শিলিগুড়ি, 3 জুলাই : শিলিগুড়িতে ক্রমেই বাড়ছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । বাড়ছে মৃত্যুও । কিন্তু তার মধ্যেও শিল্পীদের আর্থিক বিষয়টির কথা মাথায় রেখে মাটিগাড়ায় বসছে বিশ্ববাংলা হাট । নানান হস্তশিল্পের কাজ নিয়ে পসরা সাজিয়েছেন শিল্পীরা । কিন্তু কোথায় বিক্রেতা ? শিলিগুড়ি শহরেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে 400 । মানুষ ঘরবন্দী । আনলকের দ্বিতীয় পর্বেও প্রয়োজন ছাড়া সেভাবে বাইরে বের হচ্ছে না কেউ । রাস্তায় যানবাহনও হাতে গোনা । এই পরিস্থিতিতে বিক্রি নেই হাটে । জিনিস বানালেও কিনছে না কেউ । কারও কারও দিনে বউনিটুকু হচ্ছে না । কোনওমতে সঞ্চয় থেকে চলছে সংসার । এমন চলতে থাকলে তা আর সম্ভব হবে না বলেই জানাচ্ছেন শিল্পীরা । ফলে ক্রেতাদের অপেক্ষায়ই রয়েছেন তাঁরা ।
মার্চের শেষের দিকে প্রথম কোরোনা আক্রান্তের হদিস মেলে উত্তরবঙ্গে । শুরু হয় লকডাউন । জেলায় লকডাউন চললেও খোলাই ছিল মাটিগাড়ার কাওয়াখালির বিশ্ব বাংলা হাট । কেনাকাটা বন্ধ থাকলেও মাসে নিয়ম করেই হাট বসেছে । সে সময় একেবারেই বিক্রি হয়নি । পরে ধীরে ধীরে আনলক শুরু হতে আশায় বুক বাঁধেন শিল্পীরা । আনলক হলে অন্তত একটু হলেও বিক্রি হবে । তাই রাস্তায় গাড়ি সেভাবে না চললেও হাতে গোনা ক'জন চলে আসেন হাটে । স্বাস্থ্যবিধি মেনে থার্মাল স্ক্রিনিং-সহ যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয় হাটে । কিন্তু তাতেও পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতা । এদিকে আনলকের শুরু থেকেই শিলিগুড়িতে বাড়ছে সংক্রমণ । যার জেরে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন শিল্পীরা ।
ক্রেতার অপেক্ষায় শিল্পীরা প্রতিমাসেই একটি করে হাটের আয়োজন করে বিশ্ববাংলা হাট কর্তৃপক্ষ । স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববাংলা হাটে বসানো হয় দোকানপাট । এছাড়া বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আয়োজন করা হয় মেলার । চলতি আর্থিক বছরে মে মাসে একটি হাটের আয়োজন করা হয় । একমাস ধরে চলার পর জুন মাসে ফের শুরু হয়েছে হাট । কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বছরের অন্য সময় এই হাটগুলিতে গড়ে 25 থেকে 40 জন শিল্পী অংশ নেন । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এবার হাটে অংশ নিয়েছেন মাত্র সাতজন শিল্পী । সুতোর কাজ করা বিভিন্ন কাপড়, ব্যাগ, মাস্ক ইত্যাদি নিয়ে প্রতিদিন হাটে আসছেন তাঁরা । কিন্তু ওই ক্রেতার দেখাই মিলছে না । শিল্পীদের অনেকেই জানিয়েছেন, এমনও দিন যাচ্ছে যেদিন সামান্য বউনিটুকুও হচ্ছে না । কোনও কোনও দিন ইতিউতি কিছু ক্রেতা আসছেন । সামান্য কিছু সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে । কিন্তু তাতে যাতায়াতের খরচ বা বাকি দিনের খরচ চলছে না । এদিকে, সরকারি থেকে পাওয়া দৈনিক 75 টাকা ভাতা দিয়েও সংসার চলছে না । ফলে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের ।
হাটে উপস্থিত এক হস্তশিল্পী বলেন, সারা বছর ধরে আমরা নানা হস্তশিল্প সামগ্রী তৈরি করি । তা বিশ্ববাংলা হাটের স্টলের মাধ্যমে বিক্রি করি । এবার উৎপাদিত সামগ্রীর বিক্রি সম্পূর্ণ তলানিতে । আয় বলতে হাটে অংশ নেওয়ায় রাজ্য সরকারের তরফে বরাদ্দ দৈনিক 75 টাকা উৎসাহ ভাতা । শিল্পীদের অভিযোগ, হাটে আসার জন্য পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাব রয়েছে । তাই সামগ্রী নিয়ে হাটে আসতেও তাঁরা যেমন বিপাকে পড়ছেন তেমনই সম্ভাব্য ক্রেতাদের হাটে আসতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে । সেই কারণে ক্রেতাও মিলছে না ।
কোরোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সেদিকে তাকিয়ে বিশ্ববাংলা হাটের শিল্পীরা হাটের উদ্যোক্তাদের তরফে এক কর্তা জানিয়েছেন, অন্য সময় এই হাটগুলিকে কেন্দ্র করে আশপাশের বিভিন্ন শহর এলাকায় প্রচার চালানো হত । কিন্তু এবার লকডাউন পরিস্থিতির কারণে সেই প্রচার চালানো সম্ভব হয়নি । ফলে বিশ্ব বাংলা হাট খোলা থাকলেও তা জানেন না বহু মানুষ । তাই লোকমুখে শুনে ইতিউতি কিছু ক্রেতা আসছেন ঠিকই, কিন্তু তা অতি সামান্য । ওই কর্তাই জানিয়েছেন, একেকটি হাট থেকে গড়ে অন্য সময় লক্ষাধিক টাকা আয় করতেন হস্ত শিল্পীরা । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে । তিনি আরও জানান, এই পরিস্থিতিতে শিল্পীদের কিছুটা সমস্যা লাঘব করতে বরাদ্দ উৎসাহ ভাতা যাতে শিল্পীদের দ্রুত প্রদান করা যায় তা নিয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে ।