শ্রীরামপুর, 22 জুলাই : কাপড়ের উপর নানা ধরনের নকশা ৷ নানা ফুলে ছবিতে শিল্পকে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছিল শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিং । কিন্তু, লকডাউনে বেহাল দশা প্রায় 200 বছরের প্রাচীন এই শিল্পের ৷ সমস্যায় শিল্পী ও ব্যবসায়ীরাও । সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, তৈরি হবে স্লিক হাব ৷ কিন্তু জমিজটের কারণে তাও থমকে ৷ এই পরিস্থিতিতেও সরকারের তরফে তেমন কোনও সদিচ্ছা দেখানো হয়নি বলে অভিযোগ ৷ সবমিলিয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রীরামপুরের সিল্ক প্রিন্টিং ৷
শ্রীরামপুরের তালপুকুর, তারাপুকুর, বৈদ্যবাটি পৌরসভার চাতরা মান্নাপাড়া, নওগাঁ, মরাদান, বৌবাজার, শেওড়াফুলি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সিল্ক প্রিন্টিংয়ের কারখানা রয়েছে । ছোটো-বড় মিলিয়ে প্রায় 250টি কারখানা ৷ কাজ করেন 15 হাজার শ্রমিক ৷ প্রিন্টিংয়ের এই কাজের জন্য 200-300 টাকা মজুরি পান তাঁরা ।
কীভাবে কাজ হয় সিল্ক প্রিন্টিংয়ের
এই স্লিক প্রিন্টিং করাখানায় মূলত পাঁচ ধরনের প্রিন্টিংয়ের কাজ হয় ৷ ব্লক প্রিন্টিং, হ্যান্ড প্রিন্টিং ,স্ক্রিন প্রিন্টিং ,বাটিক প্রিন্টিং ও ডিজিটাল প্রিন্টিং ৷ স্লিক প্রিন্টিংয়ের কাজে মজুরি 80-500 টাকা । কেউ কেউ আবার 400-800 টাকাও পান । দেশের নানা রাজ্য ছাড়াও অ্যামেরিকা ,ফ্রান্স,ইট্যালি ,লন্ডন ও অস্ট্রেলিয়া সহ নানা দেশ থেকে কাজের অর্ডার আসে ৷ প্রথমে সিল্ক ,তসর ,মটকা ও সুতির শাড়ির উপর হাতে ও কম্পিউটারে আঁকা হয় । নানা ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় । এরপর নকশাগুলিকে রং করা হয় ৷ রং করা হয়ে গেলে, তা পাকা করার জন্য হিট দেওয়া হয় । তৈরি হওয়ার পর সিল্কের ও তসরের এক একটি শাড়ির দাম হয় 800-3000 টাকা পর্যন্ত । সুতি শাড়ি 400-5000 টাকা পর্যন্ত৷ কিন্তু লকডাউন জারি হওয়ায় কারখানাগুলির কাজ বন্ধ হয়ে গেছিল ৷ এখন অল্প শ্রমিক দিয়ে ধীরে ধীরে কয়েকটি কারখানায় কাজ শুরু হচ্ছে ৷ কিন্তু সেই গতি নেই ৷
লকডাউনে ধুঁকছে সিল্ক প্রিন্টিং
কোরোনা সংক্রমণের জেরে দীর্ঘ লকডাউন চলেছে ৷ আনলক শুরু হলেও কনটেইনমেন্ট জ়োনগুলিতে এখনও লকডাউন ৷ ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে সপ্তাহে দু-একদিন করে সম্পূর্ণ লকডাউনও শুরু হতে চলেছে ৷ এই পরিস্থিতিতে শিল্পী, শ্রমিক থেকে ব্যবসায়ী সবাই অনিশ্চয়তায় ৷ কমেছে আয় ৷ কমেছে শ্রমিক সংখ্যাও ৷ এবিষয়ে শিল্পী অতনু রায় বলেন, "লকডাউন আর কোরোনার জেরে আমাদের বাজারে মন্দা । যে হারে আমরা কাজ পেতাম, সে হারে কাজ পাচ্ছি না । 50 শতাংশ কাজ কমে গেছে । দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে এই শিল্পের সঙ্গে আছি । কিন্তু এইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ৷ এখন আর সেভাবে বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না । কাজের সময়ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে ।" সিল্ক প্রিন্টিংয়ের এক শিল্পী ও ব্যবসায়ী সুভাষ দাস বলেন, "টেক্সটাইল শিল্পে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে । দু-একটি রপ্তানি ছাড়া আর কোনও কাজ নেই ৷ স্থানীয় বাজার পুরোটাই বন্ধ ৷ শ্রমিক সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে ৷ অনেককে কাজও দিতে পারছি না । শুনেছিলাম, এখানে স্লিক প্রিন্টিং হবে ৷ কুড়ি বছর ধরে শুনে আসছি । কিন্তু কিছুই হয়নি । শ্রীরামপুর প্রিন্টিংয়ের পীঠস্থান । কিন্তু সমস্ত কাজ গুজরাত,দিল্লি, মহারাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে । আমরা অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি । প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক নতুন নতুন মেশিন এবং প্রযুক্তি এসেছে । কিন্তু আমাদের কাজে তেমন গতি আসেনি । গুজরাতে প্রতিটি কারখানা 24 ঘণ্টা চলছে । আর এখানে কোনও কারখানা তিন মাসের বেশি চলে না । লকডাউনের পর বুঝতে পারছি না, এই শিল্প থাকবে কি থাকবে না ৷"