জিরাট, 23 অক্টোবর: হাজার বছর আগে জিরাটের নাম ছিল মহম্মদপুর । সেখানেই গঙ্গার পাশে ছিল কালী ডাকাতের আস্তানা । ধনসম্পদ লুঠ করাই ছিল এই ডাকাতের মূল লক্ষ্য । ডাকাতি করার জন্যই মা কালীর আরাধনা করত তারা । সেই থেকেই হুগলির জিরাটে অবস্থিত এই দেবী খ্যাত হন ডাকাত কালী নামে(Hooghly Kali Puja Story)৷ পরবর্তীকালে সেই অনুসারে এই জায়গা পরিচিত হয় কালিয়াগড় নামেও । সেই সময় ভয়ে এই এলাকায় আসত না কেউ ।
তবে কালের নিয়মে জঙ্গল ঘেরা এই এলাকা ডাকাত শূন্য হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যায় কালী পুজো(History of Jirat Siddheswari Kali Puja)। এরপর ঘটে আরেক কাহিনী ৷ গঙ্গা নদীর পূর্ব পাড়ে নদিয়া । সেখানে থেকে এক ব্যক্তি গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন । কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান । ভেসে চলে আসেন জিরাটের গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে ৷ কথিত আছে, এরপরই দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন মন্দির প্রতিস্থাপন করে পুজো করার জন্য । মুখোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ এই ব্যক্তি ওখানে বসবাস শুরু করে সিদ্ধেশ্বরী রূপে মা কালীর পুজো শুরু করেন ৷ বংশ পরম্পরায় তাঁরা মুখোপাধ্যায় হলেও মা কালীর পুজোর অধিকারী ছিলেন বলে তাঁরা অধিকারী পদবী গ্রহণ করেন । তবে বর্তমানে সেই অধিকারী পরিবারের মাতুল বংশ চট্টোপাধ্যায় পরিবার পুজো করে আসছেন(Famous and Old Kali Temple in Hooghly)।
আরও পড়ুন :প্রতিমা নির্মাণ থেকে নিরঞ্জন, সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়ের মধ্যে সম্পন্ন হয় রায়গঞ্জের কালীপুজোয়
আবার কেউ বলেন, পুরাণ অনুসারে সতীর দেহাংশের মধ্যে যেখানে হাতের বালা বা বলয় পতিত হয় সেই জায়গাগুলি বলয়োপ পীঠ নামে পরিচিত । এই জায়গাও লোকমুখে বলয়োপ পীঠ নামেও পরিচিত(Jirat Siddheswari Kali Temple)।
জিরাটের সিদ্ধেশ্বরী কালীর ইতিহাস তবে আগে যে গঙ্গার ঘাট ছিল তা অনেক দূরে সরে গিয়েছে আজ ৷ বেড়েছে জনবসতি । মন্দির সংস্কার হয়েছে । আজও সেই অধিকারী পরিবারের বংশধররাই পুজো করে আসছেন । কালীপুজোর দিন ব্যাংকের লকার থেকে গয়না বের করে দেবীকে পড়ানো হয় ৷ এই সময় মন্দিরে থাকে বন্দুকধারীর পাহারা । কিছু বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ হয় । তবে প্রাচীন মূল কাঠামোটি আজও অক্ষত রয়েছে । এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপর দেবীর অধিষ্ঠান । পুজো হয় তন্ত্রমতে । বলি প্রথার প্রচলন রয়েছে শুধুমাত্র মানত পূজার ক্ষেত্রে ৷ সিদ্ধেশ্বরী মায়ের এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে কালভৈরবের টেরাকোটার মন্দির । কালীপুজোর দিন ছাড়াও এখানে নিত্যপুজো হয় ৷ তবে দীপান্বিতা অমাবস্যায় বিশেষভাবে পুজো ও ভোগের আয়োজন করা হয় ।
আরও পড়ুন :বাঁকুড়া থেকে চিরতরে বর্গীদের বিদায় দেন মাঁ-ই-ত কালী
এই বিষয়ে স্থানীয় ইতিহাসবিদ পার্থসারথী মুখোপাধ্যয় বলেন, "এই জায়গা এক সময় কালী ডাকাতের আখরা ছিল । পরবর্তী কালে ডাকাত চলে যাওয়ায় জঙ্গলাকীর্ণ অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়েছিল । কথিত আছে, এক ব্যক্তি সংসারের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন । তবে ভাগ্যের পরিহাসে জিরাটে এই মন্দির সংলগ্ন গঙ্গার চড়ে আটকে বেঁচে যান তিনি । তাঁকে এরপর দেবী পুজো শুরু করার স্বপ্ন দেন ৷ স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পরের দিন তিনি দেখেন পুজোর উপকরণ সাজানো আছে । এরপরই মায়ের আদেশে পুজো শুরু করেন ওই ব্যক্তি । ধীরে ধীরে তৈরি হয় মন্দির ৷ মা সিদ্ধেশ্বরী কালীর জন্য এই কালিয়াগড় অঞ্চলে অন্য কোনও কালী প্রতিমা পূজিত হয় না(Jirat Kaliagarh)৷ অবশ্য ওপার বাংলার কিছু মানুষ এসে পুজো শুরু করলেও যারা আদি বাসিন্দা তাদের বাড়িতে কালী প্রতিমার ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডারও নেই ।
আরও পড়ুন :কালীমূর্তির পায়ে বেল কাঁটা ফুটিয়ে রক্ত বের করে প্রাণের প্রমাণ দেন সাধক কমলাকান্ত