হুগলি, 18 অগস্ট : ভারতের স্বাধীনতার বহু আগে থেকে এ দেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঘাঁটি গেড়েছিল আফগানিস্তান (Afghanistan)-র নাগরিকরা ৷ যাঁদের আমরা কাবুলিওয়ালা বলে সম্বোধন করি ৷ বছরের পর বছর ভারতে থাকতে থাকতে অনেকেই এখন এদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছেন ৷ তাঁদের স্থায়ী বাসস্থান রয়েছে এদেশে ৷ কিন্তু, এই কাবুলিওয়ালাদের পরিবারের অনেকেই এখনও আফগানিস্তানেই রয়েছেন ৷ আর আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের সেই সদস্যদের নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন এই কাবুলিওয়ালারা ৷
হগলির চুঁচুড়া চকবাজারে (Chowk Bazar) রয়েছে কাবুলি কুঠি ৷ এই কাবুলি কুঠিতেই বহু দশক ধরে এদেশে ব্যবসা করতে আসা আফগানরা থাকছেন ৷ অনেকে আবার ভারতের নারগিকত্ব পাওয়ার পর চুঁচুড়ায় অন্যত্র নিজেদের স্থায়ী বাসস্থান বানিয়েছেন ৷ কিন্তু, বর্তমানে চিন্তায় রয়েছেন কাবুলি কুঠিতে থাকা কাবুলিওয়ালারা ৷ কারণ, প্রায় 20 বছর পর ফের একবার তাঁদের দেশ তালিবান (Taliban)-র দখলে চলে গিয়েছে ৷ রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি অসহায় আত্মসমর্পণ করে তালিবানের হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দিয়ে দেশ ছেড়েছেন ৷ এই পরিস্থিতিতে কেমন আছেন তাঁদের পরিবার পরিজনরা ? সেই চিন্তাই ভাবাচ্ছে বাংলার কাবুলিওয়ালাদের ৷
বর্তমানে ভারতীয় নাগরিক চুঁচুড়ার এক কাবুলিওয়ালা আইনুদ্দিন খান ৷ তাঁর অভিযোগ, আফগানিস্তানের যে অবস্থা হয়েছে তার পিছনে চিন, পাকিস্তান এবং ইরানের হাত রয়েছে ৷ কারণ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পাকিস্তান এবং ইরানকে তাঁদের দেশের জল দিচ্ছিল না ৷ এমনকি, আফগানিস্তানের উন্নতির জন্য আশরাফ গনি ভারতের সঙ্গে হাতেহাত মিলিয়ে কাজ করছিল ৷ সেটা পাকিস্তান সরকার হতে দিয়ে চায়নি ৷ আর এত দিন আফগানিস্তানকে সুরক্ষা দিয়ে আসা আমেরিকাও এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন ৷
আরও পড়ুন : Zabihullah Mujahid : নারীরা কাজ করতে পারবে, তবে ইসলামিক আইন মেনে; জানালেন তালিবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ
তবে, তালিবান আফগানদের শত্রু নয় বলে জানিয়েছেন আইনুদ্দিন খান ৷ তাঁর দাবি, তালিবান যদি সরকার চালাতে চায়, তবে চালাক ৷ কিন্তু, সেক্ষেত্রে তাদের গনি সরকারের মতো সকল পরিষেবা দিতে হবে, আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য ৷ এমনকি গনি সরকারে দুর্নীতি থাকলেও, তালিবানের সরকারে দুর্নীতি হবে না ৷ এমনকি তালিবানরা এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন আইনুদ্দিন ৷ এমনকি কাবুল বিমানবন্দরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণটাই কিছু মানুষের মূর্খামির ফল বলে মনে করেন তিনি ৷ তাঁর কথায়, যাঁরা জোর করে বিমানে উঠতে গিয়েছিল, তাঁরা বিনা খরচে আমেরিকায় গিয়ে কাজ করতে চায় ৷ কিন্তু, সেটা যে হয় না, তা বুঝতে হবে সবাইকে ৷
আরও পড়ুন :US Air Force : বিমানের চাকায় লেগে মানুষের দেহাংশ ! জানাল মার্কিন বায়ু সেনা
প্রায় একই সুর আরেক কাবুলিওয়ালা জামাল খানের গলাতেও ৷ তিনি বলেন, কাবুল বিমানবন্দরের ঘটনা ছাড়া গোটা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে ৷ তবে, আগামী দিনে তালিবান কী করে সেটা দেখার ৷ আর মাত্র কয়েকদিনে সরকার পড়ে যাওয়া, একটা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ করেছেন জামাল খান ৷ তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি নিজেও বুঝতে পারেননি যে, এতো দ্রুত সরকারের পতন হবে ৷ তবে, তিনি চান আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসুক, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং পরিকাঠামোর উন্নতি হোক ৷ আর তিনি মনে করেন, তালিবান আর আগের মতো নেই ৷ অবশ্যই তারা আফগানিস্তানের ভালর জন্য কাজ করবে ৷
তালিবানি উত্থানের পিছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ বাংলার কাবুলিওয়ালাদের আইনুদ্দিন খান এবং জামাল খানরা তালিবানের উপর ভরসা রাখলেও, তালিবান যে বদলে যায়নি, প্রতিপদে তার প্রমাণ নিজেরাই দিচ্ছে ৷ মহিলাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মস্থলে যাওয়ার অনুমতি দিলেও, বাস্তবে ঘরবন্দি মহিলারা ৷ ইতিমধ্যে মহিলা সাংবাদিকদের চাকরি চলে গিয়েছে তালিবানের ভয়ে ৷ শরিয়তি আইনের নামে মহিলাদের স্বাধীনতার খর্ব করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ পুরুষরা রাস্তায় বেরোলে হাত বেঁধে বন্দুকের নলের সামনে চলছে তল্লাশি ৷ প্রতিবাদ করলে করা হচ্ছে মারধর ৷ প্রত্যেক বাড়িতে ঢুকে ঢুকে তল্লাশির নামে চলছে অত্যাচার ৷ ফলে, বিশ্বের কাছে যে ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করুক না কেন তালিবান, বাস্তবের ছবিটা যে অত্যন্ত নৃশংস তা সোশ্যাল মিডিয়ায় তালিবানের পোস্ট করা ভিডিয়ো দেখলেই স্পষ্ট ৷