চন্দননগর, 12 মার্চ : বার্ধক্য ভাতার সার্টিফিকেট পেয়েছেন এক মাস আগে । কিন্তু এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি । ফল হয়নি দিদিকে বলো-তে জানিয়েও । অথচ সার্টিফিকেটে লেখা আছে এক মাস পরই টাকা পাবেন উপভোক্তা । এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন চন্দননগরের বাসিন্দা গৌরচন্দ্র পাল । একাধিকবার ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে । আর্থিক অবস্থাও ভালো না । কিন্তু এই পরিস্থিতি তাঁকে ভালো দিন দেখাতে পারেনি ।
পেশায় মৃৎ শিল্পী ছিলেন গৌরচন্দ্র পাল । বছর দেড়েক আগে মূর্তি তৈরির কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন । তারপর হাসপাতাল । বাড়ি ফেরার পর আর কিছু করতে পারেন না তিনি । স্ত্রী কানন পাল কাগজের ঠোঙা তৈরি করে কোনও মতে সংসার চালান । তার উপর দিনে দিনে বাড়ছে দু'জনের চিকিৎসার খরচ । দু'জন মিলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন । সরকারি দপ্তরে বার বার গিয়ে কোনও সুরাহা মেলেনি ।
পাশের ঘরেই থাকে ছেলে, গৌতম পাল । কিন্তু বাবা-মার খোঁজ নেন না তিনি । কোনও উপায় না পেয়ে বৃদ্ধ দম্পতি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন । 'দিদিকে বলো'-তে জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি । এইভাবে চলতে থাকলে আত্মহত্যা ছাড়া গতি নেই বলে জানাচ্ছেন কাননদেবী । এই বিষয়ে চন্দননগর মহকুমা অফিসের সোশাল ওয়েলফেয়ার দপ্তরে জানতে গেলে বলা হয় কিছু মানুষ বার্ধক্য ভাতা পেলেও এখনও অনেকে পাননি । আমরা প্রয়োজনীয় নথি জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি ।
সার্টিফিকেট থেকেও বার্ধক্য ভাতা পাননি গৌরচন্দ্র পাল কিছুদিন আগেই চন্দননগর ডুপ্লেক্স পট্টিতে বার্ধক্য ভাতায় সংসার চালাতে না পারায় আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন বৃদ্ধ দম্পতি । মৃত্যু হয় বৃদ্ধার । সন্ধ্যা রায়ের স্বামী মানস রায় চিকিৎসাধীন । তাঁদেরও কেউ খেয়াল রাখার ছিল না । বার্ধক্যজনিত কারণে যেভাবে একের পর এক এই সকল বৃদ্ধ দম্পতির ঘটনা সামনে আসছে, তা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চন্দননগরবাসীর কাছে ।
2 ফ্রেব্রুরারি চন্দননগরে বার্ধক্য ভাতার সার্টিফিকেট দেওয়া হয় গৌরচন্দ্রবাবুকে । চন্দননগর বিধায়ক তথা মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন সেদিন বলেন, সার্টিফিকেট দেওয়া পর টাকা পাওয়া যাবে । কিন্তু প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোনও প্রতিকার হয়নি । এক কামরা ঘরে দম্পতি সংসার করেন । রেশনের চাল আটা দিয়ে কোনও মতে দিন চলে । জমানো টাকা চিকৎসার খাতেই শেষ হয়েছে । বার্ধক্য ভাতা পেলে কিছু উপকার হতেও পারত বলে মনে করছেন বৃদ্ধ দম্পতি ।
গৌতম পাল বলেন, "আমি একার রোজগারে আমার ছেলে মেয়ে নিয়েই সংসার চালাতে পারছি না । আমি বা কোথা থেকে টাকা পাব ।" গৌরচন্দ্রবাবুর স্ত্রী কানন পাল বলেন, "আমার স্বামীর ব্রেন স্ট্রোক হওয়ায় কোনও কাজ করতে পারেন না । কাগজের ঠোঙা করে কোনওরকমে সংসার চালাচ্ছি । রেশন থেকে দেড় কিলো চাল এবং দেড় কেজি গম পাই । তাতে সারা মাস চলে না । বার্ধক্য ভাতা এক মাস হয়ে গেলেও এখনও আমরা হাতে টাকা পায়নি । SDO অফিস বলছে কোনও কারণে টাকা আটকে আছে । অনেকে টাকা আসলেও আমরা এখনও টাকা পাইনি । আশায় আছি । সাড়ে সাতশো টাকা পেলে কিছুটা সুরাহা হবে । আর না চললে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই । SDO অফিসেও জানিয়েছিলাম । ছেলেকে নির্দেশ দিয়েছিল 500 থেকে 700 টাকা প্রতি মাসে আমাদের দিতে পবে । কিন্তু এক পয়সাও দেয়নি ছেলে । ঘরের পাশে পলিথিনে চালাটাও ভেঙে পড়ে যাচ্ছে । বাঁচার কোনও পথ নেই আমাদের । একবছর আগে দিদিকে বলোতে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি ।"
গৌরচন্দ্র পাল বলেন, ঠাকুরের কাজ করতাম । আমার পাঁচবার ব্রেন স্ট্রোক হয় তারপরে হাত পর্যন্ত তুলতে পারি না । কোনও কাজ তো দূরের কথা । এক মাস দশ দিন হয়ে গেলেও এখনও বার্ধক্য ভাতার টাকা আসেনি ।