পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

"আমায় খাবি রাক্ষুসী", মেয়েকে অপমানের পরই আত্মঘাতী ব্যক্তি !

মায়ের চিকিৎসা চলছে । মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে । বাড়ছে পড়ার খরচ । সব চিন্তা মাথায় । টাকা জোগাতে না পেরে শেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল বিশ্বজিৎ দে ।

ছবিটি প্রতীকী

By

Published : Aug 25, 2019, 3:36 PM IST

Updated : Aug 25, 2019, 5:07 PM IST

চুঁচুড়া, 25 অগাস্ট : কাজ নেই । সংসারে অনটন । মায়ের ওষুধ, মেয়ের পড়াশোনা- সবই চালাতে হয় । কী করে কী হবে ? চিন্তায় চিন্তায় ঘুম হত না বিশ্বজিতের । বাড়িতে মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারত না । যখন যা লেগেছে, যখন যা চেয়েছে সব এনে দিয়েছে । কীভাবে ? একমাত্র ওই জানে । আর পারেনি । পারেনি মুখ ফুটে বলতে, "আমি নিঃস্ব ।" মেয়েঅন্ত প্রাণ হয়েও অভাবের চোটে বলতে বাধ্য হয়েছে, "রাক্ষুসী আমায় খাবি !" মেয়ের দোষ ? মাকে খাবার চেয়েছিল । যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল বিশ্বজিৎকে । অবশেষে মৃত্যুর পথই বাছল সে ।

বিশ্বজিৎ দে । বাড়ি চুঁচুড়ার বুড়োশিবতলায় । মা, স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে বাস । কাজ করত চন্দননগর গোন্দলপাড়া জুটমিলে । সংসার চলছিল ভালোই । মেয়ে কোয়েলকে ভরতি করিয়েছিল বড় স্কুলে । গত বছর হঠাৎই নেমে আসে অন্ধকার । মে মাসে বন্ধ হয়ে যায় গোন্দলপাড়া জুটমিল । কাজ নেই, টাকাকড়িও শেষ । কী করে কী হবে ? ভেবে ভেবেও কুলকিনারা হয়নি । শেষপর্যন্ত কুলির কাজ করতে বাধ্য হয় । মাস দুয়েক করেছিল । শরীর দেয়নি । কোমর ব্যথায় কাতর হয়ে যেতে হয়েছিল ডাক্তারের কাছে ।

মৃতের স্ত্রীর বক্তব্য

মায়ের চিকিৎসা চলছে । মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে । বাড়ছে পড়ার খরচ । সব চিন্তা মাথায় । এই অবস্থায় বুধবার মেয়েকে রেগে গিয়ে 'ওই' কথাটা বলে ফেলে বিশ্বজিৎ । কোয়েল মাকে খাবার চেয়েছিল । শুনে বিশ্বজিৎ বলে, "রাক্ষুসী আমায় খাবি ।" বলেই কেঁদে ফেলেছিল । কেঁদেছিল মেয়েকে জড়িয়ে ধরে । এরপর কেটে যায় দু'দিন । মনমরা ছিল । মেয়েকে দেখলেই নিচু করে নিচ্ছিল মুখ ।

শুক্রবার ছিল জন্মাষ্টমী । স্ত্রী, মেয়ে, মাকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেছিল বিশ্বজিৎ । বেশিদূর নয় । চন্দননগরের বিবিরহাট । সেখানে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে । পরিবেশনও করে । রাতে বাড়ি আসে । সেদিন ওবাড়িতেই ছিল বাকিরা । পরদিন দুপুরে ফের যাওয়ার কথা ছিল বিশ্বজিতের । যায়নি । 10-12 বার ফোন আসে । কেউ ধরেনি । খারাপ চিন্তাটা মাথায় এসেছিল স্ত্রীর । মেয়েকে নিয়ে চলে আসে বাড়িতে । দরজা ধাক্কা দেয় । সাড়া মেলেনি । বছর 12-র কোয়েল বাধ্য হয়ে পাল্লা ভাঙে । চোখের সামনে তখন অন্ধকার । ফ্যানে ঝুলছে বাবা ।

কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে ছুটে যায় কোয়েল । বলে ওঠে, "মা, মা, বাবা আর নেই ।" খবর যায় চুঁচুড়া থানায় । পুলিশ আসে । মৃতদেহ উদ্ধার করে ইমামবাড়া হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ।

আজ সকালেও মাকে জড়িয়ে কেঁদে চলেছে কোয়েল । বারবার একই কথা, "মা, আমি খেতে চেয়েছিলাম বলেই কি বাবা চলে গেল...?"

Last Updated : Aug 25, 2019, 5:07 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details