বেগমপুর, 25 অগাস্ট : রাজ্যের তাঁত শিল্পের অন্যতম ঠিকানা হুগলির বেগমপুর ৷ পাওয়ারলুম হোক বা হ্যান্ডলুম, বছরভর তাঁত বোনার শব্দে মুখরিত থাকত বেগমপুর ৷ কোরোনা আর লকডাউন গ্রাস করেছে সেই বেগমপুরকে ৷ সমবায় থেকে ক্লাস্টার, সবখানে সংকট চরমে ৷ ব্যবসা তলানিতে ৷ তাঁতশিল্পীর ঘরে যেমন, তেমনই মহাজনের ঘরেও মাল মজুত ৷ নতুন অর্ডার নেই ৷
তাঁতশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ মাসে থমকে গিয়েছে কাজ । দেখা দিয়েছে উভয় সংকট ৷ একদিকে যেমন এই শিল্পের কাঁচামাল- সুতো, রং পাওয়া যাচ্ছে না লকডাউনে, তেমনই মঙ্গলহাটের মতো ব্যবসাস্থল বন্ধ ৷ সমবায় ও ক্লাস্টারেও অতি সামান্য কাজ হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, মহাজনী প্রথায় যে শিল্পীরা কাজ করতেন তাঁদের হাতেও কাজ নেই, যেহেতু নতুন অর্ডার দিচ্ছেন না মহাজন। কারণ বিক্রি না হওয়া শাড়ি মজুত হয়ে পড়ে আছে মহাজনের ঘরে ৷ এই অবস্থায় অর্ধেকেরও বেশি তাঁতঘর বন্ধ।
বেগমপুরে তাঁতের কাজ হয় মোটামুটি তিনভাবে ৷ এক) সমবায়ের অধীনে তাঁত বোনেন শিল্পীরা৷ দুই) হ্যান্ডলুমে ক্লাস্টার গড়ে তাঁত বোনা হয়৷ এবং তিন) পাওয়ারলুমে বুনে মহাজনের মাধ্যমে চলে ব্যবসা ৷ এখানে তাঁত সমবায়ে যুক্ত 400 তাঁতি ৷ 2010 সালে গড়ে ওঠে বেগমপুর হ্যান্ডলুম ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ৷ ঐতিহ্য আর যুগের চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাই ছিল ক্লাস্টারের কাজ ৷ তাতেই সাফল্য ৷ একদিকে সরকারি সংস্থা বিশ্ববাংলা এখানকার কাজ কিনত ৷ অন্যদিকে বেসরকারিভাবেও ভালো বিক্রি ছিল। কিন্তু সে সবই এখন অতীত ৷ কয়েক হাজার মানুষ কর্মহীন ৷ সমবায়ের অধীনের শিল্পীদের সপ্তাহে 2 টির বেশি শাড়ি বোনার মতো পরিস্থিতি নেই। তাঁতিদের কথায়, লকডাউনে কয়েক হাজার শাড়ি মজুত পড়ে আছে। ফলে, নতুন করে শাড়ি উৎপাদনের ঝুঁকি নিচ্ছেন না৷ একই অবস্থা পাওয়ারলুমের। যা মহাজনী ব্যবসা ৷ চাহিদা নেই বলে এখানেও উৎপাদন থমকে ৷ অথচ কয়েক হাজার শিল্পী পাওয়ারলুমের সঙ্গে জড়িত। তাঁরাও বেকার।
হ্যান্ডলুম তাঁতি অশোক দত্ত বলেন, "যাঁরা পুরানো তাঁতি তাঁরাই এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ তাঁদের পক্ষে পেশা বদল করা সম্ভব না ৷ একটা শাড়ি তৈরি করলে 160 টাকা মজুরি মেলে ৷ শাড়ি তৈরি না হলে মজুরি পাব কী করে !"