চন্দননগর, 18 মে :অর্থাভাবে আটকে বিনা অক্সিজেনে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন ৷ যা কি না, বিশ্বসম্মান এনে দিতে পারে দেশকে ৷ কিন্তু 12 লাখ টাকার জন্য থমকে গিয়েছে তা (Piaylis Everest Expedition is uncertain due to lack of money) ৷ হাতে সময় বেশি নেই ৷ তাই অভিযানের বেস ক্যাম্প থেকে ভিডিয়ো বার্তায় সাহায্যের অনুরোধ বঙ্গকন্যার ৷
পর্বতারোহী পিয়ালী বসাক চন্দননগর কানাইলাল বিদ্যমন্দিরের প্রাথমিক শিক্ষিকা ৷ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া থেকে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি শৃঙ্গজয়ের নেশায় মেতেছেন পিয়ালি ৷ 2021 সালে ভারতের প্রথম নাগরিক হিসেবে বিনা অক্সিজেন সিলিন্ডারে পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয় করেন তিনি ৷ এই সাফল্যের পরই অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন । সেই মতো মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রওনা দেন ৷
আরও পড়ুন :Uttarakhand Disaster : ট্রেকিংয়ে যাওয়ার আগে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দরকার, বললেন পর্বত অভিযাত্রী মলয়
এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে বসে আর্থিক সাহায্যের জন্য দিন গুনছেন এই বাঙালি পর্বতারোহী ৷ সেখান থেকে ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, এভারেস্ট এবং লোৎসে এই দুই উচ্চতম শৃঙ্গকে জয় করতে এসেছি । আগের বছর পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয় করেছি । যেখানে অক্সিজেন নিয়েও বহু মানুষ প্রাণ হারান । সেখানে ভারতের প্রথম নাগরিক হিসেবে আমি অক্সিজেন ছাড়াই আরোহণ করে এই শৃঙ্গ জয় করেছি ৷ আমার অভিযানে এভারেস্ট ও লোৎসে এই দুই শৃঙ্গ মিলিয়ে মোট খরচ 35 লক্ষ টাকা । এখনও পর্যন্ত আমার 12 লক্ষ টাকা বাকি রয়েছে এজেন্সির কাছে । সেই কারণেই এভারেস্টের পারমিট বানানো সম্ভব হচ্ছে না আমার পক্ষে । আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ আপনাদের সহযোগিতায় এই স্বপ্নজয় করব । শৃঙ্গের অধিক উচ্চতায় অক্সিজেন ছাড়া আমার কোনও সমস্যা হয় না । যেখানে 8 হাজার মিটার উচ্চতায় অন্যদের স্যাচুরেশন 50-এর নিচে নেমে যায় সেখানে আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন থাকে 90-এর উপরে ৷ তাই সকলের কাছে কাতর আবেদন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কাছে সাহায্য করুন আমাই ৷ যা পৃথিবীর ইতিহাসে ভারতকে গৌরবান্বিত করবে । ক্রিকেট-সহ অন্যান্য খেলাতে যেমন ভারতের একটা জায়গা রয়েছে । তেমনই পর্বতারোহণকে সেই উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সাহায্য করুন ৷"
আরও পড়ুন :হিমাচল প্রদেশের মাউন্ট ইউনাম জয় মেমারির যুবকের
পিয়ালী এর আগেও পর্বতারোহণের জন্য লোন নিয়েছেন ৷ তা এখনও শোধ করতে পারেননি । বাবা অসুস্থ ৷ সেভাবে পারিবারিক স্বচ্ছলতাও নেই তাঁর । পরিবারে বাড়িটাই একমাত্র সম্বল বলে দাবি মা প্রতিমা বসাকের । বাড়ি ও সোনা বন্ধক দিয়েও লোন নেওয়ার কথা বলেছেন । কিন্তু বর্তমানে তাদের আর্থিক অবস্থা এমনই শোধ করতে না পারলে তাদের মাথার উপর ছাদটাও চলে যাবে । চন্দননগরে বহু মানুষ আর্থিকভাবে সহায়তা করছে পিয়ালীকে । কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয় । পিয়ালীর মা ও পরিবারের দাবি কোনও এজেন্সি বা সংস্থা যদি এগিয়ে আসে তাহলে তার মেয়ের স্বপ্নপূরণ হবে । রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমা বসাক । কিন্তু কোন তরফে এখনও সুরাহার খবর মেলেনি ।
অর্থাভাবে আটকে বিনা অক্সিজেনে এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন আরও পড়ুন :Uttarakhand Disaster: মৃত্যুমিছিল অব্যাহত উত্তরাখণ্ডে, 12 জন পর্বত অভিযাত্রীর দেহ উদ্ধার
চন্দননগরের পর্বতারোহণ সংস্থা গিরিদূতের সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, "আগের বছর অক্সিজেন ছাড়া ধৌলাগিরি জয় করেও সরকারিভাবে কোনওরকম সাহায্য পায়নি পিয়ালি । ওর এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই এ বছর অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখেছে । যেটা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের পর্বতারোহণে অন্য মাত্রা এনে দেবে । রাজ্য থেকে কেন্দ্র, কোনও সংস্থান বাদ নেই যাদের কাছে থেকে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন জানায়নি পিয়ালি । অনেক পর্বতারোহণ সংস্থা, রোটারি ও পাহাড়প্রেমী মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই বাঙালি পর্বতারোহীকে । বেস ক্যাম্পে বসে থাকা পিয়ালি যদি আপাতত 12 লক্ষ টাকা না দিতে পারে তাহলে সবকিছুই বৃথা হয়ে যাবে । তার এই অভিযান পরিত্যক্ত বলে ঘোষিত হবে যা আমাদের দেশ ও রাজ্যের পর্বতারোহণের ক্ষেত্রে চরম লজ্জার হবে ৷ এছাড়াও যে টাকা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে এজেন্সিকে সেটাও বিফলে যাবে । আমরা নেপাল সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম পর্বতারোহণে টাকা যাতে মুকুব করা যায় । এই বছর যেখানে স্বাধীনতার 75 বছরে আমরা রাধানাথ শিকদার ও রাসবিহারী বসুকে স্মরণ করছি । সেখানে পিয়ালির অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়ে আমরাও আশঙ্কিত ।"
আরও পড়ুন :আল্পস পর্বত রাঙল ভারতীয় পতাকায়