চন্দননগর, 28 মে : জামাইষষ্ঠীতে জামাই ঠকাতে আবিষ্কার হয়েছিল বিখ্যাত জলভরা সন্দেশ ৷ চন্দননগরের সূর্য মোদক জমিদার বাড়ির গিন্নীদের আবদারে তৈরি করেছিলেন জলভরা ৷ আজও তার সমান জনপ্রিয়তা ৷ তবে প্রতি বছরের তুলনায় এবারের ছবিটা একটু অন্যরকম ৷ কোরোনা ভাইরাস ও লকডাউনের জেরে অনেকে জামাইষষ্ঠী পালন করতে পারছেন না ৷ তাই জলভরা বা অন্যান্য মিষ্টির চাহিদা কমেছে ৷
হুগলি জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস ৷ তা সে স্থাপত্য-ভাস্কর্য হোক কিংবা মিষ্টি তৈরি ৷ প্রায় দেড়শো বছর আগে চন্দননগরের সূর্য মোদক জলভরা সন্দেশ বানিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন বলা চলে ৷ জামাইষষ্ঠী বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের অন্যতম অঙ্গ ৷ এমনিতে সারা বছর জামাই আদরে খামতি রাখেন না শাশুড়িরা ৷ কিন্তু জামাইষষ্ঠীর দিনটিতে মেয়ে-জামাই যখন বাড়িতে আসেন, তখন থাকে বাড়তি আয়োজন ৷ সকাল থেকে নানা ব্যঞ্জনের পদ সাজিয়ে বাতাস করতে করতে আদরের জামাইকে মন ভরে খাওয়ান শাশুড়িমা ৷ এহেন জামাই আদরের দিনে একটু ঠাট্টা-মস্করা হবে না তা কি হয়?
সালটা 1290 বঙ্গাব্দ ৷ তেলেনিপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ির গিন্নীরা কর্তাদের কাছে আবদার করলেন, জামাইষষ্ঠীতে এমন মিষ্টি পাতে দিতে হবে, যেন জামাই বোকা বনে যায় ৷ সব শুনে কর্তারা পড়লেন মহা ফাঁপড়ে ৷ জামাইকে বোকা বানানো, তাও আবার মিষ্টিমুখে? এদিকে গিন্নীদের কথাও তো ফেলা যায় না ৷ অবশেষে ডাক পড়ল মিষ্টি প্রস্তুতকারক সূর্য মোদকের ৷ বিষয়টা খুলে বললেন জমিদার বাড়ির কর্তারা ৷ অনেক ভেবে সূর্য মোদক ও তাঁর ছেলে সিদ্ধেশ্বর তৈরি করলেন তালশাঁসের আকারে বিশেষ এক ধরনের মিষ্টি ৷ যথারীতি জামাইষষ্ঠীর দিন পঞ্চব্যঞ্জনের আহার শেষে জামাইয়ের পাতে বিশেষ মিষ্টি দিলেন শাশুড়ি মায়েরা ৷ মিষ্টির বাহার দেখে জামাই তো আহ্লাদে আটখানা ৷ মনের সুখে মিষ্টিতে কামড় দিতেই গোলাপ জল ছিটকে গরদের পাঞ্জাবি ভিজল ৷ জামাই তো লজ্জায় লাল ৷ জমিদারবাড়ির অন্দরে তখন হাসির রোল ৷ আর এভাবেই বাঙালির মিষ্টির তালিকায় যোগ হয় জলভরা সন্দেশের নাম ৷