পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

সুড়ঙ্গে প্রথম ক্যামেরা পাঠিয়ে শ্রমিকদের অবস্থা জানিয়েছিলেন তিনিই, সেই দৃশ্যই ইটিভি ভারতে দেখালেন সিঙ্গুরের দৌদীপ

Uttarkashi Tunnel Collapsed: যখন সমস্ত কাজ থমকে গিয়েছিল, সেই সময় সুড়ঙ্গের ভিতরের পরিস্থিতি দেখতে ক্যামেরা পাঠিয়েছিল একটি কোম্পানি ৷ দু'জন অপারেটর সেই ক্যামেরা অপারেট করতেন ৷ তার মধ্যে একজন হুগলির দৌদীপ খাঁড়া ৷ ইটিভি ভারতে শেয়ার করলেন তাঁর সেদিনের অভিজ্ঞতা ৷ ভিডিয়ো কলে দেখালেন সেই ক্যামেরা-সহ যন্ত্র ৷

Etv Bharat
টানেলে ক্যামেরা অপারেট করছেন হুগলির দৌদীপ

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 1, 2023, 7:22 PM IST

সুড়ঙ্গে প্রথম ক্যামেরা পাঠিয়ে শ্রমিকদের অবস্থা জানিয়েছিলেন সিঙ্গুরের দৌদীপ

সিঙ্গুর, 1 ডিসেম্বর: উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পরা কর্মীদের প্রথম ছবি বিশ্বকে দেখিয়েছিল সিঙ্গুরের দৌদীপরা । উদ্ধারকারীদের কাছে সমস্ত পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন কর্মীরা কী পরিস্থিতিতে আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছিল না । সেই সময় ত্রাতা হয়ে যায় একটি বেসরকারি কোম্পানির দুই কর্মী । সিঙ্গুরের দৌদীপ খাঁড়া ও কর্ণাটকের বাল চন্দ্র খিলাড়ি । 41 জন কর্মীর প্রথম ছবি দেখিয়েছিলেন তাঁরা । সেই ছবি দেখে উদ্ধারকারী দল থেকে শ্রমিকদের পরিবার সকলেই স্বস্তি পায় । তারপরই জোরকদমে কাজ শুরু হয় । যতক্ষণ না উদ্ধারকার্য শেষ হয়েছে ক্যামেরার মনিটারে চোখ রেখেছিল দৌদীপরা ।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলানো থেকে শুরু করে 41জন কর্মীকে মনে সাহস জোগানো সবকিছুই তাদের সাহায্যে হচ্ছিল । 500 জন উদ্ধারকারী দলের একটা অংশ হতে পেরে খুশি দৌদীপরা । সুযোগ পেলে আগামী দিনেও এই ধরনের কাজ করতে চায় তারা । ছেলের এই সাফল্যে খুশি দৌদীপের বাবা-মা । প্রথমে উদ্ধারের কাজে ডাক পাওয়ার কথা শুনে ভয় হলেও আশীর্বাদ করেছিলেন মা । তিনি চান আগামিদিনে বড় আরও হোক ছেলে ।

সিঙ্গুরের মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে দৌদীপ খাঁড়া । বাবা দীনেশ চন্দ্র খাঁড়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী । মা সবিতা খাঁড়া গৃহবধূ । ছোটবেলায় পড়াশোনা সিঙ্গুর থেকেই । পরে হাওড়ার একটি বেসরকারি কলেজে এম.টেক নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি । বর্তমানে কর্ণাটকে বেলগাঁমে নির্মাণ কাজের পাইপলাইন তৈরিতে কর্মরত । উত্তরকাশীতে আটকে পড়া শ্রমিকদের কী অবস্থা তা জানতে ও নজরদারি করতে একটি বেসরকারি কোম্পানির ডাক পড়ে ৷ সেই কোম্পানির তরফে বাল চন্দ্র ও দৌদীপকে পাঠানো হয় । সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকরা কীভাবে রয়েছে তা দেখার জন্য পাইপের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয় একটি আমেরিকান কোম্পানির 'ফ্লেক্সি প্রো ক্যামেরা'।

দৌদীপের মুখ থেকে সেই অভিজ্ঞতা শুনেছেন বাবা দীনেশ চন্দ্র খাঁড়া । তাঁর কথায়, "উত্তরাখণ্ড প্রশাসন দেরাদুনে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ছেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় । তারপর শুরু হয় কাজ ৷ যে পাইপের মধ্যে দিয়ে খাবার পৌঁছত তার মধ্যে দিয়েই ক্যামেরা পৌঁছে দিয়েছিল ছেলে ও তার বন্ধু বাল চন্দ্র খিলাড়ি । যদিও প্রথম দিন ক্যামেরাটি 12 মিটার পৌঁছে আটকে যায় । ফের শুরু হয় উৎকণ্ঠা । পরে দমকল পাইপের মধ্যে থাকা পলি সরিয়ে দিতেই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যায় ক্যামেরা । শ্রমিকরা কী অবস্থায় রয়েছে তা প্রতিদিন চারবার করে দেখাতে হত ক্যামেরার মাধ্যমে । এতে শ্রমিকদের পরিবার যেমন আনন্দিত হয়েছে তেমনি আমারও গর্বে বুক ফুলে উঠেছে ।"

মা সবিতা দেবী বলেন, "ছেলেকে পড়াশোনা শেখাতে গিয়ে অনেকটা কষ্ট করতে হয়েছে । ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা সবটাই আমাকে করতে হত । ছোটবেলা থেকেই একটু ভীতু ছিল ছেলে । আর আজ সেই ছেলেই সমস্ত ভয় কাটিয়ে যে কাজ করেছে সেটা আমার কাছে যেমন গর্বের তেমনি আনন্দের । যদিও ছেলের এই কাজে আমিও কিছুটা উদ্বেগ ছিলাম । কখন কী ঘটে যায় ৷ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি সবাই যেন ভালো হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে ।"

দৌদীপ বলেন, "20 নভেম্বর 6 ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পৌঁছেছিল । এই মেশিনের সাহায্যেই প্রথম 41 জনের ছবি প্রকাশ্যে আসে । উদ্ধারকারী দলের একটা অংশ হতে পেরে আমি খুশি । তিনজন বাঙালি-সহ 41 জনকে উদ্ধার করে খুশি । আগামী দিনে যে কোনও উদ্ধারকার্যে যদি আমাদের প্রয়োজন হয় এবং কোম্পানি যদি তাদের অনুমতি দেয় সেটা যত কঠিন কাজই হোক না কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details