সিঙ্গুর, 1 ডিসেম্বর: উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পরা কর্মীদের প্রথম ছবি বিশ্বকে দেখিয়েছিল সিঙ্গুরের দৌদীপরা । উদ্ধারকারীদের কাছে সমস্ত পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন কর্মীরা কী পরিস্থিতিতে আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছিল না । সেই সময় ত্রাতা হয়ে যায় একটি বেসরকারি কোম্পানির দুই কর্মী । সিঙ্গুরের দৌদীপ খাঁড়া ও কর্ণাটকের বাল চন্দ্র খিলাড়ি । 41 জন কর্মীর প্রথম ছবি দেখিয়েছিলেন তাঁরা । সেই ছবি দেখে উদ্ধারকারী দল থেকে শ্রমিকদের পরিবার সকলেই স্বস্তি পায় । তারপরই জোরকদমে কাজ শুরু হয় । যতক্ষণ না উদ্ধারকার্য শেষ হয়েছে ক্যামেরার মনিটারে চোখ রেখেছিল দৌদীপরা ।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলানো থেকে শুরু করে 41জন কর্মীকে মনে সাহস জোগানো সবকিছুই তাদের সাহায্যে হচ্ছিল । 500 জন উদ্ধারকারী দলের একটা অংশ হতে পেরে খুশি দৌদীপরা । সুযোগ পেলে আগামী দিনেও এই ধরনের কাজ করতে চায় তারা । ছেলের এই সাফল্যে খুশি দৌদীপের বাবা-মা । প্রথমে উদ্ধারের কাজে ডাক পাওয়ার কথা শুনে ভয় হলেও আশীর্বাদ করেছিলেন মা । তিনি চান আগামিদিনে বড় আরও হোক ছেলে ।
সিঙ্গুরের মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে দৌদীপ খাঁড়া । বাবা দীনেশ চন্দ্র খাঁড়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী । মা সবিতা খাঁড়া গৃহবধূ । ছোটবেলায় পড়াশোনা সিঙ্গুর থেকেই । পরে হাওড়ার একটি বেসরকারি কলেজে এম.টেক নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি । বর্তমানে কর্ণাটকে বেলগাঁমে নির্মাণ কাজের পাইপলাইন তৈরিতে কর্মরত । উত্তরকাশীতে আটকে পড়া শ্রমিকদের কী অবস্থা তা জানতে ও নজরদারি করতে একটি বেসরকারি কোম্পানির ডাক পড়ে ৷ সেই কোম্পানির তরফে বাল চন্দ্র ও দৌদীপকে পাঠানো হয় । সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকরা কীভাবে রয়েছে তা দেখার জন্য পাইপের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয় একটি আমেরিকান কোম্পানির 'ফ্লেক্সি প্রো ক্যামেরা'।
দৌদীপের মুখ থেকে সেই অভিজ্ঞতা শুনেছেন বাবা দীনেশ চন্দ্র খাঁড়া । তাঁর কথায়, "উত্তরাখণ্ড প্রশাসন দেরাদুনে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ছেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় । তারপর শুরু হয় কাজ ৷ যে পাইপের মধ্যে দিয়ে খাবার পৌঁছত তার মধ্যে দিয়েই ক্যামেরা পৌঁছে দিয়েছিল ছেলে ও তার বন্ধু বাল চন্দ্র খিলাড়ি । যদিও প্রথম দিন ক্যামেরাটি 12 মিটার পৌঁছে আটকে যায় । ফের শুরু হয় উৎকণ্ঠা । পরে দমকল পাইপের মধ্যে থাকা পলি সরিয়ে দিতেই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যায় ক্যামেরা । শ্রমিকরা কী অবস্থায় রয়েছে তা প্রতিদিন চারবার করে দেখাতে হত ক্যামেরার মাধ্যমে । এতে শ্রমিকদের পরিবার যেমন আনন্দিত হয়েছে তেমনি আমারও গর্বে বুক ফুলে উঠেছে ।"
মা সবিতা দেবী বলেন, "ছেলেকে পড়াশোনা শেখাতে গিয়ে অনেকটা কষ্ট করতে হয়েছে । ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা সবটাই আমাকে করতে হত । ছোটবেলা থেকেই একটু ভীতু ছিল ছেলে । আর আজ সেই ছেলেই সমস্ত ভয় কাটিয়ে যে কাজ করেছে সেটা আমার কাছে যেমন গর্বের তেমনি আনন্দের । যদিও ছেলের এই কাজে আমিও কিছুটা উদ্বেগ ছিলাম । কখন কী ঘটে যায় ৷ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি সবাই যেন ভালো হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে ।"
দৌদীপ বলেন, "20 নভেম্বর 6 ইঞ্চি পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পৌঁছেছিল । এই মেশিনের সাহায্যেই প্রথম 41 জনের ছবি প্রকাশ্যে আসে । উদ্ধারকারী দলের একটা অংশ হতে পেরে আমি খুশি । তিনজন বাঙালি-সহ 41 জনকে উদ্ধার করে খুশি । আগামী দিনে যে কোনও উদ্ধারকার্যে যদি আমাদের প্রয়োজন হয় এবং কোম্পানি যদি তাদের অনুমতি দেয় সেটা যত কঠিন কাজই হোক না কেন আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব ।"