ব্যান্ডেল, 24 অগাস্ট : ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনে মূল অভিযুক্ত এক মহিলা । পুলিশের দাবি, শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি এই খুনের মূল চক্রী । ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করা হয় দিলীপকে । রফা হয় তিন লাখ টাকার । প্রাথমিকভাবেই জমি বিবাদের গল্প উঠে আসছে এই খুনে । তবে স্ত্রী রীতু সিং অবশ্য রাজনৈতিক কারণেই খুনের তত্ত্ব খাড়া করছেন ।
পুলিশি তদন্তে উঠে আসছে, খুনের আগে থেকেই শকুন্তলার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল বিজু পাসওয়ান । লোকসভা ভোটের পরই দিলীপ রামের প্রভাব খর্ব করতেই এই খুন ।
কেন এই খুন? জমি নিয়ে বিবাদ? নাকি দিলীপের স্ত্রী ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের প্রধান হওয়ার পর প্রভাব খাটিয়ে ব্যান্ডেলে রাজ শুরু করেন দিলীপ । তাতেই গাত্রদাহ বাড়ে শকুন্তলার । তার উপর ব্যান্ডেল পেট্রল পাম্পের পিছনে প্রায় 12 কাঠা জমি নিয়ে বিবাদ শুরু হয় দিলীপের সঙ্গে । যার মূল্য 2 কোটি টাকার মতো । শকুন্তলার একটি লজের পাশেই এই জমি । স্বভাবতই এই জমি দখল করার অভিসন্ধি থেকেই বিবাদ বাড়ে । সেই জমি দিলীপ রাম পঞ্চায়েতের মধ্যস্থায় ব্যান্ডেলের একটি বেসরকারি সংস্থাকে বিক্রি করার ব্যবস্থা করে । দিলীপের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকায় শকুন্তলার বিভিন্ন অসামাজিক কাজ মার খাচ্ছিল ।
কে এই শকুন্তলা ওরফে সমুদ্রি ? ব্যান্ডেলের মহিলা ডন হল এই শকুন্তলা । বেনারস থেকে আসার পর ব্যান্ডেলের মানসপুর বস্তিতে বসবাস শুরু করে সে । স্বামী মুন্নালাল যাদব রেলের কর্মী ছিলেন । প্রথমদিকে সমাজ বিরোধীদের আশ্রয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করাত এরা । সেখান থেকে টাকা উপার্জন করা শুরু । সুদের কারবারি হিসাবেও পরিচিতি আছে শকুন্তলার । জানা যাচ্ছে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখাত । এভাবেই চলতে থাকে । এরই মধ্যে দুই ছেলে বড় হয়ে যায় । বড় ছেলে মঙ্গল ও ছোটো আজ়হার । মঙ্গল লজের দেখাশোনা করত । এই খুনের সঙ্গে মঙ্গল জড়িত সন্দেহে পুলিশি তাকে হেপাজতে নিয়েছে । ব্যান্ডেলে একাধিক ফ্ল্যাট তৈরি করে এই শকুন্তলা । বিভিন্ন বিবাদের জমি কিনে প্লট করে বিক্রি করে সে । শকুন্তলা ছেলেদের নিয়ে বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাফিয়া রাজ চালাত । এর আগে চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত বিশ্বাসকে গুলি চালানোর ঘটনায় নাম উঠে এসেছিল শকুন্তলার । এছাড়া মগরা বড়োপাড়ার ডোলে, হেডেক-সহ একাধিক অপরাধী তার সঙ্গে যুক্ত ছিল । পুলিশ যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, সেই মহম্মদ নাসিম, হিডডা ছাড়াও ব্যান্ডেলের কুখ্যাত দুষ্কৃতী লালার সঙ্গেও আগে থেকে সম্পর্ক ছিল তার ।
বর্তমানে পুলিশের ফাঁদ কেটে বেরিয়ে গেছে এই মহিলা । সম্ভবত বেনারস পালিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ । ব্যান্ডেল ছাড়াও পাশের জেলার অপরাধীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল শকুন্তলার । মনে করা হচ্ছে, তার যোগাযোগ পুলিশের উপরতলার সঙ্গেও ছিল । অভিযোগ, গ্রেপ্তার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ক্রাইম ব্রাঞ্চের ASI উৎপল গুপ্তা শকুন্তলাকে ফোন করে পালাতে সাহায্য করে । সেই কারণেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশনার হুমায়ুন কবির ।