মানকুণ্ডু (হুগলি), 24 সেপ্টেম্বর : 400 বছর ধরে হুগলির মানকুণ্ডুর খাঁ পরিবারে পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা ৷ তবে, বাঙালির চিরপরিচিত সপরিবারের দেবী দুর্গা নন ৷ সেখানে পূজিত হন অষ্টধাতুর দেবী দুর্গা ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের সময় থেকে খাঁ’দের জমিদার বাড়িতে এই অষ্টধাতুর দেবী ‘জয়দুর্গা রূপে পূজিত হন ৷ কথিত আছে মানকুণ্ডুর বড় পুকুর থেকে দেবীর এই মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল ৷ কিন্তু, সেই সময় খাঁ’দের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না, যে তাঁরা জাঁকজমক করে মায়ের পুজো করবেন ৷ বলা হয় দেবী নিজে খাঁ বাড়ির কোনও এক সদস্যকে স্বপ্নাদেশ দেন ৷ সেখানে দেবী নির্দেশ দেন, চাল এবং বাতাসা দিয়ে পুজো করতে ৷
সেই সময় দিল্লির মসনদে ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর ৷ যাঁকে বাবরের পর মুঘলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানা হয় ৷ সেই সময় ওই অঞ্চলে আকবরের প্রধান সেনাপতি মান সিংয়ের সেনা ছাউনি ছিল ৷ বলা হয়, মান সিংয়ের নাম থেকেই হুগলির ওই অঞ্চলের নাম হয় মানকুণ্ডু ৷ সেই সময় খাঁ’দের পদবি ছিল সাহা ৷ তাঁরা সেনা ছাউনিতে রেশন সহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করতেন ৷ সাহাদের উপর খুশি হয়ে মান সিং সম্রাট আকবরের কাছে দরবার করে তাঁদের খাঁ উপাধি পাইয়ে দেন ৷ সেই থেকেই সাহা তথা খাঁ’দের প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে ৷ নুন, সার, সোরা ও রেশম কাপড়ের ব্যবসা ছিল খাঁ’দের ৷ সেই ব্যবসাই ক্রমশ বাড়তে বাড়তে খাঁ’দের জমিদারি তৈরি হয় ৷
তখনই ঠাকুর দালান তৈরি করে খাঁ পরিবার ৷ সারা বছর ধরে অষ্টধাতুর ওই মূর্তির নিত্য পুজো শুরু হয় জমিদার বাড়িতে ৷ মহাষষ্ঠীর দিন মা দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি ঠাকুর দালানের অস্থায়ী মণ্ডপে নামিয়ে আনা হয় ৷ 12 ইঞ্চি অর্থাৎ 1 ফুটের এই দুর্গা মূর্তিতে, মা দুর্গা ছাড়াও রয়েছেন নরসিংহ এবং মহিষাসুর ৷ যাঁর নাম ‘জয় দুর্গা’ ৷ এখানে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক এবং সরস্বতী মূর্তি নেই এবং তাঁদের পুজোও হয় না ৷ এই পুজোতে কোনও বলি প্রথাও নেই ৷ অষ্টমীর দিন দুই মণ সেদ্ধ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয় দেবীকে ৷ সন্ধি পুজোর সময় দেবীর সামনে বাড়ির 10 থেকে 15 জন মহিলা সারি বদ্ধভাবে বসে ধুনো পড়ান ৷ জমিদারি আমলে সন্ধি পুজোর সময় কামান ও বন্দুক গুলি বর্ষণ করে পুজো শুরু হতো ৷ কিন্তু, স্বাধীন ভারতে সে সব আজ নেই ৷
আরও পড়ুন : London Durga Puja : ফের মিলছে প্রবাসের বরাত, ছন্দে ফিরছে কুমোরটুলি
দশমীর বিসর্জনের পর মা দুর্গার মূর্তিকে আবার উপরে রুপোর সিংহাসনে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয় ৷ খাঁ’দের জমিদারিতে 400 বছর ধরে একটি রীতি মেনে আসা হচ্ছে ৷ যেখানে দশমীতে বিসর্জনের সময় পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্করা সকলে সিদ্ধি পান করেন ৷ পুজোর চারটে দিন দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় থাকা পরিবারের সদস্যরা মানকুন্ডু খাঁ বাড়িতে আসেন ৷ জমিদারির সেই জৌলুস না থাকলেও আভিজাত্য বজায় রেখেছেন পরিবারের বয়স্করা ৷ জমিদারি চলে গেলেও দেবোত্তর সম্পত্তি’র আয় থেকেই এখনও পুজো হয়ে আসছে ৷ দুর্গা পুজো ছাড়াও রাস উৎসব সহ একাধিক পুজো হয় এই খাঁ পরিবারে ৷