পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

পাহাড়ের উন্নয়নে কল্পতরু মমতা, 271 কোটির 59 প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর - মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Mamata Banerjee on Hills Development: শুক্রবার কার্শিয়াংয়ের মন্টেভিট স্কুল ময়দানে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই সভা থেকে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেন তিনি ৷ জিটিএ-র ক্ষমতা বৃদ্ধিরও ঘোষণা করেন ৷

Mamata Banerjee
Mamata Banerjee

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 8, 2023, 5:04 PM IST

Updated : Dec 8, 2023, 6:15 PM IST

পাহাড়ের উন্নয়নে কল্পতরু মমতা, 271 কোটির 59 প্রকল্প ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

দার্জিলিং, 8 ডিসেম্বর: দার্জিলিং-সহ পাহাড়ের জন্য কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুক্রবার কার্শিয়াংয়ে আয়োজিত এক প্রশাসনিক সভা থেকে তিনি পাহাড়বাসীর জন্য একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন ৷ পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন যে পাহাড়কে তিনি বরাবর শান্ত দেখতে চান ৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পাহাড়ের জন্য আমি আমার প্রাণ দিতে পারি । পাহাড়বাসী সুখে শান্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে থাক আমি শুধু তাই চাই । পাহাড়ের যা উন্নয়ন করার আমি করব । অনেকে এসে বড় বড় কথা বলে । আর পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ নষ্ট করে । তারা কিছু করে না ।"

প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার কার্শিয়াংয়ে৷

এ দিন কার্শিয়াংয়ের মন্টেভিট স্কুল ময়দানে সরকারি মঞ্চ থেকে পাহাড় ও পাহাড়বাসীর জন্য শতাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি । পাশাপাশি জিটিএ'র ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে পাহাড়বাসী ।

প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার কার্শিয়াংয়ে৷

সরকারি সভার মঞ্চ থেকে সেভাবে বিরোধীদের কোনও আক্রমণ করেননি তিনি । বরং পাহাড় ও পাহাড়বাসীর মন জয় করতে উন্নয়নকেই হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ভরসা রাখতে বললেন জিটিএ চিফ এগজিকিউটিভ অনিত থাপা, শান্তা ছেত্রী, কালিম্পংয়ের বিধায়ক রুদেন সাদা লেপচা ও তাঁদের টিমের উপর ।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, "আমি চাই পাহাড় হাসুক । শান্তিতে থাকুক । আমার দ্বারা যা সম্ভব সব করব । খালি আপনারা সবাই শান্তি ও খুশিতে থাকবেন । পাহাড়ের যুবক যুবতীরা উন্নতি করুক । পাহাড়ে শিক্ষার উন্নতি হোক । এই চাই । দিল্লি কোনও কাজ করে না । আমি করি । আমি করে দেখাই ।"

প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার কার্শিয়াংয়ে৷

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং ম্যালে মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচন করেন । দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলা মিলিয়ে 271 কোটি টাকার 59টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন । যার মধ্যে দার্জিলিং জেলায় 180 কোটি টাকার 24টি ও কালিম্পং জেলায় 90 কোটি টাকার 35টি প্রকল্প রয়েছে । প্রায় 33 হাজার পাহাড়বাসী রাজ্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পেয়েছে ।

প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার কার্শিয়াংয়ে৷

এছাড়াও সম্প্রতি তিস্তার হড়পা বানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত 550টি পরিবারকে 70 হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । এ দিনের মঞ্চ থেকে দার্জিলিং জেলায় 23 হাজার এবং কালিম্পং জেলায় 1200 পরিবারকে পাট্টা প্রদান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পাশাপাশি এঁদের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, চা বাগানে বসবাসকারী শ্রমিকদের বাড়ির জন্য ইতিমধ্যে সার্ভের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার । খুব দ্রুত তাঁদেরকে সেই জমির পাট্টাও প্রদান করা হবে ।

শিল্প ও হাসপাতালে বাণিজ্যের দিক থেকেও এ দিন বড় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । জিটিএ এলাকায় 23টি ক্লাস্টার ও 43টি গ্রামীণ হাট তৈরি করা হয়েছে । কালিম্পং জেলায় 14 একর এবং পাঁচ একর জমিতে দুটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি করা হবে । যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় আইটি সেক্টর তৈরি করবে রাজ্য সরকার ।

এরপরই মুখ্যমন্ত্রী জিটিএ পরিচালনায় আরও সুবিধা করতে এবং জিটিএর ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয় ঘোষণা করেন । মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড়ে উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার জিটিএকে আরও 75 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । জিটিএতে কর্মরত কর্মীদের জন্য মৃত্যু ও পেনশন স্কিম চালু করার কথা ঘোষণা করেন । তাতে জিটিএ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা 20 লক্ষ টাকা গ্রাচুরিটি ও এনক্যাশমেন্ট বেনিফিট পাবেন ।

2011 সালে দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের সময় থেকে নিয়োগ হওয়া কর্মীদের 2009-এর পরিবর্তে 2019 সালের পে রোলের আওতায় নিয়ে আসার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী । শিক্ষার উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জিটিএ এলাকার জন্য রিজিওনাল স্কুল সার্ভিস কমিশন চালু করার কথা ঘোষণা করেন । 2003 সাল থেকে ওই কমিশনটি বন্ধ ছিল । এই কমিশনটি পুনরায় চালু হলে জিটিএ এলাকার 146টি আপার প্রাইমারি ও উচ্চ বিদ্যালয়ের 590 জন শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হবে ।

এছাড়াও দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় জেলা স্কুল বোর্ড তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । একটি অ্যাড হক কমিটির মাধ্যমে ওই স্কুল বোর্ড তৈরি করা হবে । ওই কমিটি তৈরি হলে জিটিএ এলাকায় নতুন করে এক হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা যাবে । এছাড়াও দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় তিন লক্ষ চা শ্রমিককে চা সুন্দরী প্রকল্পের আওতায় পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।

পাশাপাশি দার্জিলিং জেলায় 3 লক্ষ 32 হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে । তার মধ্যে 83 হাজার বাড়িতে ইতিমধ্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । একইভাবে কালিম্পং জেলায় 65 হাজার বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে । তার মধ্যে 22 হাজার বাড়িতে ইতিমধ্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । বাকি বাড়িতেও 2024 সালের মধ্যে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।

সরকারি ও সামাজিক প্রকল্পের সুবিধার জন্য 15 ডিসেম্বর থেকে 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত দুয়ারে সরকার ক্যাম্প বসার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী । সিনকোনাতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরি করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী ।

আরও পড়ুন:

  1. পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের রক্তের সম্পর্ক তৈরি হল, ভাইপো আবেশের বিয়ে নিয়ে মন্তব্য মমতার
  2. উত্তরবঙ্গে 24 হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব বণিক সম্মেলনে
  3. পাহাড়ি সাজে মাথায় ঝুড়ি মমতার, শ্রমিকদের সঙ্গে চা-পাতা তুললেন মুখ্যমন্ত্রী
Last Updated : Dec 8, 2023, 6:15 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details