ভদ্রেশ্বর, 27 অক্টোবর: সংসারে হাঁড়ির হাল ৷ চারবেলা পাঁচটা মানুষের খাবার জোগাড় করাই দায় ৷ তার উপর রয়েছে পড়াশোনার খরচ ৷ রুজির টানে তাই টোটো চালাচ্ছেন (Toto Driver) হুগলির (Hooghly) ভদ্রেশ্বরের তরুণী তমা দত্ত ৷ তমা শ্রীরামপুর কলেজের বাংলা অনার্সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী (College Student) ৷ তাঁর বাবা যক্ষা রোগে আক্রান্ত ৷ ফলে অসুস্থ শরীরে কাজকর্ম সেভাবে করতে পারেন না ৷ তমার মা গৃহবধূ ৷ ছোট দুই ভাই, বোন স্কুলে পড়ে ৷ ভাইয়ের আবার সামনেই মাধ্যমিক ৷ এই অবস্থায় রোজগারের চেষ্টা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তমার ৷
তমাদের নিজেদের কোনও বাড়ি নেই ৷ চাঁপদানি পৌরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন তাঁরা ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে তমা জানালেন, তিনি কাজ না করলে বাড়ি ভাড়ার টাকা, বাবার ওষুধ, তিন ভাইবোনের পড়াশোনা সব বন্ধ হয়ে যাবে ৷ তাই কলেজে পড়ার ফাঁকেই রোজ টোটো চালান তমা ৷ এমনকী, টোটো নিয়েই কলেজে যান এই তরুণী ৷ তাঁর সহপাঠীরাও তমার টোটোয় চড়ে কলেজে পৌঁছন ৷ বদলে তমাকে ভাড়া দেন তাঁরা ৷
আরও পড়ুন:পরিবর্তন ! হোমের আবাসিক পেল নিজের ঘর
তমা জানান, প্রথমে খাতা, পেন বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি ৷ কিন্তু, লকডাউনে সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় ৷ এরপর ভাই ও বাবাকে সঙ্গে নিয়ে সবজি বিক্রি শুরু করেন ৷ সেই সবজি আনার জন্য পুরনো একটি টোটো কেনেন তমা ৷ তার জন্য মায়ের সামান্য যেটুকু গয়না ছিল, তাও বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে ৷ তমার স্কলারশিপের টাকাও টোটো কিনতে খরচ হয়ে যায় ৷ তবে, সেই টোটোটির এখন হাল খারাপ ৷ মাঝেমধ্যেই অকেজো হয় পড়ে থাকে ৷ তবুও শরীর কিছুটা ভালো থাকলে তমার বাবা সেই পুরনো টোটো সারিয়ে কখনও-সখনও বাজারে ভাড়া খাটেন ৷
বাংলা অনার্সে তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রী তমা ইতিমধ্য়ে তমা একটি নতুন টোটো ভাড়া নিয়েছেন ৷ তাতে, রোজগার বাড়লেও বাড়ি ভাড়া আর টোটো ভাড়ার টাকা মেটাতেই উপার্জনের অনেকটা অংশ খরচ হয়ে যায় ৷ এবার তাই নিজের একটি টোটো কেনার চেষ্টা করছেন তিনি ৷ কিন্তু, তার জন্য টাকা কোথা দিয়ে আসবে, তা জানা নেই এই তরুণীর ৷ তমার স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করবেন ৷ কিন্তু, সেই স্বপ্ন আর পূরণ হওয়ার আশা নেই তাঁর ৷ তমার মা চান মেয়ে শিক্ষিকা হোক ৷ বাংলা অনার্সের ছাত্রী জানালেন, শিক্ষিকা হওয়া তাঁর পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না ৷ কারণ, সংসারের যা হাল, তাতে যেকোনও দিন পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে পারে ৷ এই অনটনের মধ্যেও গাড়ি চালানো শিখছেন তমা ৷ ভবিষ্যতে রোজগার বাড়াতে টোটো বাদে অন্য কোনও গাড়ি চালানোর কথা ভাবছেন তিনি ৷ কিন্তু, মাথায় হাজারো পরিকল্পনা থাকলেও সবটাই অনিশ্চিত ৷ আর সেটাই সবথেকে বড় দুশ্চিন্তা ৷