বিজেপির ব্রিগেড কর্মসূচির আগেই শ্রীরামপুরে জগন্নাথ মন্দিরে গীতা পাঠে তৃণমূল শ্রীরামপুর, 10 ডিসেম্বর:ব্রিগেডে লক্ষ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি গীতা পাঠ করবে বলে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । তার ঠিক আগে রবিবার মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে গীতা পাঠের আয়োজন ৷ এই নিয়ে রাজনীতির রঙ লেগেছে শ্রীরামপুর মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের বিশ্বশান্তি যজ্ঞে ।
রবিবার তৃণমূলের একাধিক নেতাকে দেখা গিয়েছে গীতা পাঠে অংশ নিতে । তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা । যদিও তৃণমূলের দাবি, বিজেপি দেখানোর রাজনীতির করে, তারা তা করে না ৷ শাসকদলের মতে, মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরে হোম যজ্ঞ নিত্য নৈমিত্যিক একটি অনুষ্ঠান ছাড়া কিছুই নয় । যদিও বিজেপির কটাক্ষ, জগন্নাথ মন্দির ট্রাস্টি কমিটিকে ব্যবহার করে গীতা পাঠ করাচ্ছে তৃণমূল । এটা সম্পূর্ণ লোক দেখানো ।
যদিও মন্দির কমিটির সম্পাদক পিয়াল অধিকারী বলেন, মাহেশ 627 বছরের প্রাচীন । মাহেশ যেটা করে সেটা স্বতন্ত্র । ব্রিগেডের লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই । ব্রিগেডে আমন্ত্রণ পেলেও অবশ্যই যাব ।
লক্ষ কন্ঠের আগে দুই সহস্র কন্ঠে গীতা পাঠের আয়োজন করা হল শ্রীরামপুর মাহেশে । বিশ্বশান্তির জন্য রবিবার মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে গীতা পাঠ ও বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় । মন্দিরের গর্ভগৃহের উত্তর দিকে হোম কুন্ড করা হয় । সকাল সাড়ে দশটা থেকে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ও সংকল্পের মাধ্যমে শুরু হয় পুজো পাঠ । রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে জগন্নাথ ভক্ত ও গীতা প্রেমীরা গীতা পাঠে অংশ নেন । উলু ও শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা মন্দির চত্বর ।
সেখানে উপস্থিত হন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচি, হুগলির জেলাশাসক মুক্তা আর্য-সহ বিশিষ্টরা । সাধু সন্তদের সঙ্গে গীতা হাতে পাঠ করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে গীতা পাঠ করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ।
তিনি বলেন, "পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের পর সব থেকে পুরনো মন্দির মাহেশের জগন্নাথ দেবের মন্দির । সারা বাংলার মানুষের আবেগ জগন্নাথ দেবের মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে । মন্দির কর্তৃপক্ষ সারা বছরই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে । এটা নতুন কিছু নয় । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । উত্তরবঙ্গে থাকার কারণে তিনি আসতে পারেননি । তাই আমাকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন । যদিও এর আগে রথের সময় তিনি এসেছেন এবং রথের রশিতে টান দিয়েছেন । আমি ঈশ্বর মানি । মমতাদি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন । সমস্ত ধর্মকে আমরা বিশ্বাস করি ।"
24 ডিসেম্বর ব্রিগেডে গীতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে । সেখানে আসার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির । সে প্রসঙ্গে শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, "মাহেশের অনুষ্ঠান নতুন নয়, তাঁরা নতুন করে করছেন । হিন্দু ধর্ম বিজেপির কোনও পৈত্রিক সম্পত্তি নয় । বিজেপির কটা লোক হনুমান চালিশা পড়েন বলুন ? আমি নিজে চাঁপদানিতে হনুমানজির মন্দির তৈরি করিয়ে দিয়েছি । আমরা করি, আমাদের দেখাতে হয় না, ওদের দেখাতে হয় ।"
মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এ দিন বলেন, "বিশ্ব শান্তির যজ্ঞ বৈশিষ্ট্যময় প্রাচীন স্থানে হচ্ছে যেখানে পৃথিবীর সব থেকে পুরনো বিগ্রহ রয়েছে । যেখানে বলভদ্র, সুভদ্রা ও জগন্নাথ দেব রয়েছেন, সেই স্থানে বিশ্ব শান্তির জন্য যোগ্য হচ্ছে এবং ভাগবত গীতার পাঁচটি অধ্যায় পাঠ করা হচ্ছে । ঈশ্বরের কৃপায় বিশ্ব শান্তি বিরাজ করুক । মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমি এখানে এসেছি, কিন্তু তিনি বিশেষ কাজে বাইরে থাকার জন্য আসতে পারেননি ।মন্দির প্রাঙ্গণকে উন্নত করার জন্য উনি অনেক রকম সাহায্য করেছেন । মন্দির সবার জন্য উন্মুক্ত ৷ এখানে আসার জন্য বিশেষ কারওকে আমন্ত্রণ লাগে সেটা আমার জানা নেই । আমি নিজে বিভিন্ন পুজা মণ্ডপে গিয়েছি ৷ তার জন্য নিমন্ত্রণের প্রয়োজন হয় বলে আমার জানা নেই । আগ্রহ থাকলে ঈশ্বরের কাছে যে কেউ আসতে পারেন । মান অভিমানের কোনও জায়গা আছে বলে আমার মনে হয় না ।"
বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মোহন আদক বলেন, "কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে গীতা পাঠ করছেন সেটা তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচি । ব্রিগেডের আগে তৃণমূল জগন্নাথ মন্দিরের ট্রাস্টিকে ব্যবহার করে গীতা পাঠ করাচ্ছে । এটা তৃণমূলের চোরেদের বাঁচাতে লোক দেখাতে এই আয়োজন । সনাতনী হিন্দু ধর্ম মেনে যে গীতা পাঠ হবে, সেটা 24 ডিসেম্বর হবে, তা বাংলা ও দেশের হিতে হবে ।"
হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এ দিন হুগলির বলাগড়ে একটি কর্মসূচিতে এসে এই নিয়ে বলেন, "তৃণমূল তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে, দুর্নীতি করে নেতারা জেলে গিয়েছেন, গীতা পাঠ করলেও নিজেদের পবিত্র করতে পারবেন না । কারণ সাধারণ মানুষের অভিশাপ লেগেছে ওঁদের উপর ।"
আরও পড়ুন:
- লক্ষ কণ্ঠে ব্রিগেডে গীতা পাঠ, মুখোমুখি হতে পারেন মোদি ও মমতা
- 'আমাদের টাকা দিন, নয়তো গদি ছাড়ুন !' আলিপুরদুয়ার থেকে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি মমতার
- বানারহাটে পায়ে হেঁটে জনস্রোতে মিশে গেলেন মমতা, বৃদ্ধার বাড়িতে ঢুকে খেলেন চা