চন্দননগর, 13 অগস্ট:বিপ্লবীরাসবিহারী বসুর জন্মস্থান সুবলদহ হলেও হুগলির ভদ্রেশ্বরের পালাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে কাটে তাঁর শৈশব ও কিশোর । তাঁর পড়াশোনা শুরু চন্দননগর থেকে । আর সেখান থেকেই বিপ্লবের মূল মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়া । চন্দননগর থেকেই দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের রসদ পেতে তিনি জাপানে যান । এক সময়ে ইংরেজদের ঘুম কেড়ে নেওয়া সেই বিপ্লবীর স্মৃতি অনেকটাই বিস্মৃতির অতলে । ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট করা হয়েছে ঠিকই । তবে সরকারি ভাবে রাসবিহারী বসুকে নিয়ে কোনও সংগ্রহশালা চন্দননগর বা পালাড়া গ্রামে হয়নি ।
রাজ্য সরকার তাঁর পৈতৃক বাড়ি বর্ধমানের সুবলদহে কিছুটা উন্নতি করলেও হুগলিতে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কিছুই করেনি । চন্দননগর রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউটে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও রাজ্যপাল পিভি আনন্দ বোস পরিদর্শনে গিয়েছিলেন । কিন্তু ব্যাস ওটুকুই ৷ রিসার্চ ইনস্টিটিউটেরও দাবি, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে এই বিপ্লবীর স্মৃতিবিজড়িত চন্দননগর বা পালাড়া ব্রাত্যই থেকে গিয়েছে ।
রাসবিহারী বসুর মামার বাড়ি ছিল ভদ্রেশ্বর বিঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের পালাড়া গ্রামে । বাবা বিনোদবিহারী বসু কর্মসূত্রে সিমলায় চলে যাওয়ার পর কৈশোর বয়স থেকে পালাড়াতেই থাকতেন তিনি । পরে তিনি চন্দননগরে চলে যান । তাঁর নানা স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই গ্রামে । তবে তাঁর মামার বাড়ির কোনও অস্তিত্ব আজ আর নেই । বাগানের মধ্যে একটি বাঁধানো স্থান করা আছে । তা এখন অন্যের দখলে । এখানে রাসবিহারীর স্মৃতি রক্ষা কমিটি তৈরি হয়েছিল । একটি আবক্ষ মূর্তি ছাড়া কোনও কিছুর অস্তিত্ব নেই ।
মামার বাড়ির পাশে বর্তমান প্রজন্মের বাসিন্দা সন্দীপ বসু বলেন, "এখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে অনেকে এসেছেন । রাসবিহারীর জন্মদিনে 20 বছর আগে পালাড়া গ্রামে উৎসব হত । এখন সে সব নষ্ট হতে বসেছে । রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উদ্যোগ নিক পালাড়ায় কিছু করার জন্য । জাপানে থেকে রাসবিহারীর সংগ্রহের জিনিসপত্র এনে সংগ্রহশালা করা যেতে পারে । সরকার উদ্যোগ নিলে এই গ্রামের মানুষ সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করবে এই বিপ্লবীর জন্য ।"
রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, সরকারি তরফে তাঁর জন্মস্থান হিসেবে সুবলদহের উন্নতি করা হয়েছে । ইতিহাস থেকে দেখা যায় পালাড়া গ্রাম বা চন্দননগরে রাসবিহারী বসু জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন । কিন্তু সেই জায়গা সম্পূর্ণ রূপে বঞ্চিত হয়ে রয়েছে । চন্দননগরে রাসবিহারীর পৈতৃক বাড়ি ছিল । চন্দননগরের পৌরনিগমের পূর্বতন বোর্ড সেই জায়গায় বোরো অফিস করে দেয় । খুবই দুঃখজনক ঘটনা । আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁর স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রামের একটি সংগ্রহশালার প্রয়োজন চন্দননগরে । পালাড়া গ্রামে তাঁর স্মৃতিধন্য প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন । চন্দননগরে কোনওদিন সংগ্রহশালা বা স্মৃতিসৌধ তৈরি হলে রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট অবশ্যই সবসময়ের মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিপ্লবীদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে । রাসবিহারীকে নিয়ে চন্দননগরে বা পালাড়ায় কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলে সকলেই খুশি হবে । এখনও পর্যন্ত হুগলিতে রাসবিহারীকে নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করা হয়নি রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফে ।