শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শনিবার ইডি'র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কুন্তল ঘোষ বলাগড়, 21 জানুয়ারি: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শনিবার ইডি'র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতা কুন্তল ঘোষ ৷ তাঁর গ্রেফতারি ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি ৷ মাত্র পাঁচ বছরের রাজনৈতিক জীবন, আর তার মধ্যেই নিয়োগ দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগে কুন্তলের গ্রেফতারি নিয়ে কী বলছে বলাগড়ের তাঁর গ্রামের মানুষ? জেলার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতারাও বা কী বলছেন?
মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে যেভাবে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতিতে এই যুব তৃণমূল নেতার নাম জড়িয়েছে তাতে সকলেই স্তম্ভিত। বলাগরের ধাওয়াপাড়ায় এতদিন ভালো ছেলে বলেই পরিচিত ছিলেন কুন্তল ৷ তবে এই ঘটনার পর অনেকই মুখ ফিরিয়েছেন । বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের দাবি, যেভাবে শাসকদলের একাধিক নেতার নাম নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, তাতে এই ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয় (Kuntal Ghosh arrested in teacher recruitment scam) ।
কুন্তলের বাবার ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান । তাঁর ছেলে তৃণমূলের যুবনেতা । প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বলাগড়ের ভবানীপুর চর প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা কুন্তল ঘোষের । তারপর অন্য স্কুলে ভরতি করা হয় তাঁকে ৷ কয়েক বছর আগে পিতৃবিয়োগ হয় তাঁর । কুন্তলদের বলাগড়ে নিজের বাড়িতেই কড়াইয়ের কারখানা ছিল তাঁর বাবার । মা ছিলেন গৃহবধূ । 2011 সালে ধনেখালিতে পার্টনারশিপে একটি বিএড কলেজ খোলেন তিনি ৷ সে সময় থেকে সক্রিয় ভাবে রাজনীতি না করলেও 2016 সালের দিক থেকে বলাগড় বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেত তাঁকে (TMC youth leader Kuntal Ghosh)।
আরও পড়ুন:তাপস মণ্ডলকে ঘুষ দেননি ! তাই ইডির হাতে গ্রেফতার, দাবি কুন্তলের
এছাড়াও বলাগড়ে জিরাট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাটুলি গ্রামে লিটিল অ্যাঞ্জেল অ্যাকাডেমি নামে ছোটদের একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলও আছে তাঁর । সরস্বতী ভবন নামে ওই স্কুল বিল্ডিংটি তিন বছর আগের স্থানীয় বাসিন্দা সাধনচন্দ্র দাসের থেকে 35 লক্ষ টাকায় কেনেন কুন্তল । এছাড়াও একাধিক জায়গায় তাঁর নামে জমি আছে । ইডি আধিকারিকরা সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখার পরই তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেন ৷ কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, কয়েকশো মানুষের থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে কয়েক কোটি টাকা তুলেছেন বলাগরের এই যুব নেতা ।
তাঁর গ্রেফতারির খবরে সকাল থেকেই তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় জমান এলাকাবাসী । যদিও বর্তমানে তাঁর গ্রামের বাড়ি তালাবন্ধ । তিনি বেশিরভাগ দিন কলকাতার ফ্ল্যাটেই থাকতেন বলে জানান এলাকার বাসিন্দারা । বর্তমানে এখানে তাঁর বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন একজন কেয়ারটেকার । পাশাপাশি, তাঁর পোষ্য তিন কুকুরকে দেখভালের জন্য রাখা ছিল আরও একজন লোককে ৷ কুন্তলের বলাগড়ের বাড়িতে কার্তিক এবং শিব ঠাকুরের নিত্যপুজোর জন্য একজন ব্রাহ্মণ প্রতিদিন আসতেন বলে জানা গিয়েছে ।
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এবার ইডির হাতে গ্রেফতার তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ
স্থানীয়রা জানিয়েছেন সম্প্রতি বলাগড়ের বাড়িতে আসা কমে গিয়েছিল কুন্তলের ৷ রাজারহাটের ফ্ল্যাটেই থাকতেন তিনি ৷ তবে তাঁর বলাগড়ের বাড়িতে পোষা কুকুর ও পাখিদের দেখাশোনার জন্য দীপক বিশ্বাস নামে একজন কেয়ারটেকারকে রাখা হয়েছে । এই বিষয়ে ওই কেয়ারটেকার জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন একবার করে আসতেন বাড়ি পরিষ্কার করতে । কুন্তল মাঝে মাঝে তাঁর পরিবার নিয়ে আসত এখানে । পরিবার নিয়ে এলে তখন তিনি সারাদিন এই বাড়িতেই থাকতেন । এর জন্য কুন্তল তাঁকে মাসিক দশ হাজার টাকা মাইনে দিতেন । আর যে দু'জন এই বাড়িতে কাজ করতেন তাঁদেরকেও মাস মাইনে দিতেন কুন্তল ।
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অতনু ঘোষ বলেন,"আমরা লড়াই করছি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আর এখন তৃণমূল আর দুর্নীতি সমর্থক । তৃণমূল কংগ্রেস মানেই দুর্নীতি । আমাদের লড়াই শুধু কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে যে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার চলছে, তার বিরুদ্ধে । এই দুর্নীতিগ্রস্তদের ধরে জেলে ভরো, এটাই আমাদের লড়াই । একটা সময় এই পরিবারটা আমাদের সমর্থক ছিল, তখন কুন্তল ঘোষ অনেক ছোট। ওর বাবা স্বপন ঘোষ শ্রদ্ধেয় মানুষ ছিলেন । আর তাঁর ছেলের কাছে রাজনীতি করা মানে অর্থ রোজগার করা ।" অন্যদিকে, বিজেপি'র জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেন, "এরা যে অপরাধ করেছে তার জন্য গ্রেফতার হওয়া দরকার ছিল । পুলিশ এদের পাহাড়া দিচ্ছে । সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করছে । এটা ঠিক নয় । একে একে আরও সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে ।"