কোন্নগর, 27 জুলাই : কোন্নগরের একটি কলেজের অধ্যাপককে নিগ্রহের ঘটনায় নতুন তথ্য সামনে এল ৷ অভিযোগ, 22 বছর আগে তিনিও নাকি এক শিক্ষককে নিগ্রহ করেছিলেন ৷ যদিও তা অস্বীকার করে তাঁর বক্তব্য, এটা মিথ্যা অভিযোগ ৷
কয়েকদিন আগে কোন্নগরের হিরালাল কলেজের অধ্যাপক সুব্রত চ্যাটার্জিকে মারধরের অভিযোগ ওঠে TMCP সদস্যদের বিরুদ্ধে । নাম জড়ায় স্থানীয় এক তৃণমূল কাউন্সিলরেরও ৷ নিন্দায় সরব হন অনেকেই । এরপর তাঁকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ কলেজে গিয়ে ক্ষমা চান জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব ৷ কিন্তু সুব্রতবাবু বলেন, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত তিনি স্বস্তি পাবেন না ৷ আর এর মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক পেটানোর অভিযোগ উঠল । অভিযোগ এনেছেন প্রাক্তন শিক্ষক মনসারাম ঘোষ ৷ যিনি আগে কংগ্রেস করলেও এখন তৃণমূল সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত ৷
ঠিক কী অভিযোগ উঠেছে সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে ? ১৯৯৭ সালের 26 জানুয়ারি বাহিরখণ্ড স্টেশনের দিক থেকে বাড়ি ফেরার সময় রামনগর নটু বিহারী পাল চৌধুরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মনসারাম ঘোষ ও তাঁর ছেলেকে মারধর করেন সুব্রতবাবু ও বেশ কয়েকজন CPI(M) সমর্থক ৷ বাইকও ভাঙচুর করা হয় ৷ পরে হাসপাতালে ভরতি করতে হয় মনসারামবাবুকে । এই বিষয়ে তৎকালীন কংগ্রেস কর্মী তথা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দুর্গাপদ ঘোষ বলেন, "সেই সময় কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সমস্ত সরকারি জায়গায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কথা ঘোষণা করে ৷ সেই মতো স্থানীয় কংগ্রেস সমর্থকরা 23 জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে নারায়ণপুর পাঠাগারে পতাকা তুলতে যায় । তখন ওই পাঠাগারের সম্পাদক ছিলেন সুব্রত চ্যাটার্জি ৷ তিনি ও আরও কয়েকজন পতাকা তুলতে বাধা দেন৷ কেন জিজ্ঞাসা করা হলে সুব্রত বলেন, নেতাজি কে? আমরা পতাকা তুলতে দেব না ৷ 26 জানুয়ারি আবার পতাকা তুলতে গেলে সুব্রতর নেতৃত্বে কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করা হয় । জুতোপেটা করা হয় মনসারামবাবুকেও ৷ এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ আমার এক ভাইকেও মারা হয়েছিল ।"
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করে সুব্রতবাবু বলেন, "আমার যা মনে পড়ছে গ্রামে একটা বিবাদ হয়েছিল । তৎকালীন কংগ্রেস কর্মীরা বলেছিল জাতীয় পতাকা তুলতে দেবে না । সেই সময় কংগ্রেস নেতা অশোক ঘোষ আমার দাদা বাণীব্রত চ্যাটার্জিকে বেধড়ক মারধর করে । হরিপাল হাসপাতালে ভরতি করা হয় তাঁকে । আমি পাঠাগারের সম্পাদক ছিলাম । এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও যোগ ছিল না ৷ এমনকী ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না ৷ আমি অপরাধী ছিলাম কি না তা কাগজপত্র দিয়ে প্রমাণ করুক । " ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন আমরা সঙ্গে ন্যায় বিচার হবে । এটা ন্যায় বিচারের নমুনা । 22 বছরের পুরোনো একটি কেস নতুন করে সাজানো হচ্ছে । তার পুনর্নির্মাণ হচ্ছে ৷ এটাই তৃণমূলের চরিত্র । কলেজে তৃণমূলের কয়েকজন চেষ্টা করেছিল এক ছাত্রীকে দিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনার । পারেনি । তাই পুরোনো একটি গ্রাম্য বিবাদের ঘটনায় আমাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে । তারা সেই ঘটনার কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারবে না । কুৎসা রটানো ছাড়া ওদের কিছু করার নেই । তৃণমূল যদি মনে করে রাজ্যজুড়ে যে ভাবাবেগ তৈরি হয়েছে, সেটার ড্যামেজ কন্ট্রোল করবে তা কখনও হবে না । মানুষ বিরুদ্ধে যাবে । মিথ্যাপ্রচার কখনও কোনও রাজনৈতিক দলকে লাভ দেয় না । "
সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে যাঁকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে সেই প্রাক্তন শিক্ষক মনসারাম ঘোষ বলেন, "সুব্রত চ্যাটার্জি মিথ্যা কথা বলছেন । যদিও আমি শিক্ষককে মারধরের ঘটনা সমর্থন করি না । এটা সম্পূর্ণ অন্যায় । কিন্তু 26 জানুয়ারি সুব্রতর নেতৃত্বে আমাকে মারা হয়েছিল । এখন মুখ্যমন্ত্রী ওঁকে ফোন করেছেন । তখন কিন্তু আমার কাছে জ্যোতি বসু দুঃখপ্রকাশ করেননি । পরে 12 বছর কেস চলার পর সুব্রতর দাদা এসে ক্ষমা চাইলে কেস তুলে নেওয়া হয় । কিন্তু সুব্রত আজ পর্যন্ত ক্ষমা চাননি । সেই কেসের কাগজপত্র আর আমার কাছে নেই । তবে খোঁজ করলে কাগজপত্র পাওয়া যেতে পারে ৷"
অনেকেই বলছেন, তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করাতেই 22 বছর আগের একটি ঘটনাকে সামনে আনা হয়েছে ৷ তাঁর ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।