পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার পাঠ সরকারি কর্মচারির

Sightless Teacher in Hooghly: নিজের দৃষ্টি শক্তি নেই ৷ তবু সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছেন পবিত্র মণ্ডল ৷ দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার জন্য অবিচল এই সরকারি কর্মী ।

sightless government worker
দৃষ্টি জয়ী শিশুদের শিক্ষার পাঠ সরকারি কর্মীর

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 7, 2023, 10:48 PM IST

দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার পাঠ সরকারি কর্মচারির

চুঁচুড়া, 7 ডিসেম্বর:অন্ধকারও হয়ে উঠবে আলো, যদি তুমি শিক্ষার প্রদীপ জ্বালো ৷ এই মন্ত্রকেই জীবনের পাথেয় করে দৃষ্টিহীন শিশুদের জীবনে শিক্ষার আলো জ্বেলে চলেছেন বাঁকুড়ার পবিত্র মণ্ডল ৷ তিনি নিজে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন ছোট বেলায় । মাত্র আড়াই বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায় পবিত্রর । কিন্ত অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে ভর করে চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনা ৷ ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে তিনি একজন সরকারি কর্মচারী । হুগলি জেলাশাসক অফিসে সমাজ কল্যাণ দফতরে কর্মরত 32 বছরের যুবক ৷ তবে এখানেই থেমে থাকেননি পবিত্র । বিকেলে অফিসের কাজ শেষ করেই তিনি বেরিয়ে পড়েন দৃষ্টি জয়ী শিশুদের পড়াশোনার পাঠ দিতে । প্রতিদিন শিশুদের পড়ানোর জন্য পাড়ি দেন দূরদূরান্তের বিভিন্ন জায়গায় ।

পরিবারে আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না । বাবা চাষবাস করতেন । দুই ভাইবোন পবিত্ররা । ছোট থেকে ছেলের কর্নিয়ার সমস্যার জন্য চিকিৎসা করিয়ে কিছু করতে পারেননি বাবা । তাই ছোটবেলা থেকেই দীর্ঘ লড়াই করছেন পবিত্র । তিনি বলেন, "ছোটবেলায় দৃষ্টি হারানোর পর থেকেই কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম । উত্তরপাড়া লুই ব্রেল স্কুলে পড়ে বড় হওয়া । অন্যরা যাতে এই সমস্যার সম্মুখীণ না হয় তাই আমি চাকরি করার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন শিশুকে বাড়িতে গিয়ে পড়াই । রিষড়া, ভদ্রেশ্বর ও বাঁশবেরিয়ায় বেশ কয়েকজন শিশুকে পড়াতে যাই । চোখের অন্ধকার আমার কোনও বাধা হয়নি । পাঁচ বছরের নীচে দৃষ্টিহীন শিশুদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পড়াশোনা করাই । স্কুলের গণ্ডিতে প্রবেশ করার আগেই ব্রেলের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকি আমি তাদের ।" এই কাজে খুশি শিশুদের অভিভাবকরাও ।

তবে শুধু সরকারি চাকরি বা পড়ানো নয়, তার মাঝেও সময় বের করে সংগীত চর্চা করেন পবিত্র মণ্ডল ৷ ভালো তবলা বাজান এই শিক্ষক ৷ সঙ্গে কানে শুনেই করে ফেলেন কীবোর্ডে টাইপও ৷ চালাতে পারেন কম্পিউটারও ৷ আগামিদিনে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া দৃষ্টিহীন শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে পবিত্রর ৷ তিনি বলেন, "আগামিদিনে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছোট শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে । এছাড়াও চাকরির ক্ষেত্রে সেভাবে এই ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য কোচিং নেই । সেটা নিয়েও চিন্তা ভাবনা করছি ৷"

পবিত্রের এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রীও । 2019 সালে শম্পার সঙ্গে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন পবিত্র । শম্পা মণ্ডলও কর্নিয়ার সমস্যার কারণে জন্ম থেকেই একটি চোখে দেখতে পান না। তবে জীবন সংগ্রামে হার মানেনি তাঁরা দু'জনেই । একসঙ্গে বাঁচার পাশাপাশি অন্যদের জীবনে আলো জ্বালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন ৷ 7 ডিসেম্বর কর্নিয়া দিবসে তাঁদের অঙ্গীকার, দৃষ্টিজয়ী শিশুদের ব্রেলের মাধ্যমে পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষিত করা । যাতে ওইসব শিশুরা মনের সমস্ত অন্ধকার কাটিয়ে জীবনে জয়ী হতে পারে ।

আরও পড়ুন:

  1. কর্নিয়া সংগ্রহ করে দৃষ্টি ফেরাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুরজিৎ
  2. অন্য শিশুরা দেখতে পাবে, মৃত সন্তানের কর্নিয়া দান দম্পতির
  3. 'অন্ধজনে দেহো আলো...' দৃষ্টিহীনদের জন্য স্মার্ট টুপি বানিয়ে তাক লাগাল 'খুদে ইঞ্জিনিয়ার'

ABOUT THE AUTHOR

...view details