উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া সদ্যোজাতকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিল পুলিশ দার্জিলিং, 23 এপ্রিল: 72 ঘণ্টার মধ্যে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া নবজাতককে উদ্ধার করল পুলিশ । সূত্র মারফত খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ভিন জেলা থেকে চুরি যাওয়া নবজাতককে উদ্ধার করে পুলিশ । ঘটনায় এক মহিলা-সহ তিনজন গ্রেফতার হয়েছে । ধৃতদের রবিবার শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর । নবজাতক উদ্ধার হতেই স্বস্তি ফিরেছে পুলিশ মহল ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ।
নবজাতককে উদ্ধারের জন্য শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ, গোয়েন্দা বিভাগ, মাটিগাড়া থানার পুলিশ ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আধিকারিকদের নিয়ে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছিল । শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া উত্তর দিনাজপুর জেলার চুটিয়াখোর গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুর এলাকা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে ওই বিশেষ টিম । এই ঘটনায় ধৃতরা হল, অঞ্জু দাস, প্রদীপ দাস ও রাহুল দাস । সম্পর্কে ওই তিনজন ভাইবোন । যদিও ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিখা দাস নামে ওই মহিলা এখনও পলাতক বলে জানা গিয়েছে । ওই মহিলা তিন ধৃতের মা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে । তার উদ্দেশ্যে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহের বুধবার শিলিগুড়ি মহকুমার খড়িবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্মগ্রহণ করে মা রঞ্জিতা সিংহ এবং বাবা নিত্যানন্দ সিংহ এক সন্তান । বুধবার সদ্যোজাতের জন্মের পর মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ বৃহস্পতিবার সেখান থেকেই সদ্যোজাত চুরি যায় । এরপর ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় উত্তাল হয়ে উঠে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল । পরিবারের পাশে দাঁড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখে তারা । একের পর এক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল হাসপাতালের নিরাপত্তা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ।
হাসপাতালের সিসিটিভিতে শিশু চুরির ঘটনা ক্যামেরাবন্দি হয় । দেখা যায় ওয়ার্ড থেকে এক মহিলা শিশুটিকে নিয়ে বের হচ্ছে । মাত্র কয়েক সেকেন্ডের এই ভিডিয়োর উপর ভিত্তি করেই তদন্তে নামে পুলিশ । পরবর্তীতে ডাকা হয়েছিল স্কেচ আর্টিস্টকেও ।
আরও পড়ুন :উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রসূতি বিভাগ থেকে নবজাতক চুরির অভিযোগ
তবে ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে অন্য কাহিনি । সূত্রের খবর অনুযায়ী, শিখা দাসের মেয়ে অঞ্জু দাস সন্তানহীন । অঞ্জুকে বেশ কয়েক বছর আগে বিহারের গলগলিয়ায় বিয়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু সন্তানহীনতায় ভুগছিল অঞ্জু । আইভিএফের মাধ্যমেও সন্তান ধারণের চেষ্টা করলেও 6 মাসেই তাঁর গর্ভপাত হয় । এই নিয়ে অঞ্জুর পরিবারে চলছিল ব্যাপক অশান্তি । মেয়েকে সেই অশান্তির হাত থেকে মুক্তি দিতে বাচ্চা চুরির পরিকল্পনা করে মা শিখা দাস ৷
উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় বাপের বাড়ি অঞ্জুর । বেশ কয়েকদিন আগে মা ও মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয় । গ্রামবাসীদের জানানো হয় অঞ্জু সন্তানসম্ভবা । প্রসবের কারণেই তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে । সেই মেডিক্যাল থেকেই সুযোগ বুঝে নবজাতককে চুরি করা হয় । তারপর সোজা নিজের বাড়িতে ফিরে যায় তাঁরা । কিন্তু বিগত দু'দিন ধরে শিশু চুরিকে কেন্দ্র করে যে শোরগোল শুরু হয় তাতে ভয়ে অঞ্জু শুক্রবার লুকিয়ে হাসপাতালে আসে শিশুটিকে ফেরত দিতে । কিন্তু পরিস্থিতি দেখে তার আর সাহসে কুলোয় না । ফের ফেরত চলে যায় সে ।
অবশেষে শনিবার পুলিশ নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে । তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তুলে দেওয়া হয় মায়ের কোলে । গোটা মেডিক্যাল কলেজে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয় । রাতেই আবির খেলে বিজেপি যুব মোর্চার কর্মীরা । সদ্যোজাতের মা রঞ্জিতা সিংহ বলেন, "সকলকে অশেষ ধন্যবাদ আমার বাচ্চাকে খুঁজে দেওয়ার জন্য ৷ আমার আর বলার ভাষা নেই ।" বলতে বলতে বাচ্চাকে জড়িয়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন রঞ্জিতা ৷ অন্যদিকে সদ্যোজাতের বাবা নিত্যানন্দ সিংহ বলেন, "আজ সারাজীবনের জন্য সকলের কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম ।"
এই বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "এটা একটা বড় সাফল্য । পুলিশ প্রশাসন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলে চিন্তার মধ্যে ছিলাম । দু'দিনের এত কষ্ট আজ সার্থক হল । তবে যে কারণে এই ঘটনা, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে ।"
আরও পড়ুন :সদ্যোজাত চুরির অভিযোগে রাতভর বিক্ষোভ; হাসপাতালেই আটকে সুপার