বর্ধমান, 2 নভেম্বর: জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই হয় চন্দননগর (Chandannagar Jagadhatri Puja) কিংবা কৃষ্ণনগর (Krishnanagar Jagadhatri Puja)। সেই তালিকায় পড়ে না বর্ধমান শহরের নাম। কিন্তু গত দু'এক বছরে সেই ছবিটা কিছুটা হলেও বদলে গিয়েছে। চলতি বছরে বর্ধমান শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা একলাফে বেশ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলছে উদ্বোধন পর্বও। কিন্তু হঠাৎ করে বর্ধমানে কেন জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী।
কথিত রয়েছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। পরে চন্দননগরে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। তবে গত কয়েকবছর আগেও যেখানে বর্ধমান শহরে পারিবারিক পুজো বাদ দিয়ে বারোয়ারী কিংবা ক্লাবের জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা সেই সংখ্যাটা একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে লকডাউনের পরে মানুষ ঘরবন্দি জীবন থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে চেয়েছে।
ফলে গণেশ পুজো, বিশ্বকর্মা পুজোর মতো বেড়েছে জগদ্ধাত্রী পুজোও। থিমের পুজোতে মেতে উঠেছে আট আশি সকলেই। ইতিহাসবিদ থেকে বিভিন্ন মহলের মতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে কম বাজেটের দুর্গাপুজোর সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু চারদিন ধরে পুজো। ফলে অনেক পুজো কমিটি কিংবা বারোয়ারী কমিটির ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা কম বাজেটের কারণে দুর্গাপুজো করে উঠতে পারেনি। ফলে তারা টার্গেট নেয় জগদ্ধাত্রী পুজো করার (Jagadhatri Puja in Bardhaman)।
আরও পড়ুন:মেকানিক্যাল দোদুল্যমান ময়ূরপঙ্খী মণ্ডপ দেখতে ভিড় চন্দননগরে
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে জগদ্ধাত্রীকে পুজোকে ঘিরে সাজো সাজো রব। আর এই পুজোকেও হাতিয়ার করে জনসংযোগ কিছুটা হলেও করে নিতে চায় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। বর্ধমান শহরের নারী মোড়, বড়নীলপুর বটতলা, খোসবাগান, বড়নীলপুর কমলদিঘি পাড়ে আমরা ক'জন ক্লাব, ছোটনীলপুর নবীন সংঘ, লোকো চারতলা-সহ শহরের পুজোর সংখ্যা 25-30 এর বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুজোর উদ্বোধনে এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, মন্ত্রীরা।
চন্দননগর কিংবা কৃষ্ণনগর নয় এবার জগদ্ধাত্রী পুজোয় পাল্লা দিচ্ছে বর্ধমানও অনেক নেতাকেই মান অভিমান ভুলে একই মঞ্চ ভাগ করে নিয়ে গল্প-গুজবে মেতে উঠতে দেখা যায়। এছাড়া পুজো উপলক্ষে কোথাও কোথাও হচ্ছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। বর্ধমান শহরের বাইরে মেমারির নিমো পঞ্চায়েতের মহেশডাঙা ক্যাম্পে জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে গোটা গ্রাম আনন্দে মাতোয়ারা। নবমী থেকে পাঁচ দিন ধরে চলে পুজো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলে বিনা পয়সায় যতখুশি ফুচকা খাওয়ার পর্ব। সেই সঙ্গে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। ফলে দুর্গাপুজো নয় বেশিরভাগ বাড়িতেই মেয়েরা এই সময় বাপের বাড়িতে আসেন। সব মিলিয়ে মিশিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজো অন্য মাত্রা পায়।
আরও পড়ুন:বেলুড় মঠের সারদা পীঠে মহাসমারোহে জগদ্ধাত্রী পুজো
ইতিহাসবিদ ডঃ সর্বজিৎ যশ বলেন, "বর্ধমান শহরে পারিবারিক জগদ্ধাত্রী পুজোর চল বেশ কয়েক বছর ধরেই হয়ে আসছে। গত কয়েক বছর আগে বারোয়ারির জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা হাতে গোনা ছিল। কিন্তু গত দুই এক বছরে সেই সংখ্যাটা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এর পিছনে আমার মনে হয় মানুষের একটা আনন্দ করার ইচ্ছে কাজ করে। আবার বেশ কিছু পাড়া রয়েছে যারা দুর্গাপুজো করতে পারে না। কারণ দুর্গাপুজো সাপেক্ষ হওয়ায় তারা জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে দিয়ে সেই ইচ্ছে পূরণ করতে পারছে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতা এবং সরকারি সাহায্য তাদেরকে পুজো করতে বাড়তি উৎসাহ যোগাচ্ছে।"
বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, "শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর চল সেভাবে ছিল না কিন্তু গত দুই এক বছরে জগদ্ধাত্রী পুজো করার একটা প্রবণতা বাড়ছে ৷ আমি নিজেও বেশ কিছু উদ্বোধন করেছি এখন দুর্গাপুজোর থেকেও কালীপুজোর সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা ৷ আমাদের ভালো লাগছে ছেলেরা একসঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ করে পুজো করছে ৷ পুজোকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু জায়গায় মেলা বসছে, কিছু মানুষের রোজগার বাড়ছে। আমরা মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মানুষের সঙ্গে রয়েছেন।"
হঠাৎ করে বর্ধমানে কেন জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী ? নীলপুরের বটতলা উন্নয়ন সমিতির সেক্রেটারি অনন্ত পাল বলেন, "কয়েক বছর আগে বর্ধমান শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা ৷ এখন পুজোতে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার জন্য জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। সবাই আমরা আনন্দে মেতে উঠেছি।"
আরও পড়ুন:জগদ্ধাত্রী পুজোয় মহিলার বেশে বাল্যবিবাহ রোধের প্রচারে শিক্ষক