চুঁচুড়া, 1 অক্টোবর: অবৈধভাবে কোর্ট পেপারে লিখে এক সদ্যোজাতকে দত্তক নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল হুগলির চুঁচুড়ায় ৷ রবিবার ওই শিশুটিকে হোমে পাঠাল হুগলি জেলা প্রশাসন । এদিন চুঁচুড়া থানার পুলিশ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির তরফে হোমে পাঠানো হয়েছে শিশুটিকে । শনিবারই প্রকাশ্যে আসে এই ঘটনা । ঝাড়খণ্ড থেকে দু'মাস আগে সুগন্ধায় এক ইটভাটায় আসে ওই শিশুটির মা । 19 বছর বয়সি ওই তরুণী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শ্রমিক হিসাবে কাজ পান ওই ইঁটভাটায় ৷ কিছুদিন আগে তিনি সন্তানের জন্ম দেন ।
তারপরেই চুঁচুড়ার এক নিঃসন্তান দম্পতি জানতে পারেন যে, অর্থাভাবে শিশুটিকে লালন-পালন করতে পারবে না তর মা ৷ এরপরেই কোর্ট পেপারে লিখে ওই সদ্যোজাতকে দত্তক নেন ওই দম্পতি ৷ কোনও অর্থ না-নিয়েই শিশুটিকে স্বেচ্ছায় দান করে দেন ওই তরুণী ৷ মাত্র 8-9 দিনের ওই শিশুটিকে পেয়ে খুশি হয়েছিলেন ওই দম্পতিও । কিন্তু কীভাবে এই দুধের শিশুকে দত্তক নিলেন ওই দম্পতি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ৷
এরপরই বিষয়টি জানাজানি হয় । এই ঘটনাটি একটি প্রতিবেদন আকারে শনিবার তুলে ধরা হয়েছিল ইটিভি ভারতে ৷ এরপরই তৎপর হয় প্রশাসন । হুগলি জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক চুঁচুড়া থানার পুলিশকে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে ওই দম্পতির থেকে নিয়ে নেন ৷ চুঁচুড়ার ওই দম্পতিকেও থানায় ডাকা হয় । সুগন্ধার ওই ইটভাটা থেকে শিশুটির মাকেও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ । থানায় দু'পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি পরিষ্কার হয় । এরপরই পুলিশ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাতে তুলে দেয় শিশুটিকে ।
সিডব্লিউসি কোন্নগরে একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই শিশু ও তার মাকে । প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে যে পদ্ধতিতে দত্তক দেওয়া হয়েছিল তা বেআইনি। আট দিনের এই শিশুকে মা ছাড়া রাখা যায় না । তাই শিশুটির ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করে তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে, যাতে মা ও শিশু সুস্থ থাকে। শিশুটির মা প্রাপ্তবয়স্ক হলেও, আর্থিক কারণে তিনি দায়িত্ব নিতে পারছিলেন না সন্তানের । তাই অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ।
আরও পড়ুন: নেই সদ্যজাতকে বড় করে তোলার ক্ষমতা, দম্পতির কাছে 8 দিনের শিশুকে দান করলেন অসহায় মা
উল্লেখ্য, গত 22 সেপ্টেম্বর চুঁচুড়া জেলা হাসপাতালে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন ওই তরুণী ৷ গত 27 তারিখ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি । তারপরেই তিনি কোলের সন্তানকে দান করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ওই সদ্যজাতকে তুলে দেন চ্যাটার্জি বাগান এলাকার এক দম্পতির হাতে। একটি একশো টাকার কোর্ট পেপারে লিখে ওই শিশুটিকে ভরণপোষণের জন্য ওই দম্পতির কাছে দিয়ে দেওয়া হয় ৷ ওই দম্পতিও জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়ম না-জেনেও সম্পূর্ণ মানবিক কারণে ওই শিশুটিকে কোর্ট পেপারে লিখে দত্তক নিয়েছিলেন ৷ কোনও অসৎ উদ্দেশ্য তাঁদের ছিল না ৷ কোনও টাকাপয়সা লেনদেনও হয়নি । শনিবার এই খবর পেয়েই দম্পতির বাড়িতে ছুটে যান কোদালিয়া 2 গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান দেবাশিস চক্রবর্তী । তিনি ওই দম্পতিকে বোঝান শিশু গ্রহণের এই পদ্ধতি অবৈধ । সঠিকভাবে শিশু গ্রহণের সরকারি কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে । এরপর পুলিশ ও মহকুমাশাসকের কানে খবরটি আসতেই এদিন পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে ।