শিলিগুড়ি, 26 অগাস্ট : ঘোষণা হয়েছিল 2009 সালের 30 অক্টোবর । শিলান্যাসও করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বছর চারেক আগে মিলেছিল সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্র । অবশেষে পাথর কাটা শুরু হল সেবক-সিকিমের রংপো রেলপথের । ভূমিকম্প প্রবণ, বৃষ্টি বহুল এই এলাকায় অবশেষে শুরু হল কাজ । মানে 11 বছর পর । লক্ষ্য 2023-এর ডিসেম্বরের মধ্যে ‘প্রথম পর্যায়’ -এর কাজ শেষ করা । প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে নতুন সমস্যা কোরোনা । যায় জেরে, শ্রমিক-সমস্যা তৈরি হচ্ছে ।
‘প্রথম পর্যায়’ মানে ?
আসলে সব কিছু ঠিক-ঠাক চললে, সেবক থেকে ট্রেনে চেপে পৌঁছে যাওয়া যাবে সরাসরি নাথুলা পর্যন্ত । যার প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়েছে । দ্বিতীয় ধাপ রংপো থেকে গ্যাংটক । তৃতীয় ধাপটি হল গ্যাংটক থেকে নাথুলা ।
নাথুলার ওপারে সড়ক ও রেল পরিবহণের ব্যবস্থা করে ফেলেছে চিন । নিশ্বাস ফেলছে ভারতের ঘাড়ে । ঠিক তখনই সেবক-নাথুলা রেল যোগাযোগ শুধু বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে তাই নয়, দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে । সিকিমের জন্য পণ্য পরিবহণেও বড় ধরনের বদল হবে । এখন শুধু সড়ক পথে সিকিমের সঙ্গে বাকি দেশের যোগাযোগ রয়েছে ।
অন্য ক্ষেত্রে টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহার করা হলেও এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান ট্যানেল বোরিং পদ্ধতি ব্য়বহার করা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে রেলপথ তৈরির দায়িত্বে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল । প্রায় 45 কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথটি তৈরি করতে বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা । এই প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই থাকছে প্রায় 41 কিলোমিটার পথ । সেখানে অভয়ারণ্য এবং হাতির করিডরও রয়েছে ।
সমতল নয় । এই রেলের যাত্রাপথ মূলত আঁকাবাঁকা গুহাপথ-পাথুরে-ভূমিকম্প প্রবণ । তাই এখানে TBM নয় । কাজ করা হচ্ছে তাই নিউ অস্ট্রেলিয়ান ট্যানেল বোরিং (NATM) পদ্ধতিতে । জন্মু-কাশ্মীরে টানেলের মধ্য দিয়ে রেলপথ বা সুইজ়ারল্যান্ডের মতো বরফাচ্ছন্ন এলাকা বা গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রোর রেলপথ নির্মানে সাহায্য নেওয়া হয়েছে এই NATM পদ্ধতির । রেলের দাবি, ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হলেও এখানে পাথর বেশ মজবুত । তাই এই পদ্ধতির সহজেই কাজ করা সম্ভব হবে । রেলের তরফে ইরকনের জেনেরাল ম্যানেজার টি ডি ভুটিয়ার দাবি, জমি-জট ইত্যাদি কাটিয়ে ট্যানেল তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে । ইতিমধ্যেই কয়েকটি ট্যানেল তৈরির কাজ অন্তত কয়েকশো মিটার হয়ে গিয়েছে ।
দেখুন নিউ অস্ট্রেলিয়ান ট্যানেল বোরিং পদ্ধতিতে কীভাবে হচ্ছে টানেলের কাজ যদিও এখন জমি নয় । লকডাউন পরিস্থিতিতে দক্ষ শ্রমিকের অভাবই রেলের মাথা ব্যথার মূল কারণ । সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খারাপ আবহাওয়া-নাগাড়ে বৃষ্টি । রেলের দাবি, এই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ড্রিলিং করে, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাহাড় কেটে এগোতে হয় । এ কাজে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক দরকার । সিকিমে বিভিন্ন জলবিদ্যুত প্রকল্পে কিছু গুহাপথ নির্মাণ হয়েছে আগেই। সে-কাজে যুক্ত ছিলেন এমন কিছু দক্ষ শ্রমিককে এখানে লাগানো হয়েছে ।
ভিন রাজ্য-দেশ থেকেও শ্রমিক আনার পরিকল্পনা আছে । কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির জেরে সব কিছুতেই সমস্যা । পর্যাপ্ত দক্ষ শ্রমিক মিলছে না । ফলে বাধ্য হয়েই কমাতে হচ্ছে কাজের গতি । আর যার জেরে বাড়ছে খরচ বাড়ার আশঙ্কা ।
এইভাবেই চলছে টানেল তৈরির কাজ 11 বছর পর শুরু হলেও আশঙ্কা যেন থেকেই গেল !