গ্যাঁটের টাকা খরচ করেই গাড়ি স্যানিটাইজ় করতে হচ্ছে ৷ এতে দিনের শেষে আয় তলানিতে ৷ এদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকাও নিতে পারছেন না ৷ এই বিষয়ে প্রশাসনের তরফে নজরদারি চালানো হচ্ছে না বলেও জানালেন তাঁরা ৷
হাওড়া স্টেশনে নিয়মিত "ডিউটি" করেন ট্যাক্সিচালক ছেদলাল যাদব ৷ সাফ জানালেন, "প্রশাসন কী করবে ! আমরাই স্যানিটাইজ় করি ৷ দিনভর যা আয় করি ওই স্যানিটাইজ় করেই সব টাকা চলে যায় ৷"
আর এক ট্যাক্সিচালক লালজিৎ সাউয়ের কথায়, "স্যানিটাইজ় যেটুকু পারি আমরাই করি ৷ প্রশাসন কিছু করেনি ৷ ঝুঁকি আছে জানি৷ কিন্তু মজবুর পেট! "
কোভিড সংক্রমণের দিনে কতটা সুরক্ষিত হলুদ ট্যাক্সি? স্যানিটাইজ়ের খরচ যে তাঁরা সামলাতে পারছেন না, তা জানাল সকলেই ৷ ওঁদের কথায়, একে কোরোনা আতঙ্কে যাত্রী কম, ফলে আয়ও কম ৷ তাতে ডিজ়েলের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই ৷ এই সময় বাড়তি খরচ কীভাবে সামলাব ৷ তবু, যেটুকু পারি করি ৷ এই বিষয়ে ট্যাক্সি সংগঠনও যে কোনও উদ্যোগ নেয়নি, তাও বলছেন ট্যাক্সিচালকরা ৷ প্রশাসন হাত বাড়ালে উপকৃত হবেন, মনে করছেন তাঁরা। স্যানিটাইজেশন হোক প্রশাসনের উদ্যোগে। চালকদের এই দাবি সমর্থন করছেন যাত্রীরাও। যাত্রীদের কথায়, প্রশাসন দ্বায়িত্ব নিলে ট্যাক্সিচালক ও সাধারণ যাত্রী উভয়েই সুরক্ষিত থাকবে৷
জনৈক যাত্রী দিলদার আলি খান ব্যবসার কাজে মাঝেমাঝেই কলকাতায় আসেন৷ তাঁর কথায়, "প্রশাসন ট্যাক্সি স্যানিটাইজ করলে চালক-যাত্রী দুজনেরই লাভ৷ এখন যদি স্যানিটাইজেশনের জন্য ভাড়া বাড়ে তাহলে আমাদের উপর বাড়তি বোঝা চাপবে৷"
আরেক যাত্রী অর্জুন সাউ বলেন, "কার জ্বর আছে, কার সর্দি কেউ জানি না! ট্যাক্সিচালকরা যদি না করতে পারে তাহলে তো প্রশাসনের স্যানিটাইজ করা উচিত৷"
ট্যাক্সি স্যানিটাইজেশনে আলাদা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, মেনে নিল প্রশাসনও৷ এই বিষয়ে হাওড়ার রিজিওয়াল ট্রাফিক অফিসার (RTO) সৌমিত্র বিশ্বাস বলেন, "ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলিকে স্যানিটাইজেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ প্রশাসন নজরদারি চালাবে। তবে ট্যাক্সির ক্ষেত্রে এখনই আলাদা করে কোনও ব্যবস্থা করতে পারিনি। আপাতত বাসের ক্ষেত্রে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ট্যাক্সির ব্যাপারটা মাথায় রয়েছে। এটা নিয়েও কাজ হবে।"
যবে হবে তবে চালক ও যাত্রী সুরক্ষিত! যবে হবে তবে মন্দার বাজারে কমবে চালকের অতিরিক্ত খরচ৷ আপাতত সবটাই তিমিরে!