হুগলি, 30 মে :অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্ট জয়ী প্রথম ভারতীয় ফু দোরজি । তারপর প্রথম ভারতীয় অসামরিক মহিলা হিসাবে রেকর্ড গড়েছেন চন্দননগরের 31 বছর বয়সী পিয়ালী বসাক (Piyali Basak Conquers Mount Everest)। তিনি অক্সিজেন ছাড়া 8450 মিটার উঠলেও, সাপ্লিমেন্টরি অক্সিজেন নিয়েই এভারেস্ট জয় করেছেন । বরফ, ঝড় এবং উচ্চতা সামলাতে না পেরেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেয় ।
বাঙালি মহিলা হিসাবে উচ্চতম শৃঙ্গ জয়ের রেকর্ড তৈরি করা সত্যি গর্বের । তবে এই রেকর্ড তৈরি করার জেদ আগে থেকেই ছিল পিয়ালীর । ছোটবেলা থেকেই বাবা মার হাত ধরে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া । সেখান থেকে ভালবেসে ফেলা পর্বতারোহণকে । ভালবেসেছিলেন প্রথম এভারেস্ট জয়ী তেনজিং নোরগেকে । সেই টানে কাউকে না জানিয়ে তাঁর নেপালের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন অল্প বয়সেই । পথে থাকা, খাওয়ার জন্য হোটেলের বাসনও মেজেছিলেন পিয়ালী । তবে নোরগের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি ৷ চন্দননগর থেকে খোঁজ পড়ায় তাঁকে ফিরে আসতে হয় । পরে ফের একবার বাবা-মা বোনকে হোটেলে রেখে, তেনজিং নোরগের গ্রামের বাড়ি নেপালের শোলোখুম্বু জেলার ত্সে-ছু গ্রামে চলে যান পিয়ালী (Not only Conquer Mount Everest Piyali Basak visits Tenzing Norgay House)। দীর্ঘ পথ মাত্র তিনদিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ করে ফেলেন তিনি ।
অক্সিজেন ছাড়া 8450 মিটার তারপর সাপ্লিমেন্টটারী অক্সিজেন নিয়েই এভারেস্ট জয় করেন প্রথম দু'বার এভারেস্ট জয়ের জন্য গেলেও, চন্দননগরে পর্বতারোহণে পাঁচটি ক্লাব রয়েছে তার মধ্যে হুগলি জেলার ইউথ হোস্টেল অ্যাসোসিয়েশনের অফ ইন্ডিয়া, গিরিদুত ও চন্দননগর মাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত পিয়ালী । চন্দননগরে সিএমএ-এর আর্টিফিশিয়াল ওয়াল রয়েছে মেরীর মাঠে । সপ্তাহে দুদিন সেখানে সকলকে প্রশিক্ষণ দেন তিনি । পিয়ালীর বোন তমালীও পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত । আগামিদিনে পিয়ালীকে দেখে অনেক ছেলে মেয়ে উৎসাহী হবে চন্দননগর তথা বাংলা থেকে বলে মনে করছেন সকলে ।
চন্দননগর গিরিদুতের সদস্য স্তিমিত শ্রীমানি বলেন, "পিয়ালী নিম্নমধ্যবিত্ত অবস্থা থেকে উঠে এসেছে । পর্বতারোহণ সংস্থা ইউথ হোস্টেল অ্যাসোসিয়েশনের আড্ডায় আসত । সকলের সঙ্গে দেখা করত । আর্থিক দুরাবস্থার কারণে পিয়ালীর পর্বতারোহণ সঠিক জায়গা পাচ্ছিল না । সেই সময় একজন পর্বত প্রেমী অপূর্ব চক্রবর্তী তাঁর পাশে দাঁড়ায় । আর্থিকভাবে সব দিক থেকে সাহায্য করে । সম্ভবত 2006 সাল নাগাদ তেনজিং নোরগের বাড়ি যাবে বলে কালীপোখরিতে একটি হোটেলে বাসন মাজার কাজ করেছেন পিয়ালী । সেখানে থাকা ও খাওয়ার জন্য তিনি এই কাজ করেন । ধরা পরার পর ফিরে আসতে বাধ্য হয় । তাঁর জেদ এতটাই বেশি ছিল, যেটা করব মনে করেছে সেটা করেছেন । নেপালে যখন যেতে শুরু করল পিয়ালী প্রথম মানাসুলুতে গিয়ে বুঝতে পারেন বিনা অক্সিজেনে উঠতে পারবেন । আগে যে এভারেস্ট অভিযানে গিয়েছিল, তা প্রমাণ হয়ে যায় । পিয়ালী 8450 মিটার পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়া গেছে সেটা রেকর্ড । পিয়ালীর মস্ত বড় গুন সকলকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা । সেই সঙ্গে পিয়ালীর ক্ষোভ তিনি এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পায়নি । অনেক পর্বতারোহণ সংস্থা এগিয়ে এসেছে, চন্দননগর রোটারি ও বড় ভূমিকা পালন করেছে । চন্দননগরের বাইরের মানুষ ও সমর্থন করেছে পিয়ালীকে ।"
চন্দননগরে এই মাঠে প্রশিক্ষণ দেন পিয়ালী বসাক আরও পড়ুন :Piyali Basak Conquers Mount Everest: টাকার 'পাহাড়ে' আটকে পিয়ালীর এভারেস্ট জয়ের স্বীকৃতি
পর্বত প্রেমী প্রাক্তন ব্যাংক কর্মী অপূর্ব চক্রবর্তী বলেন, "13 বছর বয়সে পিয়ালী চন্দননগরের পর্বতারোহণ সংস্থা ইয়ুথ হোস্টেল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হয় । অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পের মাধ্যমেই তার পথ চলা শুরু । মেয়েটার মধ্যে অসম্ভব জেদ আছে । সেই জন্যেই আজ তাঁর এই সাফল্য । একটা ভাঙা সাইকেল নিয়ে ঘুরত এখানে । সেইসঙ্গে আমার সবসময়ই উপদেশ নিত । ওর বডি ফিট রাখার জন্য সাইক্লিং, ক্যারাটে, সুইমিং সবরকম করেছে । আমি যখন যেমন পেরেছি সাহায্য করেছি । আগেও করব । পিয়ালী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রথমে ট্রেনি হিসাবে, তারপরে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছে । আর্থিক সমস্যাটা আশা করছি সমস্যা হবে না । সরকারিভাবেও সাহায্য পেতে পারে পিয়ালী । আমরা সব দিক থেকেই নজর রাখছি ।"
ইচ্ছাশক্তির জোরে মা বাবাকে না বলেই তেনজিং নোরগের বাড়ি যান পিয়ালী বসাক