বলাগড়, 19 ডিসেম্বর: সোশাল মিডিয়া নাম না করে দলের নেতাদের বিরুদ্ধে পোস্ট করে বিতর্ক তৈরি করলেন বলাগড়ের বিধায়ক তৃণমূলের মনোরঞ্জন ব্যাপারী ৷ সোশাল মিডিয়ায় করা পোস্টে করুচিকর শব্দও প্রয়োগ করেছেন ৷ যা নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে শাসক দলের অন্দরে ৷ এই নিয়ে বিধায়কের পালটা সমালোচনা করেছেন স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ৷
সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী লেখেন, "এতো ট্রেলার হ্যায়, পিকচার আভি বাকি হ্যায় দোস্ত । থোরা ইন্তেজার করো৷ সব দেখনে কো মিলেগা । চোর, কাটমানিখোরদের সাম্রাজ্য আমি ধ্বংস করবোই । আমি দিদির আশীর্বাদ নিয়ে বলাগড়ে এসেছি । ...ক্ষমা করব না । চোর, মাটি মাফিয়া, জুয়া বোর্ডের মালিক যে যা পারবি আমার ... ৷ আমার লড়াই চলছে চলবে ৷"
এই পোস্ট করার জন্য সোশাল মিডিয়াতেও অনেকে বিধায়কের সমালোচনা করেন ৷ মনোরঞ্জন ব্যাপারীর পোস্টের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেন অনেকে ৷ সেখানেই বিধায়ক সমালোচকদের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন ৷ আর তা করতে গিয়েও একাধিকবার করুচিকর শব্দ প্রয়োগ করে ফেলেছেন ৷
সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিতর্কে বলাগড়ের বিধায়ক বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়েছে জেলার রাজনীতিতে ৷ তৃণমূলের অন্দরেও এই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ৷ হুগলির জিরাটের এক পঞ্চায়েত প্রধান তপন দাস বলেন, ‘‘ফেসবুকে যা সব লিখেছেন, তাতে বলাগড়বাসীর মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে গিয়েছে ।’’ বিধায়কের অবশ্য এই নিয়ে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই ৷ তাঁকে এই নিয়ে ফোন করা হলে তিনি বরং বলেন, ‘‘সময়ের অপেক্ষা করুন । আরও বলব । কলেজে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলেছেন । তপন দাসকে কে বলতে বলেছে ? যা বলেছি ঠিক বলেছি । আরও বলব ।’’
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে মনোরঞ্জন ব্যাপারীর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয় ৷ সেখানে দেখা যায় যে প্রকাশ্যে তিনি নাম না করে এক পঞ্চায়েত প্রধানের সমালোচনা করছেন ৷ বলাগড়ের বিজয়কৃষ্ণ কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি এই কথাগুলি বলেন বলে জানা যায় ৷ সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানকে তিনি নেশাগ্রস্ত বলেও দাবি করেন ৷ আরও দাবি করেন যে ওই পঞ্চায়েত প্রধান 23 লক্ষ টাকা দিয়ে পদে বসেছেন ৷
সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিতর্কে বলাগড়ের বিধায়ক ঘটনাচক্রে, গত শুক্রবার বিজয়কৃষ্ণ কলেজ নবীনবরণ ও বাৎসরিক অনুষ্ঠান নিয়ে আলোচনা হয় ৷ সেখানে হাজির ছিলেন হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের রুনা খাতুন, জিরাটের পঞ্চায়েত প্রধান তপন দাস-সহ আরও কয়েকজন শাসক-নেতা । স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের মতে বলাগড়ের বিধায়কের আক্রমণের উদ্দেশ্যেই ছিল পঞ্চায়েত প্রধান তপন দাস ও রুনা খাতুন ৷ কারণ, রুনা খাতুন-সহ তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে শুরু থেকেই বিবাদ রয়েছে মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ৷
অনেকের মতে সেই কারণেই পরে কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে এই নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন তিনি ৷ এর রেশ ধরেই বিস্ফোরক ও কুরুচিকর পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় করেছেন তিনি ৷ কিন্তু নাম না করে যাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বলাগড়ের বিধায়ক, সেই তপন দাস বলেন, ‘‘আমাকে প্রধান করতে বিধায়ক আর ব্লক সভাপতি সুপারিশ করেছিলেন প্যাডে ৷ তাহলে তিনি বলতে পারবেন কত টাকা নিয়েছেন । বিধায়ক এর আগেও বলাগড়ের প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধে কিছু না কিছু বলেছেন । বাদ ছিলাম আমি ।’’
তপন দাসের আরও বক্তব্য, ‘‘বিধায়কের আমার বিরুদ্ধে কোনও বক্তব্য থাকলে দলের ভিতর বলতে পারতেন ৷ এভাবে ওপেন ফোরামে কেন করলেন জানি না । ওঁর সঙ্গে আমার কোনও সমস্যা নেই ।’’
আরও পড়ুন:
- নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করে সামাজিক মাধ্যমে বিস্ফোরক পোস্ট মনোরঞ্জনের
- ‘রাজনীতিতে এসে বোধহয় ঠিক করিনি’, প্রত্যাশার চাপে হাঁপিয়ে উঠছেন বলাগড়ের বিধায়ক
- টিকিট বিক্রি নিয়ে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, সোশালে দলীয় পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা মনোরঞ্জনের