শিলিগুড়ি, 6 অগাস্ট : শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল মধ্য কুড়ির মেয়েটার ৷ ঠিক মতো কথাও বলতে পারছিলেন না ৷ অস্ফুট স্বরে কেবল বলেছিলেন শেষ ইচ্ছেটা ৷ বলেছিলেন, মনের মানুষটা যেন একটি বার তাঁর সিঁথিটা রাঙিয়ে দেন ৷ আর মনের মানুষের সেই কথা রাখতে কসুর করেননি সুব্রত ৷ দশ বছর ধরে তো এই দিনটার অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি ৷
মেয়ের কথা মতো, হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটেই হয়েছিল ব্যবস্থা ৷ সেখানেই মনের মানুষকে সিদুঁর পরিয়ে আপন করে নিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, আটকে রাখতে পারলেন না ৷ মাত্র দু'ঘণ্টার মধ্যে সব বন্ধন ছেদ করে চলে গেলেন বীথি ৷
গল্প-উপন্যাস, সেলুলয়েডের পর্দাকে হার মানানো এ বৃত্তান্ত । ছোটোবেলার পরিচয় খুব সহজেই গাঢ় হয়েছিল ৷ ছোটো থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন ৷ সদ্য যৌবনে পা রাখা দুটো মন নিজেদের মতো করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন ৷ কিন্তু, হঠাৎ একটা খবর দমকা হাওয়ার মতো সব কিছুকে এলোমেলো করে দিল ৷ জানা গেল, মনের মানুষটা জটিল কর্কট রোগে আক্রান্ত ৷
ছোটো মেয়ের এমন অসুখের কথা শুনে প্রথমে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেননি কালিপদ দাস ৷ ভারতীয় রেলের কর্মী কালিপদবাবুর তিন মেয়ে, এক ছেলে ৷ শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের দাস বাড়ির ছোটো মেয়েটাকে দেখে ভালো লেগেছিল উত্তর দিনাজপুরের সুব্রত কুণ্ডুর ৷ সেই ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিণত হতে খুব একটা সময় নেয়নি ৷ যখন যৌবনের দুটি হাত এক সঙ্গে অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, তখনই সামনে আসে বীথির অসুখের কথা ৷ শুরু হয় চিকিৎসা ৷ শুরু হয়েছিল কেমো থেরাপি ৷ যার জেরে মাথায় চুল প্রায় সবটাই উঠে যেতে থাকে ৷ আস্তে আস্তে বুড়িয়ে যেতে থাকেন বীথি ৷ হারিয়ে যেতে থাকে যৌবনের সেই লাবণ্য ৷ তখন 2017 সাল৷ একটি হাতও কেটে বাদ দিতে হয় ৷ ফুটফুটে মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকে সকলের কাছ থেকে ৷ কিন্তু, সে দিনও একটি বারের জন্য মনের মানুষটার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুব্রত ৷ পাশে থেকেছেন, সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ৷ হাতে হাত ধরে বলেছিলেন লড়াই করার কথা৷ চিকিৎসার প্রয়োজনে কখনও মুম্বই, কখনই শিলিগুড়ি যেতে হয়েছিল বীথিকে ৷ কখনই বীথিকে সঙ্গ ছাড়া করেননি সুব্রত ৷ প্রথমে না জানলেও ততদিনে সুব্রতর পরিচয় জানা হয়ে গেছে দাস পরিবারের সকলে ৷ এক দিন মেয়ের মোবাইলে চোখ পড়তেই সব স্পষ্ট হয়েছিল কালিপদ দাসের ৷ বোন ক্যানসারে আক্রান্ত মেয়ের ভবিষ্যৎ জানলেও সাহস পাননি বাধা দেওয়ার ৷