চুঁচুড়া, 25 অগাস্ট : কাজ নেই । সংসারে অনটন । মায়ের ওষুধ, মেয়ের পড়াশোনা- সবই চালাতে হয় । কী করে কী হবে ? চিন্তায় চিন্তায় ঘুম হত না বিশ্বজিতের । বাড়িতে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারত না । যখন যা লেগেছে, যখন যা চেয়েছে সব এনে দিয়েছে । কীভাবে ? একমাত্র ওই জানে । আর পারেনি । পারেনি মুখ ফুটে বলতে, "আমি নিঃস্ব ।" মেয়েঅন্ত প্রাণ হয়েও অভাবের চোটে বলতে বাধ্য হয়েছে, "রাক্ষুসী আমায় খাবি !" মেয়ের দোষ ? মাকে খাবার চেয়েছিল । যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল বিশ্বজিৎকে । অবশেষে মৃত্যুর পথই বাছল সে ।
বিশ্বজিৎ দে । বাড়ি চুঁচুড়ার বুড়োশিবতলায় । মা, স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে বাস । কাজ করত চন্দননগর গোন্দলপাড়া জুটমিলে । সংসার চলছিল ভালোই । মেয়ে কোয়েলকে ভরতি করিয়েছিল বড় স্কুলে । গত বছর হঠাৎই নেমে আসে অন্ধকার । মে মাসে বন্ধ হয়ে যায় গোন্দলপাড়া জুটমিল । কাজ নেই, টাকাকড়িও শেষ । কী করে কী হবে ? ভেবে ভেবেও কুলকিনারা হয়নি । শেষপর্যন্ত কুলির কাজ করতে বাধ্য হয় । মাস দুয়েক করেছিল । শরীর দেয়নি । কোমর ব্যথায় কাতর হয়ে যেতে হয়েছিল ডাক্তারের কাছে ।
মায়ের চিকিৎসা চলছে । মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে । বাড়ছে পড়ার খরচ । সব চিন্তা মাথায় । এই অবস্থায় বুধবার মেয়েকে রেগে গিয়ে 'ওই' কথাটা বলে ফেলে বিশ্বজিৎ । কোয়েল মাকে খাবার চেয়েছিল । শুনে বিশ্বজিৎ বলে, "রাক্ষুসী আমায় খাবি ।" বলেই কেঁদে ফেলেছিল । কেঁদেছিল মেয়েকে জড়িয়ে ধরে । এরপর কেটে যায় দু'দিন । মনমরা ছিল । মেয়েকে দেখলেই নিচু করে নিচ্ছিল মুখ ।