হুগলি, 30 সেপ্টেম্বর: যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় হারিয়ে যেতে বসেছে ধনিয়াখালীর তাঁত । আধুনিক ডিজাইন না থাকায় ধনিয়াখালীর তাঁতের কাপড়ের বিক্রি কমেছে (Dhaniakhali Sharee Losing Tradition)। সমবায় চালিত তাঁতগুলি নিয়ে কোনওক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে শিল্পীরা । একে তো টানা 2 বছর করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কোনওক্রমে বাজার ঘুরছিল (Durga Puja 2022) । কিন্তু আর্থিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোপ পড়েছে সুতো ও রঙের দামে । তাঁতিদের এমনিতেই মজুরি কম ছিল কিন্তু এবার সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে উঠেছে । সেই কারণে পরবর্তী প্রজন্ম ও আর তাঁত শিল্পী হিসাবে কাজ করতে চাইছে না । অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে সকলে । সমবায়ের মাধ্যমে সরকার তাঁতের শাড়ি কেনে । সেটাও এখন অনেকটাই কমেছে । সব মিলিয়ে ধনিয়াখালী তাঁতের শাড়ির ঐতিহ্য হারাচ্ছে ।
ধনিয়াখালী ব্লকে ধনিয়াখালী ইউনিয়ন ও সোমসপুর ইউনিয়নের নামে দুটি সমবায় আছে । তাতে প্রায় 350 জন তাঁতী রয়েছে । আগে এখানে দ্বিগুণ তাঁত শিল্পী ছিল । কিন্ত মজুরির অভাবে তা ক্রমশ কমেই যাচ্ছে । এই পেশায় আর কেউ আসছেন না । বয়সজনিত কারণে অনেকেই তাঁত চালানো ছেড়ে দিয়েছেন । একটা শাড়ি বুনতে গেলে তিন দিন সময় লাগে । 4 জন তাঁতী ও শ্রমিক লাগে । একটা শাড়ি পিছু মজুরি পায় 300 টাকা থেকে 400 টাকা । তাতে সংসার চলে না । তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ধনিয়াখালী তাঁতকে জিআই (Geographical Indication) স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও ধনিয়াখালীর 17 জন তাঁতিকে জিআই (Geographical Indication) সার্টিফিকেট দিয়েছে । রাজ্য সরকার তাঁত শিল্পের জন্য নানাভাবে সাহায্য করছে । কিন্তু তাঁতিদের দাবি, এই শিল্পের জন্য এক যোগে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারকে সাহায্য না করলে ধনিয়াখালী তাঁত নষ্ট হয়ে যাবে ।
আরও পড়ুন:কাজ নেই , স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তাঁত শ্রমিকের দিন কাটছে গাছতলায়
ধনিয়াখালীর এক তাঁতি তরুণ কুমার পাল বলেন, "তাঁতের ডিজাইনের পরিবর্তন তো অবশ্যই করতে হবে । উন্নত ধরনের তাঁত আমাদের এখানে নেই । আর সেটা চালাতে গেলে যে প্রশিক্ষণ দরকার সেটাও নেই । সেই সঙ্গে আর্থিক অবস্থাও ভালো নয় তাঁতিদের । তাঁতের শাড়ির পর্যাপ্ত মজুরিরও ব্যবস্থা করতে হবে ৷ পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম । সেই কারণেই তাঁতীরা অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে । আমি আধুনিক তাঁতের মেশিন বসিয়েছি । কিন্তু মেশিন খারাপ হয়ে গেলে সারাবার লোকও নেই এখানে । আমরা চাইছি এই ধনিয়াখালী তাঁতের উন্নতি হোক । কিন্তু এখানে কোনও পরিকাঠামোই নেই ৷"