পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : Aug 9, 2020, 3:05 AM IST

Updated : Aug 9, 2020, 11:53 PM IST

ETV Bharat / state

কোঝিকোড় বিমান দুর্ঘটনা : নিজে আহত হয়েও অনেককে বাঁচিয়েছেন কোন্নগরের অভীক

নিজে আহত হয়েছিলেন ৷ তবুও কর্তব্যে অবিচল ছিলেন কেবিন ক্রু'র দায়িত্বে থাকা অভীক বিশ্বাস ৷ তাঁকে নিয়ে গর্বিত কোন্নগর ৷

Avik
অভীক বিশ্বাস

কোন্নগর, 9 অগাস্ট : কোঝিকোড়ে বিমান দুঘর্টনা ৷ রানওয়েতে দু'টুকরো হয়ে পড়ে আছে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বোয়িং 737 বিমানটি ৷ ভেসে আসছে চিৎকার, স্বজন হারানোর কান্না, অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ৷ ছুটোছুটি করছে পুলিশ, হাসপাতালের কর্মী ৷ বাড়ছে মৃতের সংখ্যা ৷ রক্তাক্ত যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতাল ৷ টিভির খবরে এসব দেখছিলেন অজয় ও ভারতী বিশ্বাস ৷ দুরু দুরু বুকে ওই ছোট্ট স্ক্রিনে এত ভিড়েও খুঁজছিলেন নিজের ছেলেকে ৷ যদি একবার দেখা যায়, এই আশায় ৷

হাতের কাছেই ফোনটি রেখেছিলেন অজয়বাবু ৷ বারবার দেখছিলেন মোবাইলের স্ক্রিনে ৷ এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা ৷ প্রায় দুঘণ্টা পর বেজে উঠল মোবাইল ফোনটা ৷ স্ক্রিনে দেখলেন ছেলের নাম ৷ রিসিভ করার পর ওপারের কণ্ঠ ''চিন্তা কোরো না ৷ আমি ভালো আছি ৷'' এবারে যেন প্রাণ ফিরে পেলেন ওই দম্পতি ৷ ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রণাম করলেন ভারতীদেবী ৷ আজ তিনি বললেন, ''যেন একটা ঝড় গেল ৷ খুব চিন্তায় ছিলাম ৷ আমার ছেলে অভীক তো ওই বিমানেই কেবিন ক্রু'র দায়িত্বে ছিল ৷ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বুকটা ধড়াস করে উঠেছিল ৷ ও ঠিক আছে তো ? কিছু হয়নি তো ওর ? এমন সব আশঙ্কায় বুকটা কাঁপছিল ৷ মায়ের মন তো ৷ ফোনটা আসার পর নিশ্চিন্ত হই ৷ ''

অভীকের কাজের জন্য গর্বিত তাঁর বাবা ও মা

হুগলির কোন্নগরের অভীক বিশ্বাস ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটিতে থাকা একমাত্র বাঙালি ৷ যিনি এখন বিপদ থেকে মুক্ত ৷

ছোটোবেলা থেকেই অভীকের স্বপ্ন পাইলট হওয়ার । সেই স্বপ্ন নিয়েই এই পেশায় আসা ৷ বছর তিনেক আগে এক বেসরকারি বিমান সংস্থায় কেবিন ক্রু হিসেবে কাজে যোগ দেন । মাসখানেক আগে কোন্নগরের বাড়িতে এসেছিলেন ৷ বাড়ি থেকে ফিরেই কোঝিকোড়ে এয়ার ইন্ডিয়াতে কাজে যোগ । একমাস ধরে বন্দে ভারত মিশনে কাজ করছেন । দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া অভীকের লক্ষ্য পাইলট হওয়ার ৷ কিন্তু, অর্থাভাবে তা হয়ে ওঠেনি ৷ আপাতত কেবিন ক্রু হিসেবে তিনি কর্মরত ৷

তবে এখনও পাইলট হতে না পারলেও কেবিন ক্রু হিসেবে যে কর্তব্যপরায়ণতার পরিচয় অভীক দিয়েছেন তা প্রশংসা কুড়িয়েছে ৷ বিমানটি ভেঙে দুটুকরো হয়ে যাওয়ার জেরে বাকি যাত্রীদের মতো আহত হন অভীকও ৷ কিন্তু, অভীক সেই অবস্থাতেই সহযাত্রীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ৷ অনেককে প্রাণে বাঁচান ৷ অভীকের বাবা অজয়বাবুর কথায়, ''আমার ছেলে আহত হয় ৷ কিন্তু, ও কর্তব্য করে গেছে ৷'' অজয়বাবু যখন এই কথাগুলো বলছেন তখন মা ভারতীদেবী পাশ থেকে বললেন, ''ও বিমানের ভিতর থেকে অনেককে উদ্ধার করেছে ৷ যাত্রীদের নিরাপদে বাইরে এনেছে ৷ প্রাণে বাঁচিয়েছে ৷'' অজয়বাবু বলে চলেন, ''ও অনেককে নিরাপদে বাইরে এনেছে ৷ তবে ওটা তো ওর কাজ ৷ অন্য কেউ থাকলে সেও করত ৷''

অভীকের জন্য গর্বিত তাঁর বাবা-মা

ভারতীদেবী জানান, ''যে পাইলট মারা গেছেন তাঁর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল অভীকের ৷ দু'জনে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছিল ৷ খুব খারাপ লাগছে ৷ এতজন মারা গেল ৷''

অভীকের এই কাজকে কৃতিত্ব হিসেবেই দেখছে প্রতিবেশীরা ৷ তারা অভীকের জন্য গর্বিত ৷ কোন্নগর পৌরসভার পৌরপ্রশাসক বাপ্পাদিত্য চ্যাটার্জি যেমন বললেন, ''বাঙালির মাথা উঁচু করেছে আমাদের অভীক ৷ ও যে কাজ করেছে তা আমাদের গর্বিত করেছে ৷ ও জীবনে আরও বড় হোক ৷ আমরা ওর পরিবারের পাশে আছি ৷''

এই বিমানের কেবিন ক্রুর দায়িত্বে ছিলেন অভীক বিশ্বাস

তবে গতকালের দুর্ঘটনার ঘোর এখন কাটেনি ভারতীদেবী ও অজয়বাবুর ৷ তাঁরা দু'জনেই চাইছেন কিছুদিনের জন্য হলেও অভীক বাড়ি আসুক ৷ ভারতীদেবী ধরা গলায় বললেন, ''আমার ছেলে অনেককে বাঁচিয়েছে ৷ আমি গর্বিত ৷ ও ভালো আছে ৷ খবরটা শোনার পর ঠাকুরের কাছে পুজো দিয়েছি ৷ প্রার্থনা করেছি, আমার ছেলে যেন ভালো থাকে ৷ সুস্থ থাকে ৷ সবার ভালো হোক ৷ এমন দুর্ঘটনা যেন আর কোনওদিন না হয় ৷''

Last Updated : Aug 9, 2020, 11:53 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details